Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রণক্ষেত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগের সাথে নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাংবাদিকসহ আহত অর্ধশতাধিক : ভিসি লাঞ্ছিত : ভিসিকে উদ্ধারে ছাত্রলীগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির কার্যালয়ের সামনে গতকাল নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের সাথে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসময় পুরো ঢাবির রেজিস্ট্রার বিল্ডিং ও সিনেট ভবন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সংঘর্ষে সাংবাদিক সহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিকের বেশি আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা গুরুতর। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ^বিদ্যালয় মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কয়েকটি টিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ।
এসময় আন্দোলনকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এর আগে ভাঙচুর করা হয়েছে ভিসির কার্যালয়ের সামনের তিনটি ফটক।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি সাত কলেজ বিরোধীদের কর্মসূচিতে হামলা ও ছাত্রী উত্যক্তের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বিচারসহ চার দফা দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বেলা ১২টার দিকে ভিসির কার্যালয়ের সামনে আসে। এসময় পূর্ব থেকে তালা লাগিয়ে রাখা ভিসির কার্যালয়ের সামনের প্রশাসনিক ভবনের গেইট ভাঙচুর করে ভিতরে প্রবেশ করে তারা। এক পর্যায়ে ভিসির কার্যালয়ের সামনের আরো দুটি কলাপসিবল গেইট ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা। এরপর দুপুর ১টার দিকে ভিসির অফিস কক্ষের সামনে অবস্থান নেয় তারা। সেখানে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।
আন্দোলনকারীরা দাবি মানতে প্রশাসনকে বাধ্য করা হবে বলেও ঘোষণা দেয়। সেসময় বিশ^বিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ সিনিয়র শিক্ষকরা আন্দোলনকারীদের থেকে একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে ভিসির আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আন্দোলকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে ভিসিকে তাদের সামনে এসে যা বলার তা বলতে বলে। দফায় দফায় সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েও প্রত্যাখ্যাত হন শিক্ষকরা। এক পর্যায়ে বিকেল পৌণে তিনটার দিকে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান পিছনের গেইট দিয়ে চলে যেতে চাইলে আন্দোলনকারীরা তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। এসময় ভিসিকে চতুর্দিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলে আন্দোলনকারীরা এবং তারা একটি ঘোষনা দিয়ে সেখান থেকে যাওয়ার দাবি করে। ভিসির পথরোধ করে শুয়ে পড়ে অনেকে। এক পর্যায়ে ভিসি তাদের আশ্বাস দিলে তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেয়ার দাবি করে।
এসময় ভিসির বক্তব্য রেকর্ড করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর তেড়ে আসেন বিক্ষুব্ধরা। এক পর্যায়ে ভিসিসহ সিনিয়র শিক্ষকদেরকে সেখানে চারদিকে আরো ঘিরে ধরলে ঘটনাস্থলে আসেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, বিশ^বিদ্যালয় সভাপতি আবিদ আল হাসান। ছাত্রলীগ তাদের নেতাকর্মী নিয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করে ভিসিকে তার কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়। এমন সময় আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ নেতাদেরও ধাওয়া দেয়। এতে আহত হন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এসময় ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে আহত করেন মৃৎশিল্প বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী তানভির হোসাইন মইন।
সেসময় ও আন্দোলনকারীরা ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করে শ্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতারা ভিসির কক্ষ থেকে বের হয়ে এসে ভিসির কার্যালয়ের সামনে এবং আন্দোলনকারীরা ভিসির কার্যালয়ের পিছনে অবস্থান নেয়।
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়া আন্দোলনকারীদের বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রড, লাঠি ও হকিস্টিক দিয়ে এলোপাথাড়ি হামলা করে আন্দোলনকারীদের উপর। এসময় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এরপর ছাত্রলীগ বিভিন্ন হল থেকে নেতাকর্মীদের ডেকে আনে। এক পর্যায়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘেরাও করা হয় প্রশাসনিক ভবনের চারদিক। এসময় আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবনের পূর্ব গেইট (সোনালী ব্যাংকের সামনে) দিয়ে চলে যেতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতাদের হামলার শিকার হন। এরপর সেখান থেকে পালিয়ে যেতে চাইলে প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে ধরে মারা হয় আন্দোলনকারীদের। এতে সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের প্রায় অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয় বলে জানা গেছে।
হামলায় গুরুতর আহতরা হলেন- ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মাসুদ আল মাহাদী, আবু রায়হান খান, রাজীব দাস, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের প্রগতি বর্মন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি মীর আরশাদুল হক। এছাড়াও ছাত্রলীগ নেতাদের হামলার শিকার হন বিশ^বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা। বিকেল ৫টার দিকে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রেণে আসে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইভা মজুমদার বলেন, আমরা নিপীড়কদের বিচার চাইতে এসেছিলাম। কিন্তু ছাত্রলীগ আমাদের ওপর উল্টা হামলা চালায়। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ^বিদ্যালয় মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে ভিসির কার্যালয়ে হামলাকারীদের বহিষ্কার ও বিচার দাবি করেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, আমরা ভিসির কার্যালয়ে হামলাকারীদের বহিষ্কার ও বিচার দাবি করছি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আন্দোলনের নামে এখানে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যমূলক কার্যক্রম ঘটানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদেরহানি ঘটানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের মনে হয় এটি পূর্ব পরিকল্পিত এবং কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত করার প্রয়াসে লিপ্ত আছে।
এর আগে গত কয়েকদিন যাবৎ ১৫ জানুয়ারি রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও ছাত্রী উত্যক্তের বিচারসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীরা। তাদের চার দফা দাবি হলো- আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা অজ্ঞাতনামা মামলা প্রত্যাহার করা, অধিভুক্ত বাতিলের দাবীতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা যৌন নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কার, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীর পদত্যাগ এবং সাত কলেজ সংকটের নিরসন।



 

Show all comments
  • তানিয়া ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ৪:৫৬ এএম says : 0
    বিষয়গুলো খুবই লজ্জার
    Total Reply(0) Reply
  • লোকমান ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ৪:৫৬ এএম says : 0
    ছাত্রলীগ কী সাধারণ ছাত্রদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • MD Riaz Uddin ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৩৮ পিএম says : 1
    নিঃসন্দেহে শিবিরের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হবে!! অলরেডি ছাত্রলীগ নেতা সংবাদ সম্মেলন করে বলে দিয়েছে এখানে শিবির ছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • কাসেম ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৪৭ পিএম says : 1
    পুরো ঘটনারই নিন্দা জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • নাজির ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৪৯ পিএম says : 0
    দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের এই করুণ অবস্থা দেখে আমরা সত্যি মর্মাহত।
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৫০ পিএম says : 0
    আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা অজ্ঞাতনামা মামলা প্রত্যাহার করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Faruk Hossain ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৫১ পিএম says : 0
    আমরা না সভ্য থেকে সভ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছি? তাহলে এগুলো কি? তাও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে?!
    Total Reply(0) Reply
  • বশির ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৫৭ পিএম says : 0
    অধিভুক্ত বাতিলের দাবীতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা যৌন নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • আরফান ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৫৯ পিএম says : 0
    সাত কলেজ সংকটের দ্রুত নিরসন করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • বিপ্লব ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১:০১ পিএম says : 0
    শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয় পুরো দেশটাই এখন রণক্ষেত্র
    Total Reply(0) Reply
  • alim ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ৯:৪০ এএম says : 0
    “ ওরা ডিজিটাল বাকশাল, কিছু বললে গলা করবে লাল ৷”
    Total Reply(0) Reply
  • auntor ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ৬:৩৯ এএম says : 0
    ## যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য কে বাঁচাতে ছাত্রলীগ লাঠি হামলা করতে পারে, তাহলে আমার কোনো সহপাঠী বা বন্ধু কে বাঁচাতে আমার কর্তৃক অন্যের উপর হামলা করা কেন বে-আইনি হবে ? উপাচার্য হামলার শিকার হলে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গণ নীরব ছিলেন ? কেন তারা আইনি বেবস্থা নেয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না ? (কেন ছাত্র লীগ) কেন বিশ্ববিদালয়ের আরো অন্যান ছাত্র উপাচায কে বাঁচাতে এগিয়ে এলো না ? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ কেবল সরকারকেই নয়। সাধারণ মানুষ অর্থ বহন করে।একজন শিক্ষার্থী হিসাবে না একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে, আমার এই বিষয়ে কথা বলার বা জানার অধিকার আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Daulat ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ৪:৫৪ পিএম says : 0
    Deshta saytaner desh a parinata hoece
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রলীগ

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ