Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইলা অঞ্চলে ঠান্ডায় জনজীবনে অচলাবস্থা

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পৌষের শুরুতে শীত ছিল না। গত ১৫ দিনে শীত জেঁকে বসেছে আইলা উপদ্রুত উপকূল অঞ্চলে। জলবায়ু পরিবর্তনের দরুণ থেমে থেমে হিমেল ঠান্ডায় সাধারণ নগর গ্রামের জনসাধারণের দুর্ভোগের পাশাপাশি আইলায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে রয়েছেন। শীতে দিনে রাত ঠক ঠক করে কাঁপছেন।
দেরিতে সূর্যের দেখা মিললেও তাতে উত্তপ্ত হচ্ছে না যেন এ অঞ্চল। গতকালও নগর গ্রাম-গঞ্জের পাশাপশি উপক‚লীয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছিল কুয়াশার চাদরে ঢাকা। বিশেষ করে আইলা বিধ্বস্ত এলাকার হাজার হাজার শিশু ও বৃদ্ধ শীতে গরম কাপড়ের অভাবে বিনিদ্র রাত্রি যাপন করছেন। নদীর ঝির ঝির কন কনে হিমেল হাওয়ায় জনজীবনে এখন অচলাবস্থা। গরিবের শেষ ভরসা রোদ এখন তাদের সাথে রীতিমতো প্রতারণা করছে। প্রচন্ড ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে নগরীর শিশুহাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ’ শিশু। আর প্রতিদিন বহিঃর্বিভাগে ভিড় জমাচ্ছে গড়ে ৩শ’ শিশু। অন্যান্য হাসপাতাল, ক্লিনিক ও শিশু কেয়ার সেন্টারগুলোতে একই অবস্থা। একটি বেসরকারি এনজিওর মতে, বৃহত্তর খুলনার তিন জেলায় প্রতিদিন ঠান্ডাজনিত রোগে বৃদ্ধ ও শিশুরা গড়ে তিন হাজারের মতো আক্রান্ত হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র শীতের কারণে ব্রোর্নকিউলাইটিস ও কাফ অ্যান্ড কোল্ড নামে এক ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে অধিকাংশ শিশু। সেই সাথে রয়েছে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব। বিগত বছরগুলোতে শীতের তীব্রতা কমে গেলে শীতবস্ত্র বিতরণের হিড়িক পড়ে। কিন্তু এই তীব্র শৈত্যপ্রবাহে সে সব দাতাদের দেখতে পাচ্ছে না শীতার্তরা। ফলে শীতের তীব্রতায় শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এ জন্য বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
এদিকে, মৌসুমের শুরুতে এ অঞ্চলে শীতের তেমন দেখা না মিললেও গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। আর শীত থেকে বাঁচতে শীতের কাপড় কেনাকাটার ধুম পড়েছে। এর মধ্যে নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং হতদরিদ্র শ্রেণির মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন ফুটপাথে। নগরীর ফেরিঘাট থেকে ডাকবাংলা মোড় পর্যন্ত ফুটপাথ ঘুরে দেখা গেছে, সীমিত আয়ের নারী-পুরুষ ফুটপাথে এসে শীত নিবারণের জন্য পছন্দের জ্যাকেট, সোয়েটার, জাম্পার কিনছেন। এখানে অর্ধশতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকানি শীতকাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। নারী-পুরুষের প্রতি পিস জ্যাকেট ও বেøজার দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা এবং সোয়েটার ও জাম্পার ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে জ্যাকেট, বেøজার, সোয়েটার ও জাম্পারের বেল্ট কিনে তারা ব্যবসা করছেন। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার বিকিকিনি করছেন এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
সূত্রমতে, আইলা এলাকায় শিশু ও বৃদ্ধদের জ্বর, কাশি এবং ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে মারাত্মক আকারে। এ অঞ্চলের মানুষের অধিকাংশেরই মাথা গোজার ঠাঁই নেই। ওয়াপদা রাস্তার পাশে ঝুপড়ি বেঁধে কোনোরকম জীবন ধারণ করছেন। পাশে শিবসা নদীর কনকনে ঠান্ডা বাতাসে আবালবৃদ্ধবণিতা সকলেই শীতে কষ্ট পাচ্ছেন। শীত নিবারণের যে সামান্য বস্ত্র রয়েছে, তা দিয়ে রাত কাটানো সম্ভব হচ্ছে না। দিনের বেলায় গতকাল রোদের দেখাই মেলেনি। নদীর পাশে এসব অঞ্চলে কুয়াশা এমনিতেই বেশি। তারপর শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া খুলনার কয়রার প্রত্যন্ত অঞ্চল দাকোঁপের অন্যান্য গ্রাম সাতক্ষীরার আশাশুনি দেবহাটা, কালিগঞ্জ এবং বাগেরহাট জেলার মংলা, রামপাল, শরণখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় শৈত্যপ্রবাহে হাজার শিশু ও বৃদ্ধ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা গেছে। বিভিন্ন উপজেলার উপক‚লবর্তী এলাকায় মোবাইল ফোনে জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে তাদের দুর্গতির কথা। তাৎক্ষণিকভাবে এসব অঞ্চলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কয়রা থেকে সংবাদদাতা মোস্তফা শফিকুল ইসলাম জানান, আইলা অঞ্চলে এই শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে বা শীতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোনো সাহায্য এই মুহূর্তে কোথাও একটুও পৌঁছায়নি। উপক‚লীয় চরাঞ্চলে খোলা আকাশের নিচে কোনোরকম পলিথিন টাানিয়ে বসবাসকারীদের শীতের রাত্রি কাটে ভোরের সূর্যের আলোর অপেক্ষায়। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণেরও কোনো সুযোগ নেই। কয়েকদিন আগে একটি শৈত্যপ্রবাহ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবারো সাধারণ মানুষ এখন শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছেন। এবার এনজিওগুলো তেমনভাবে এগিয়ে আসেনি। সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে দিন মজুররা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। বর্তমানে যে সব পলিথিন টানানো মাটির স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে তারা অবস্থান করছেন, সেখানে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ