নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইমরান মাহমুদ, মিরপুর থেকে : শীতের আবেশ কাটিয়ে চোখ খুলতে খুলতেই সকাল সাড়ে ৯টা। মিরপুর যেতে হবে সাড়ে ১১টার মধ্যেই। উদ্দেশ্য বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল কাভার করা। হাতে তখনও দু’ঘন্টা। অনেকটা সময় ভেবে অরেকটু জিরিয়ে নিতে চাইছে শরীর। পরক্ষনেই মনে পড়লো যানজটের কথা। ঢাকা শহরের নতুন আতঙ্ক। কালক্ষেপন না করেই, প্রাত প্রযোজনীয় কার্যাদি সম্পন্ন করে তৈরী। ধানমন্ডি থেকে মিরপুরের যাবার কথা মাথায় আসা মাত্রই মুঠো ফোনে গাড়ী পাঠাতে বললাম। একটু খোলাসা করেই বলি।
যানজটের নগরীতে মধ্যবিত্তের নতুন স্বস্তির নাম ‘পাঠাও’। মুঠোফোন অ্যাপসের মাধ্যমে যাত্রী সেবাদানকারী বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। সরকারও ইতোমধ্যেই তাদের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। যার সুবিধা ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছে নগরবাসী। সময় বাঁচাতে আমিও মাঝে মধ্যেই দ্বারস্থ হই এই যাত্রী সেবাদানকারীদের। তাদেরই একজনের মোটরসাইকেলে চেপে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আসতে আসতে ঝরির কাটাঁ বেলা ১২টা ছুঁই ছুঁই। টস হয়ে গেছে, জিতে বাংলাদেশকে ফিল্ডিংয়ে পাঠিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাহন থেকে নামতে না নামতেই ‘ভাইয়া টিকিট লাগবে?’- প্রশ্নটা শুনেই ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতে বাধ্য হলাম। কণ্ঠটা একজন নারীর। ঠিক নারী হয়ে ওঠেনি এখনও, চেহারায় তারুণ্যের ছাপ স্পষ্ট। একটু কৌতুহলী হয়ে উঠল মন। এতদিন দেখে এসেছি, টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে পুরুষ। এবার সেই দলে কি সামিল হতে যাচেছ নারীও! ভাবতে ভালোই লাগে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে!
নির্ধারিত দূরত্বের ভারা মিটিয়ে কৌতুহলী মনের রসদ মেটাতে টিকিট বিক্রেতাকে (নাকি বিক্রেতি হবে?) প্রশ্ন করলাম, ‘ক’টি টিকিট দিতে পারবেন?’ জানালো, ‘আপনার কয়টা লাগবে?’ দাম কেমন পড়বে, কোন কোন টিকিট দিতে পারবে- সংক্ষিপ্ত প্রশ্নত্তোর পর্বে জানা হয়ে গেল সব। তবে এটা জেনে অবাক হলাম, যাদের কাছে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব তাদের সঙ্গে ‘সেটিং’ আছে এনাদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, কাউন্টারে যাবার আগেই সেখান থেকে বেশ কিছু টিকিট হাপিস করে দেন কর্তব্যরত ব্যক্তিরা। পরে সেগুলো কিছু বাড়তি পয়সার লোভে বিক্রি করতে দিয়ে দেন এরকম বেশ কিছু কালোবাজারির হাতে। তারাও পান লাভের অংশ। তাই নির্ধারিত মূল্যের অনেক বেশি দিয়ে বিক্রি করতে হয় তাদের। পূর্ব স্ট্যান্ডের টিকিটে নির্ধারিত মূল্য যেখানে ১০০ টাকা, সেই টিকিট অনেককেই কিনতে হয়েছে প্রায় তিন গুণ দাম দিয়ে। এক হাজার টাকার গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের (উত্তর/দক্ষিণ) টিকিটের একই অবস্থা। ভিআইপি স্ট্যান্ডের টিকিটের চাহিদা নাকি সবচেয়ে বেশি, শনিবার হওয়াতে ৫০০ টাকার এই টিকিট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকাতেও!। শহীদ মুস্তাক/জুয়েল স্ট্যান্ডের ৩০০ টাকার টিকিট ৫শ থেকে হাজার। ১৫০ টাকার উত্তর-দক্ষিণ স্ট্যান্ড বিক্রি হচ্ছে ৫শ’তেও। বিসিবি ইন্টারন্যাশনাল লাউঞ্জের দাম সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। পাননি তারা। কথোপকথন শেষে সংবাদে সংশ্লিষ্টতার কারনে একটি ছবি তুলতে চাইতেই বললেন, ‘পেটে লাথি দিয়েন না। ঝামেলায় পড়ে যাবো। আর কখনও কাজ দিবে না।’ বিদায় দিয়ে ভাবলাম, এমন কাজও মানুষ আগ্রহ নিয়ে করতে চায়!
এরই মাঝে শুনলাম সোনার হরিণ টিকিটের জন্য এক হাত হয়েছে গেছে পুলিশ-জনতার। নির্ধারিত টিকিট না পেয়ে ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে সড়ক অবরোধ করে ক্রিকেটপ্রেমীরা। পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরাতে লাঠিচার্জও করে। অথচ স্টেডিয়ামে ঢুকে প্রেস বক্সের স্বচ্ছ কাঁচের ফাঁক গলে দেখি, গালারী এখনও প্রায় শূণ্যের কোঠায়। কারণটা বুঝতে বাকি থাকল না। পরে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে পূর্ণতা পেতে শুরু করে হোম অব ক্রিকেটের গ্যালারী। ভাবি, এদের অনেকেই ক্রিকেটকে ভালোবেসে না বুঝেই শিকার হয়েছেন প্রতারণার, সঙ্গ দিয়েছেন অনৈতিকতাকেও। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ সুনজর না দিয়ে তা বাড়তেই থাকবে দিনকে দিন।
সিরিজের শুরু থেকেই শৈত্যপ্রবাহের জেরে ছিলনা টিকিটের তেমন চাহিদা। ধীরে ধীরে উত্তাপ বেড়েছে বাংলাদেশের টানা দুর্দান্ত সব জয়ে। যে দলটিকে সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিজেদের রেকর্ড ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ, ফিরতি লেগে তাদের কাছেই ১০ উইকেটে হারের লজ্জা পেয়েছে মাশরাফির দল। ফাইনালে প্রতিপক্ষ এই দুই দল হওয়াতে উত্তেজনার যে আগুন লেগেছে তা টিকিট পর্যন্ত ছড়াবে অনুমিতই ছিল। তবে সেই টিকিট বিক্রির সঙ্গে একটি উঠতি বয়সী নারীর সংযোগ মেলাতে পারছিলাম না কিছুতেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।