পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পুলিশের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ। হামলায় তিন পুলিশ সদস্যসহ আহত হন ১০ জন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকে ক্যাম্পাস। এ সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকায় বিপুল পরিমাণ দেশী অস্ত্রশস্ত্র জড়ো করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রস্তুতি নেয়ার মুহূর্তে সেখানে তল্লাশি চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করে পুলিশ। নগরীর পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। ওই ভবনটি ব্যবহৃত হয় রেলের বিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তর হিসেবে। সেখানে রয়েছে পানির মোটর। তালাবদ্ধ অফিসে মোটর চালু করতে না পারায় রেলওয়ের কয়েকটি আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি ওই ক্লাব পরিদর্শনকালে স্থানীয় এমপি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে দাওয়াত না দেয়ার প্রতিবাদে এ কান্ড ঘটায় স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। গতকাল (রোববার) সকাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঘটে এসব ঘটনা।
চট্টগ্রামে এখন গন্ডগোল আর গেঞ্জামের মূলে যেন ছাত্রলীগ। যেখানেই ছাত্রলীগ সেখানেই সংঘাত। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারের সংঘাত-সহিংসতা থেকে শুরু করে খুন, রাহাজানি সকল ধরনের অপরাধেই জড়িয়ে পড়ছে তারা। বেপরোয়া ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণে কার্যত ব্যর্থ সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা। কোন অপরাধ সংঘটিত হলেই পুলিশ কিছুটা তৎপর হলেও তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা দায়সারা বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।
ছাত্রলীগের অব্যাহত ভয়ঙ্কর ভূমিকায় শঙ্কিত ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়তই সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র শিবিরকে বিতাড়নের পর নিজেরাই নিজেদের সাথে লড়ছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। দীর্ঘদিন সেখানে কমিটি নেই। কমিটি গঠনের পর প্রথমে তা স্থগিত পরে তা বাতিল করা হয়। কমিটি না থাকলেও ছাত্রলীগের নামে সেখানে চলছে নানা অপরাধ কর্মকান্ড। বিবদমান দু’টি গ্রুপ পুরো ক্যাম্পাসকে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের সংঘাত-সহিংসতায় বিঘিœত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। শনিবার মধ্যরাত থেকে দুই গ্রুপ মুখোমুখি হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া থেকে সংঘর্ষ চলে গতকাল দুপুর পর্যন্ত। বিভিন্ন নামে সংঘর্ষে জড়ালেও বিবদমান দু’টি গ্রুপের একটি মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপের এবং অন্যটি সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজেও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কর্মীরা প্রতিনিয়ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে শনিবার রাতে কথা কাটাকাটির জের ধরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের মাঝে তুমুল সংঘর্ষ হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে। এসময় হাসপাতাল এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে এএসআই শীলব্রত বড়–য়া ও কনস্টেবল ফিরোজ এবং মাহমুদ আহত হন। ছাত্রলীগেরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পুলিশ জানায়, জরুরী বিভাগের সামনে কনস্টেবল মাহমুদের সাথে এক ছাত্রলীগ নেতা কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে ওই ছাত্রলীগ নেতা ফোন করে তার দলবল ডেকে আনে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। পাঁচলাইশ থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। গতকাল নগরীর পলিটেকনিক ইনসটিটিউট সংলগ্ন একটি মেসে অভিযান চালিয়ে ৮টি রামদা ও ৭টি কিরিচ উদ্বার করা হয়। পরে ওই মেসের বিভিন্ন কক্ষে অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। পরে পাশের একটি মেস থেকে আরও দুইজনকে আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার খবর পেয়ে নগরীর খুলশী ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ ওই এলাকায় পৃথক এ অভিযান চালায়।
এলাকায় সংঘাত-সহিংসতার পাশাপাশি খুনোখুনিতেও লিপ্ত হচ্ছে ছাত্রলীগ। ১৫ জানুয়ারি নগরীর জামালখানে প্রকাশ্যে দিনের আলোতে খুন হয় কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান ইসফার। এ ঘটনায় জড়িত পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতারের পর তারা খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেয়। পুলিশ জানায়, নিহত আদনান ছাত্রলীগের সাব্বির গ্রুপের কর্মী। যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা চকবাজার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফের অনুসারী। আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনী শিকার করেছে আব্দুর রউফের নির্দেশে আদনানকে হত্যা করা হয়েছে। আর এ হত্যাকান্ডের জন্য তাদের পিস্তল সরবরাহ করে মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা এনাম হোসেন। গত শুক্রবার ওই পাঁচজন আদালতে জবানবন্দী দেয়। তবে গতকাল পর্যন্ত পুলিশ আদনান খুনের নির্দেশদাতা ও অস্ত্রদাতা কাউকেই গ্রেফতার করেনি। এর আগে ছাত্রলীগের বিরোধে নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ায় খুন হন নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস রুবেল। ওই ঘটনায় গ্রেফতার যুবলীগ ও ছাত্রলীগের তিন কর্মী হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে লালখান আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমের নাম প্রকাশ করে। সে মাসুমও এখনো গ্রেফতার হননি।
এর আগে চবি ক্যাম্পাসে খুন হন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও তারা গ্রেফতার হয়নি। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিরোধে খুনের শিকার সোহেলের খুনীরাও এখনো অধরা। গত কয়েক বছরে ছাত্রলীগের বিরোধে তাদের অন্তত ১০ নেতা খুন হয়েছেন। এসব ঘটনায় জড়িতদের বেশিরভাগই ধরা পড়েনি। আর এ কারণেই বেপরোয়া ছাত্রলীগ একের পর এক নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে বলে জানান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। অপরাধের সকল ঘাটের নিয়ন্ত্রণ এখন ছাত্রলীগ যুবলীগসহ সরকারি দলের নামধারী ক্যাডার মাস্তানদের দখলে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা দল ভারী করতে পেশাদার অপরাধী এমনকি শিশু-কিশোরদেরও নিজেদের দলে ভিড়িয়ে বিপথগামী করছে। পাড়ায়-মহল্লায় স্কুল-কলেজে গড়ে উঠছে নানা গ্রুপ, উপগ্রুপ। এসব গ্রুপের সদস্যরা আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে সংঘাত-সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে। সরকারি দলের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে যেতে পারছে না পুলিশ। ফলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েই চলেছে।
চবিতে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ
চবি সংবাদদাতা জানান, হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে। গতকাল (রোববার) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত শনিবার রাত ৯টায় ছাত্রলীগের ওই দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত তিনজনকে চবি মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হয়। তারা হলেন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শফিকুল ইসলাম মিরাজ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শাওন ও পরিসংখ্যান বিভাগের লিটন রায়। মিরাজ ও শাওন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্তি কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু ও বগি ভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মী বলে জানা যায়। অন্যদিকে লিটন রায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্তি কমিটির সহ-সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও বগি ভিত্তিক সংগঠন সিএফসি গ্রুপের কর্মী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এ বিষয়ে হাটহাজারী থানার ওসি বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, ছাত্রদের মধ্যে সামান্য ঝামেলার কারণে দু’গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে ছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের রয়েছে। আমাদের আসার আগে ছাত্রদের মধ্যে সামান্য ইট-পাটকেল ছুড়াছুড়ি হয়েছে। যদি কেউ অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।