Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আমাজনের বনাঞ্চল-জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে

| প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মানুষ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় আমাজনের অসামান্য গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, বড় ব্যবসা ও ‘ভোগবাদী লোভকে’ পুরো পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রাকৃতিক এলাকাকে ধ্বংসের সুযোগ দেওয়া যাবে না। প্রায় পাঁচ বছরে ধরে পোপের দায়িত্বে থাকার প্রায় পুরোটা সময় পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উচ্চকণ্ঠ ফ্রান্সিস আমাজনের পেরু অংশ সফরের সময় শুক্রবার এসব কথা বলেন বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, খনন ও গাছ কাটার কারণে আমাজনের এ অংশের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখোমুখি। হারাকবাত, এসে-এজাস, আশানিনকাস ও জুনি কুইনের মতো ২০টিরও বেশি আদিবাসী গোষ্ঠীর হাজারও সদস্যের উপস্থিতিতে দেওয়া ভাষণে পোপ বলেন, আমাজনের আদিবাসীরা খুব সম্ভবত এখনকার মত আর কখনোই ভূমি নিয়ে এমন ঝুঁকিতে পড়েননি। পেরুর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আদিবাসীরা এদিন ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পালকের মুকুট পরে পুয়ের্তো মালদোনাদো শহরের একটি ছোট স্টেডিয়ামে পোপের কথা শুনতে জমায়েত হন। কুঁড়েঘরের মত দেখতে স্টেডিয়ামের পুরোটা জুড়ে ছিল বিভিন্ন আদিবাসী ভাষার সমাহার, থেকে থেকে তাদের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলোতে বাজছিল করুণ সুর। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে পোপ বন ধ্বংসের পেছনে জ্বালানি, গ্যাস, কাঠ ও স্বর্ণ লুট করতে চাওয়া ‘বড় ব্যবসায়ীক স্বার্থের চাপের’ কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা এখানকার অধিবাসীদের কথা চিন্তা না করেই অন্য দেশে এখানকার সম্পদ সরবরাহ করতে চায়। মুহুর্মুহু করতালি ও ঢোলের বাদ্যে পোপের এ বক্তব্যকে স্বাগত জানান উপস্থিতরা। ফ্রান্সিসের বক্তব্যে এদিন প্রতিধ্বনিত হয়েছে স্থানীয় অধিবাসীদের ক্ষোভের কথাও; পোপের বক্তব্যের আগে যারা তাদের ‘ভূমিকে ধর্ষণ করা হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। “তারা আমাদের এলাকায় এসেছে আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই; বিদেশিরা যখন মাটি খুঁড়ে, নদীগুলো ধ্বংস করে মৃত্যুর কালো পানিতে পরিণত করে, তখন আমাদেরই সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়,” পোপের উদ্দেশ্যে বলেন হারাকবাত গোষ্ঠীর হেক্টর সুয়েও। পেরুর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এলাকা ‘মাদ্রে দে দিওস’ নামে পরিচিত, স্পেনিশ ভাষার এ শব্দবন্ধগুলোর অর্থ ‘ঈশ্বরের মা’। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে এ এলাকাটি অনিয়ন্ত্রিত সোনার খনি অনুসন্ধান কার্যক্রমের কারণে বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; একই কারণে স্থানীয় নদীগুলোর পারদের মাত্রাও বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে। কাঠ চোরাকারবারি ও মাদক পাচারকারীরা পেরুর আমাজনের অন্যান্য অংশে বিরোধী আন্দোলনকারীদের হত্যা করে চলেছে, বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ নেই এমন আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর ওপর ধারাবাহিক হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে। বৈধ উপায়ে আসা বিদেশি কোম্পানিগুলোরও চোখ পড়েছে কামিসি গ্যাস রিজার্ভের দিকে, যা কাছাকাছি এলাকার কুসকোতে অবস্থিত। পেরুর উত্তরাংশে রাষ্ট্র পরিচালিত একটি পাইপলাইন ফেটেও অনেক জায়গায় তেল উপচে পড়ার খবর পাওয়া গেছে, যা সেসব এলাকাকে দূষিত করে চলছে। “ভোগবাদী লোভের চাওয়া অনুযায়ী পণ্য ব্যবহার করতে পারিনা আমরা। আমরা যা, তা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখা বাসস্থানকে তাদের পরিকল্পনায় ব্যাপক ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে আমাদের,” বলেন পোপ। ১৯৮৫ সালে পোপ জন পল টু-র পেরুর উত্তরাঞ্চলীয় ইকুইতস শহর সফর করার পর এটাই কোনো পোপের প্রথম আমাজন সফর। আর্জেন্টাইন এ পোপ বলেন, তিনি মানুষের কান্না শুনতে পাচ্ছেন। জীবন, পৃথিবী ও সংস্কৃতি রক্ষায় আন্তরিক প্রচেষ্টায় গির্জা ও তার ভূমিকা রাখারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। পোপের এ সফর প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পাবলো কুচজিনস্কির সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে বলে আশা পেরুর আদিবাসী নেতাদের; ভূমির ওপর আদিবাসীদের দাবি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সরকার এগুলো সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে। কুচজিনস্কি ওয়াল স্ট্রিটের সাবেক ব্যাংকার, তার আমলে আমাজনের বনাঞ্চলে খনিজ অনুসন্ধানজনিত খনন বাড়ার অভিযোগ আছে। স্থানীয়রা বলছেন, শহর যত দ্রæত বাড়ছে তার সঙ্গে বাড়তে থাকা সামাজিক সমস্যা নিরসনে পোপের সফর ভূমিকা রাখতে পারে। “এখানে অনেক কিছু প্রয়োজন। প্রতিদিন এখানে বার ও খাবারের দোকান বাড়ছে, বাড়ছে পতিতাবৃত্তি ও অবৈধ খনন। ৩০ বছর আগেও পুয়ের্তো এরকম ছিল না; একজোড়া পায়ে হাঁটার পথ ছিল, কিন্তু আমরা শান্তিতে থাকতাম,” বলেন ৪৪ বছর বয়সী ফুলের দোকানী আলবার্তো ফার্নান্দেজ। বক্তৃতায় পোপ স্থানীয় প্রশাসন ও বিশপকে সহিংসতা এবং মানবপাচারের হাত থেকে তরুণ ও নারীদের রক্ষায় এগিয়ে আসার আহŸান জানান; শিক্ষায় উন্নতি এবং স্থানীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণেও অনুরোধ করেন। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন আদিবাসীরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে জানিয়ে তাদের অবশ্যই রক্ষা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সবশেষে পুয়ের্তো মালাদোনাদোর অধিবাসীদের স্থানীয় কুয়েচুয়া ভাষায় বিদায় জানান পোপ। পরে তাকে আদিবাসী মুকুট ও ট্যাপেস্ট্রি উপহার দেয় স্থানীয়রা। দক্ষিণ আমেরিকা সফরের অংশ হিসেবে পেরুর পর পোপের চিলি যাওয়ার কথা রয়েছে। ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ