পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন আর নানা অফারের ফাঁদ পেতে গ্রাহক হয়রানি ও অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। টাকার বিনিময়ে কিনেও কাক্সিক্ষত সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহকরা। ভয়েস কল কিংবা ইন্টারনেট কোনটিতেই মানসম্পন্ন সেবা দিতে ব্যর্থ মোবাইল কোম্পানিগুলো। তাদের বাজে নেটওয়ার্কের কারণে মিউট কল (কথা শোনা যায় না) কিংবা কলড্রপের (কথা বলতে বলে কেটে যাওয়া) শিকার হয়ে একই কলের জন্য একাধিকবার টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহককে। অপারেটরগুলোর এমন সেবায় সাধারণ গ্রাহকদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ খোদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সচিব মো. খলিলুর রহমান, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার। গতকাল মঙ্গলবার বিটিআরসিতে অপারেটরদের ডাটা ও ডাটা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্যাকেজের নতুন নির্দেশিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চার মোবাইল অপারেটরের মধ্যে গ্রামীণফোনই সবচেয়ে বাজে সেবা দিচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান। রবি আজিয়াটা ও বাংলালিংকের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এজন্য রাষ্ট্রায়ত্ত¡ মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটককে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।
গ্রামীণফোনের সেবাকে সবচেয়ে বাজে উল্লেখ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, সবচেয়ে বাজে সেবা দিচ্ছে গ্রামীণফোন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার পথে ৬ বার গ্রামীণফোনের সিমে কলড্রপ হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রাহকবান্ধব হওয়ার কথা অপারেটরদের। কারণ তারা ব্যবসা করছে। কিন্তু প্যাকেজ ঠিক করে দিতে হচ্ছে বিটিআরসিকে। বিটিআরসির বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে তার বেশিরভাগই মোবাইল ফোন অপারেটরদের কারণে। তাদের সেবায় গ্রাহকরা অসন্তুষ্ট হয় আর মামলা হয় বিটিআরসির বিরুদ্ধে। সেবার মান উন্নত করতে বিটিআরসির পদক্ষেপ তুলে ধরে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, স্পেকট্রাম নিলাম করে অপারেটরদের দেয়া হয়েছে কিন্তু তারা এটার যথাযথ ব্যবহার করছে না।
দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবার মান অত্যন্ত নাজুক। ধীরগতির ইন্টারনেট, কলড্রপ, মিউট কল, ইন্টারনেট প্যাকেজের নামে প্রতারণাসহ মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসিতে প্রতিমাসে যে বিপুল সংখ্যক অভিযোগ জমা হয় তার ৯০ শতাংশই মোবাইল অপারেটরদের সেবা নিয়ে। এমনকি অপারেটরদের ফেসবুক পেজেও সবচেয়ে বেশি গ্রাহকদের অভিযোগ। কিন্তু এসব অভিযোগে কোন কর্ণপাত নেই মোবাইল ফোন অপারেটরদের। নিম্নমানের সেবার বিপরীতে তাদের রয়েছে নানা অজুহাত। বছরের পর বছর ধরে এই সেবা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিলেও সেবার মান উন্নয়নে নজর নেই প্রতিষ্ঠানগুলোর। বরং তাদের দৃষ্টি এখন মোবাইল সেবার পাশাপাশি ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) সার্ভিস, ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিফোনি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইপিটিএসপি), ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডবিøউ), পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন), মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রতি। যে সেবা প্রদানের জন্য বিটিআরসি তাদের লাইসেন্স দিয়েছে সেটি উন্নত না করে নতুন নতুন এসব লাইসেন্স চায় প্রতিষ্ঠানগুলো। আর অজুহাত হিসেবে তুলে ধরছে এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে উন্নত হচ্ছে না মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা।
স্থানীয় টেলিকম অপারেটররা গ্রাহকদের কলে সংযুক্ত করার জন্য রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অপটিক্যাল ফাইবার অনেক বেশি উপযোগী মাধ্যম বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করছে গ্রামীণফোন মাত্র ১২ ভাগ, রবি ১৮ ভাগ, বাংলালিংক ৩১ ভাগ, টেলিটক ৬৪ ভাগ।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, সেবার মানের প্রশ্ন আসলে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, ঠেলাঠেলি করে। নিজেরা ফাইবার ব্যবহার করে না, ঠেলাঠেলি করে এজন্য সেবাও ভাল হয় না।
বিটিআরসির টেলিকম সেবার মান ও কলড্রপ পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২ মাসে গ্রাহকের ৫২ কোটি ৫৯ লাখ মিনিট কল ড্রপ হয়েছে। অপারেটরগুলো ক্ষতিপূরণ দিয়েছে মাত্র ১১ কোটি ৪৫ লাখ মিনিট। যা গ্রাহকদের খরচ করা টক টাইমের মাত্র ২২ শতাংশ। এতে ৪০ কোটি ৯৩ লাখ মিনিট কল ড্রপের বিপরীতে গ্রাহকদের প্রায় ১৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। যেখানে প্রতিটি কলড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে সেখানে অপারেটররা প্রতি ৩ থেকে ৭ মিনিটের বিপরীতে ১ মিনিট করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। সেবার মান নিয়ে যে অপারেটরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ তারা অবশ্য ওই অর্থবছরে মাত্র ২ মাসের তথ্য দিয়েছিল বিটিআরসিতে।
ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা অপারেটরগুলোর গত ডিসেম্বরে ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ৩৯টি উপজেলায় বিটিআরসি পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টে দেশের চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে তিনটির এখনো ফোরজি নির্ধারিত গতির ইন্টারনেট সেবা নেই। পরীক্ষায় গ্রামীণফোন, রবি ও টেলিটকে ফোরজি সেবার নির্ধারিত ন্যূনতম ডাউনলোড গতি আসেনি। ফোরজির ডাউনলোড গতি কমপক্ষে ৭ মেগাবাইট নির্ধারণ করেছে। অথচ পরীক্ষায় দেখা গেছে, রবির গতি সেকেন্ডে ৬ দশমিক ৪১ মেগাবাইট, গ্রামীণফোনের ৬ দশমিক ৯৯ মেগাবাইট। শুধু বাংলালিংক ডাউনলোডের নির্ধারিত গতি নিশ্চিত করেছে, সেকেন্ডে ৮ দশমিক শূন্য ১ মেগাবাইট। টেলিটকের ছিল ২ দশমিক ৮০ মেগাবাইট গতি।
এর আগে ১৮ জেলায় বিটিআরসি পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টে দেখা যায়- বরিশালে গ্রামীণফোনের স্পিড ৫ দশমিক ১ এমবিপিএস, রবির ৪ দশমিক ৮৯, বাংলালিংকের ৩ দশমিক ৫৬ এমবিপিএস। রংপুরে গ্রামীণফোনের ৬ দশমিক ৮৮ এমবিপি, রবির ৬ দশমিক ৫১, বাংলালিংকের ৪ দশমিক ৬৮ এমবিপিএস। রাজশাহীতে গ্রামীণফোনের ৬ দশমিক ৬৯ এমবিপিএস, রবির ৬ দশমিক ৭৫, বাংলালিংকের ৫ দশমিক ১ এমবিপিএস। খুলনায় গ্রামীণফোনের ৪ দশমিক ৬৩ এমবিপিএস, রবির ৫ দশমিক ৩৯ এবং বাংলালিংকের ৪ দশমিক ৯৬ এমবিপিএস।
নির্ধারিত মানের নিচেও কাগজে-কলেমে এটি দেখা গেলেও বাস্তবে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ। মুঠোফোন গ্রাহকদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহীউদ্দিন আহমেদ বলেন, টেলিযোগাযোগ সেবার কোয়ালিটি অব সার্ভিস সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ অপারেটরদের গ্রাহক অনুপাতে তরঙ্গ কম থাকা। ফলে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, কলড্রপ, ডাটা ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি উদাসীনতা ও অনীহার কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে।
এদিকে ইন্টারনেটের গতির সর্বনিম্ন স্তর পুননির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় রবি আজিয়াটাকে সতর্ক করে দিয়েছেন শ্যাম সুন্দর শিকদার। তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টার নির্দেশে মোবাইল ইন্টারনেট গতির সর্বনিম্ন সীমা ৭এমবিপিএস থেকে বাড়ানো হচ্ছে। এটা নিয়ে রবির চীফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম পেছনে অনেক কথা বলেন। বলেছেন তাদের সাথে আলোচনা না করেই নির্ধারণ করা হয়েছে। বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আইসিটি উপদেষ্টার নির্দেশে এটা করা হচ্ছে। কোন কথা থাকলে তার সাথে বসেন। উনি যদি বলেন তাহলে রিভাইজ হবে। পেছনে কথা বলবেন না, কথা থাকলে সামনাসামনি বলেন। না হলে পারস্পরিক সম্পর্ক খারাপ হয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার অপারেটরদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভয়েস সার্ভিসের কথা ভুলে যান। আগামীতে শতভাগই ডাটা নির্ভর হবে। এখন থেকেই এসব চিন্তা করে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সাজাতে হবে। তা নাহলে হারিয়ে যাবেন, আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবচেয়ে বেশি গ্রাহক, অনেক বড় কোম্পানি, অনেক কিছু হয়ে গেছেন এসব ভাববেন না। সেবার মান ভালো না করলে মানুষ ভুলে যাবে। এটা টেলিকম খাতে যে হতে যাচ্ছে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। গ্রাহক টাকা দিয়ে সেবা কিনে, তারা কারও ক্রীতদাস না যে চিরকাল থেকে যাবে। যেদিন তারা মুখ ফিরিয়ে নিবে সেদিন আর কূল পাবেন না।
মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের সেবার দুর্বলতার কারণে কল করতে না পারলে, ড্রপ হলে গ্রাহক কেন টাকা গুনবে? সেবা আপনার খারাপ এটা তো আমার দোষ না। তাহলে আমি কেন দুইবার টাকা দিব। এখন থেকে কলড্রপ হলেই পয়সা ফেরত দিতে হবে নির্দেশনা তৈরির জন্য বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। মোস্তাফা জব্বার বলেন, মানুষ আমাকে বলে টুজি পাইনা, ডেটা কানেক্ট হয় না, আবার ৫জি’র কথা বলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।