Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সঙ্কোচন নীতি গ্রহণের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের

নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন, ২০১৮) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আজ সোমবার দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর ফজলে কবির। বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে। জানা গেছে, ২০১৮ সালকে নির্বাচনী বছর বলা হচ্ছে। তাই এ বছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঋণ প্রবৃদ্ধির লাগাম টানতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। মুদ্রা সরবরাহ বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। তাই মুদ্রা সরবরাহ যতটা সম্ভব সংকুচিত রাখতে হবে। আবার শুধু মুদ্রা সরবরাহ কমালেই মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা যাবে না। তাই একটি সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এমনিতেই অনেক বেশি। আবার দ্রব্যমূল্যের দাম যেন না বাড়ে এ বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার। এখন আমাদের মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগের উপর নিবিড় তত্ত¡াবধায়ন করতে হবে। বেসরকারি খাতে যেন বিনিয়োগ ব্যাহত না হয়, বিনিয়োগ যেন উৎপাদনশীল খাত, কৃষি এবং এসএমইতে যায় এবং সরকারি খাতে যেন ঋণ না যায় এ বিষয়ে নজর দিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সাল জাতীয় নির্বাচনের বছর। তাই এ বছর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে। একই সঙ্গে নতুন মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লাগাম টানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ যোগানে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ঘোষণা আসতে পারে। এ ছাড়া নতুন মুদ্রানীতিতে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ যোগানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ। আর এ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের (২০১৬) একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল সাত লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। এ হিসেবে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।
আগের মুদ্রানীতিতে আগামী জুনে তা ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশে সীমিত রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এবারও এ লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী বিনিয়োগ ঠেকাতে এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এডিআর কমানো হতে পারে বলে গত ৩ জানুয়ারির ব্যাংকার্স সভায় বলা হয়। তবে ঋণ বিতরণের সীমা না কমানোর দাবি জানিয়েছে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।
এদিকে চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাত দশমিক চার শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি সাড়ে পাঁচ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার প্রাক্কলন করা হয়। বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংকিং খাত থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার ঋণ না নিয়ে উল্টো ১২ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর দুইবার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে থাকে। ছয় মাস অন্তর এ মুদ্রানীতি একটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই মাসে এবং অন্যটি জানুয়ারি মাসে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, নির্বাচনি বছরে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায়। বর্তমান সরকারের মতো দুর্বল সরকারের পক্ষে এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। মুদ্রাস্ফীতি ৬ দশমিক ২ বা ৩ অতিক্রম করলে দরিদ্র জনগণের ওপর প্রভাব পড়বে। সেজন্য মুদ্রা সরবরাহ যতটা সম্ভব সংকুচিত রাখতে হবে। অন্যান্যবার আমরা বলি সংকুলান নীতির কথা, আর এবার বলবো মুদ্রানীতিতে সংকোচন নীতি গ্রহণ করার কথা।
সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মুদ্রানীতিতে এখন তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। প্রথমত, ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান অপরিশোধিত ঋণের মাত্রা কীভাবে কমানো যায়। দ্বিতীয়ত, সা¤প্রতিকালে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে। এই ঋণ উৎপাদন খাতে যাচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করা। তৃতীয়ত, সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতে কীভাবে সুসাশন প্রতিষ্ঠা করা যায়, সেই বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দেয়া। এই বিষয়গুলো প্রত্যক্ষভাবে মুদ্রানীতির অংশ নয়, তবে মুদ্রানীতিতে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। তা ছাড়া অন্য বিষয়ে আগের মুদ্রানীতির তেমন পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ