ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বালিকা, যুবতী, মহিলাদের ওপর সেনাবাহিনীর ধর্ষণযজ্ঞ ব্যাপক। বার বার তাদের দ্বারা এই নিকৃষ্টতম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। গত ২৫ আগস্ট থেকে তা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৯ জন রোহিঙ্গা মহিলার সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা। এরপর ১১ ডিসেম্বর দীর্ঘ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বর্তমানে অবস্থান করছেন এসব রোহিঙ্গা মহিলা। তারা মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রাম থেকে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে এসেছেন। তাদের সবার কাহিনী মোটামুটি একই রকম। তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এমন অভিযোগ বার বার অস্বীকার করেছে।
সাক্ষাৎকার দেওয়া ২১ জন মহিলার জবাববন্দি তুলে ধরা হয়েছে ওই রিপোর্টে। এতে তারা শুধু তাদের নামের প্রথম অংশ প্রকাশে রাজি হয়েছেন। পুরো নাম নাম প্রকাশ করলে দেশে ফিরলে তাদের অথবা পরিবারের সদস্যদের সেনারা হত্যা করবে, এমন আতঙ্ক রয়েছে। এমন এক বালিকার বয়স মাত্র ১৩ বছর। সে নিজেকে নামের প্রথম অংশের ইংরেজি প্রথম অক্ষর ‘আর’ দিয়ে প্রকাশ করেছে। বলেছে, তাকে মিয়ানমারের সেনারা ভয় দেখিয়েছে। গত বছর তার পিতাকে কুপিয় হত্যা করেছে সেনারা। এ বছর আগস্টেও একদিন তার বাড়িতে জোর করে প্রবেশ করে ১০ সেনাসদস্য। তার কাছ থেকে কেড়ে নেয় ছোট দুই ভাইকে। তাদের একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে তারা। এরপর তাদের প্রহার করে। এ অবস্থা দেখে ‘আর’ বাড়ির সামনের দরজা দিয়ে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু সেনারা তাকে ধরে ফেলে। তার দু’হাত বেঁধে ফেলে দু’টি গাছের সঙ্গে। একে-একে কান থেকে টেনে ছিঁড়ে নেয় কানের দুল ও হাত থেকে ব্রেসলেট। তারপরই ঘটতে থাকে সবচেয়ে জঘন্য অধ্যায়। তার পোশাক একেবারে কেড়ে নেওয়া হয়। এ সময় ‘আর’ চিৎকার করতে থাকে। তাদের থামতে বলে। কিন্তু না থেমে একে একে তার দিকে পিশাচের চেহারা নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে সেনারা। প্রথমজন তাকে ধর্ষণ শুরু করে। এ সময় ভয়াবহ বেদনায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল ‘আর’। এমন করে একে একে ১০ জন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর তাকে ফেলে যায়। এ অবস্থায় তার বড় ভাই তাকে নিয়ে আসে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে। বাংলাদেশে প্রবেশের পর চিকিৎসকরা তাকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা দেন। জীবন বাঁচাতে পারলেও নিজের সেই ছোট দুই ভাইয়ের কোনও খোঁজ আজও পায়নি ‘আর’। এখনও ঘুমাতে গেলে সেই আতঙ্ক তাকে গ্রাস করে। খেতে পারে না ঠিকমতো।
আরেক ধর্ষিতার নামের অক্ষর ইংরেজি ‘এফ’। ‘এফ’কে দু’বার ধর্ষণ করা হয়। তিনি ও তার স্বামী বাড়িতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন। এমন সময় সাত সেনাসদস্য তাদের বেডরুমে প্রবেশ করে তার স্বামীকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। একটি স্কার্ফ গুঁজে দেয় তার মুখের ভেতর। এরপর ‘এফ’-এর সর্ণালঙ্কার কেড়ে নেয় তারা। একে-একে কেড়ে নেয় সব পোশাক। তারপর তাকে ছুড়ে মারে মেঝেতে। সেখানেই প্রথম একজন সেনাসদস্য তাকে ধর্ষণ করতে থাকে। এ সময় তার স্বামী মুখ থেকে ওই স্কার্ফ খুলে ফেলতে সমর্থ হন এবং চিৎকার করেন। তখন এক সেনাসদস্য তাকে গুলি করে হত্যা করে। আরেকজন সেনা তার গলা কেটে ফেলে। ধর্ষণ শেষে সেনাসদস্যরা বাড়ির বাইরে এনে ফেলে রাখে ‘এফ’র নগ্ন শরীর। তারপর তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে তাকে। দু’মাস পরে ‘এফ’ বুঝতে পারেন তিনি অন্তঃসত্ত¡া; এই যখন অবস্থা তখন সেপ্টম্বরে আবার সেই ভীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন তিনি। এক প্রতিবেশীর বাড়িতে গভীর ঘুমে ‘এফ’ তখন ওই বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ৫ সেনাসদস্য। এ সময় তারা ৫ বছর বয়সী একটি শিশুর গলা কেটে ফেলে। হত্যা করে তার পিতাকে। আবারও ‘এফ’র পোশাক কেড়ে নেয় সেনারা। দু’জন সেনা তাকে ধর্ষণ করে। অন্য তিনজন ধর্ষণ করে ‘এফ’র বান্ধবীকে। পরে মেঝেতে তাদের ফেলে চলে যায়। এরপর ওই ধর্ষিতারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
পানি খাবার খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ‘কে’। আগস্টের শেষ। এ সকালে স্বামী সন্তানদের নিয়ে খেতে বসবেন। এ সময় তিনি শুনতে পেলেন গ্রামে ব্যাপক চিৎকার। তার স্বামী ও বড় তিন সন্তান বাইরে বেরিয়ে আসেন। ওই সময় ‘কে’ ছিলেন ৯ মাসের গর্ভবতী। তার ছিল দুটো ছোট্ট শিশুও। ফলে তিনি তাদের নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেননি। এ সময় সেনাসদস্যরা তার বাড়িতে প্রবেশ করে। তাকে বিছানার ওপর ফেলে দেয়। কেড়ে নেয় প্রথমে তার সর্ণালঙ্কার ও অর্থ সম্পদ। এরপর তার পোশাক কেড়ে নিতে থাকে। হাত ও পা বেঁধে ফেলে রশি দিয়ে। তিনি এতে বাধা দিলে তাকে প্রহার করা হয়। এরপরই তাকে ধর্ষণ শুরু করে তারা। ভয়ে তিনি নড়াচড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। একজন সেনা তার চোখের মণির ওপর একটি ধারালো ছুরি ধরে রাখে। আরেকজন তার বুকের ওপর বন্দুক তাক করে রাখে। অন্যজন তাকে ধর্ষণ করে। পর্যায়ক্রমে তিনজনই তাকে ধর্ষণ করে। রক্তাক্ত হয়ে পড়েন ‘কে’। তিনি তখন নিশ্চিত হয়ে যান, তার গর্ভস্থ শিশু হয়তো মারা গেছে ততক্ষণে। তিনি অসচেতন হয়ে পড়েন। যখন চেতনা ফেরে, তখন নরপিশাচরা চলে গেছে। ধর্ষিত হওয়ার জন্য তাকে দায়ী করতে থাকেন তার স্বামী। কারণ, তিনি তাদের অনুসরণ করে পালাতে পারেননি। এরপর ওই পরিবারটি পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। দু’সপ্তাহ পরে এখানেই একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন ‘কে’।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।