নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইমরান মাহমুদ : বাংলাদেশ ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে অনেক প্রথমের সাক্ষী তিনি। গত কয়েক বছর থেকেই তার ব্যাট নিয়মকরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাঘা বাঘা বোলারদের। ‘সিএ’ ব্যাটটা নিয়ে যখন ক্রিজে আসেন স্বচ্ছন্দ যেমন থাকে, সেই ব্যাট হাতে বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডাড়িতে বোলারদের বল সীমানাছাড়া করাতেও তার জুড়ি মেলা ভার। তামিম ইকবাল ফর্মের সেই রেস চলছে ত্রিদেশীয় সিরিজেও। প্রথম ম্যাচে যেখানে ছিলেন অপরাজিত, ঠিক পরের ম্যাচে সেই ৮৪ রানে এসেই হলেন আউট। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পৌঁছেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১ হাজার রানের মাইলফলকে। গতকাল আরো দুটিতে চোখ রেখে শুরু হয়েছিল পথচলা, পেরিয়ে গেছেন সেগুলোকেও। ওয়ানডেতে ৬ হাজারী ক্লাবের সদস্য এখন তামিম, সেই সঙ্গে এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ডটিও সনথ জয়াসুরিয়ার কাছ থেকে নিয়েছেন ছিনিয়ে!
বেøসিং মুজারব্বানির বলটা লং অন দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অভিনন্দন গ্রহণ করলেন তামিম ইকবাল। ফিফটি পেয়েছেন বেশ আগেই, সেঞ্চুরি থেকেও আছেন দূরে। তবু অভিনন্দনের কারণ নতুন মাইলফলক। বাংলাদেশের অনেক প্রথমের কীর্তি গড়া তামিম গড়লেন আরেক কীর্তি। এই ম্যাচে নামার আগে দরকার ছিল ৬৬ রান। আগের দুই ম্যাচেই করেছিলেন ফিফটি। গিয়েছিলেন সেঞ্চুরির কাছে। টানা তৃতীয় ম্যাচেও তামিম পেলেন ফিফটি। ফিফটি পেরিয়ে ৬৬ রানে পৌঁছাতেই স্পর্শ করলেন নতুন মাইলফলক। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ছয় হাজার রান হয়ে গেছে টাইগার ওপেনারের।
বাংলাদেশের ব্যাটিং রেকর্ডের প্রায় সবই তার। মাইলফলক ছুঁতে এদিন প্রয়োজন ছিল ৬৬। টুর্নামেন্টে টানা তৃতীয়বার পঞ্চাশ ছাড়িয়ে পৌঁছে যান কাক্সিক্ষত ঠিকানায়। ওয়ানডেতে রানে একসময় তুমুল লড়াই ছিল তামিম ও সাকিব আল হাসানের। তবে গত বছর তিনেকের দুর্দান্ত ধারাবাহিকতায় এখন অনেকটাই এগিয়ে তামিম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে ৫১ রানে আউট হওয়া সাকিব দুইয়ে আছেন ৫ হাজার ২৩৫ রান নিয়ে। বাংলাদেশের হয়ে ৫ হাজার রান নেই আর কারও। ৪ হাজারও আছে কেবল আর মুশফিকুর রহিমের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ শুরু করেন ৪ হাজার ৬৫২ রান নিয়ে। ১৭৫ ইনিংসে তামিম করলেন ৬ হাজার। গত কয়েক বছরে তার অসাধারণ ধারাবাহিকতার প্রমাণ মেলে ওয়ানডে রানের পথচলাতেও। ৩ হাজার ছুঁতে লেগেছিল ১০২ ইনিংস। পরের ৩ হাজার করলেন ৭৩ ইনিংসেই।
২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ৪ হাজার স্পর্শ করেছিলেন তামিম। সেখান থেকে পরের ২১ ইনিংসে স্পর্শ করেন ৫ হাজার। পরের হাজার রান করলেন ১৭ ইনিংসেই। ১২৩ ইনিংসে ৬ হাজার করে দ্রুততম ৬ হাজারের বিশ্বরেকর্ড হাশিম আমলার।
৭৬ রানের ইনিংসটি খেলার পথে তামিম ছাড়িয়ে গেছেন ভারতের রান মেশিন খ্যাত বিরাট কোহলি, দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা ও এবি ডি ভিলিয়ার্স এবং ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তী স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসকেও। এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ছয় হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার দিক থেকে কোহলি, রিচার্ডস কিংবা আমলার থেকে সবথেকে কম ম্যাচ খেলেছেন তামিম। ২০১৬ সালে পাঁচ হাজার রান সংগ্রহ করা তামিম চলতি বছর পর্যন্ত মোট ১৭টি ইনিংস খেলে ছয় হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অপরদিকে ভারতীয় অধিনায়ক কোহলি এবং প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা উভয়েরই পাঁচ থেকে ছয় হাজার রানে প্রবেশ করতে খেলতে হয়েছে মোট ২২ ইনিংস। আর ভিভ রিচার্ডসের এই রানে পৌঁছুতে ২৭ ইনিংস খেলতে হয়েছিলো এবং ডি ভিলিয়ার্স খেলেছিলেন ২৩টি ইনিংস।
এ ম্যাচেই আরেক রেকর্ডে ছাড়িয়ে গেছেন কিংবদন্তিকে। ওয়ানডেতে এক মাঠে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখন বাঁহাতি এই ওপেনারের। তামিম কেড়ে নিয়েছেন আরেক বাঁহাতি ওপেনার সনাথ জয়াসুরিয়ার রেকর্ড। ১৯৯২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ৭১ ম্যাচ খেলেন শ্রীলঙ্কার এই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। ৭০ ইনিংসে ৩৮.৬৭ গড়ে করেন ২ হাজার ৫১৪ রান। রেকর্ড গড়তে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪২ রান প্রয়োজন ছিল তামিমের। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২৪তম ওভারে ওই রান ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। জয়াসুরিয়াকে ছাড়িয়ে যেতে তামিমের লেগেছে ৭৩ ইনিংস।
ওয়ানডেতে এক মাঠে দুই হাজারের বেশি রান আছে আট ব্যাটসম্যানের। তামিম ছাড়া এই তালিকায় আছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। জয়াসুরিয়া-ইনজামাম ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন কবেই। তামিমকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ তাঁদের নেই। তবুও তামিম স্বস্তি পাচ্ছেন কোথায়! তাঁরই সতীর্থ-বন্ধু সাকিব আল হাসান এই রেকর্ডের শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী! মিরপুরেই ৭৬ ওয়ানডেতে ৪০.০৩ গড়ে ২ সেঞ্চুরি, ১৮ ফিফটিতে বাঁহাতি অলরাউন্ডারের রান ২৩৬৯।
মিরপুর যে তার প্রিয় মাঠ, সেটি অনেকবারই বলেছেন। ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ ম্যাচ খেলেছেন এ মাঠে, এ মাঠেই খেলতে তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। যে মাঠের সঙ্গে তাঁর আত্মার বন্ধন, সেখানে এমন কীর্তি তো হবেই! তাহলে মিরপুরের ‘বাটিংরাজ’ উপাধীটা তাকে দিয়ে দেয়াই হোক- কী বলেন?
একই ভেন্যুতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান
ব্যাটসম্যান ভেন্যু ম্যাচ ইনিংস রান
তামিম ইকবাল (২০০৭-২০১৬) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ঢাকা ৭৪ ৭৩ ২৫৪৯
সনাথ জয়াসুরিয়া (১৯৯২-২০০৯) আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম, কলম্বো ৭১ ৭০ ২৫১৪
সাকিব আল হাসান (২০০৬-২০১৬) মিরপুর শেরে ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ঢাকা ৭৬ ৭১ ২৩৬৯
ইনজামাম-উল-হক (১৯৯৩-২০০২) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আরব আমিরাত ৫৯ ৫৯ ২৪৬৪
সাঈদ আনোয়ার (১৯৯০-২০০১) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আরব আমিরাত ৫১ ৫১ ২১৭৯
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।