Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত আক্রমণের শিকার নাগরিক সমাজ

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বার্ষিক রিপোর্ট

প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১১:৪৯ পিএম | আপডেট : ৪:৪৫ পিএম, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮

নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো ভয়াবহভাবে আইন লঙ্ঘন করছে
ইনকিলাব ডেস্ক : বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা অত্যন্ত সীমিত। এছাড়া রাষ্ট্র, উগ্রপন্থীসহ অন্যান্য বিরাষ্ট্রীয় দ্বিমুখী চাপের মুখে নাগরিক সমাজ। তাদের হত্যা ও হামলার হুমকি দিচ্ছে উগ্রপন্থী গ্রæপগুলো। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ক্রমবর্ধমান হারে হয়রানি ও তাদের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ভিন্ন মতাবলম্বী অথবা সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতে অতিমাত্রায় আইন প্রয়োগ করছে। সমালোচকদের শাস্তি দিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (আইসিটি অ্যাক্ট) ব্যবহার করছে।
৫৭ ধারার স্থানে ডিজিটাল সিকিউরিটিজ অ্যাক্টের খসড়া করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইনে আরো কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা, মানহানি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়াকে এতে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহের ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
গতকাল সারাবিশ্বের মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বাংলাদেশ অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে- রোহিঙ্গা সঙ্কট, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ, তাদের দায়মুক্তি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের অধিকার, শ্রম অধিকার, নারী অধিকার, বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের ভূমিকার বিষয়।
রিপোর্টে বলা হয়, নাগরিক সমাজের প্রতি রয়েছে উগ্রপন্থীদের হত্যা ও হামলার হুমকি। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ক্রমবর্ধমান হারে তাদের হয়রানি করছে এবং নজরদারি চালাচ্ছে। ২০১৭ সালের জুনে বাংলাদেশের প্রথমসারির আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালের প্রতিটি হাড় ভেঙে দেয়ার হুমকি দেয় ইসলামপন্থী নেতারা। প্রকাশ্যে তিনি সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ‘লেডি জাস্টিসের’ মূর্তি সরিয়ে নেয়ার বিরোধিতা করেছিলেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৩০ জন সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ফেব্রæয়ারিতে হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুলকে। ফেসবুকে ছাগলের মৃত্যু নিয়ে একটি পোস্ট দেয়ার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাংবাদিক আবদুল লতিফ মোড়লকে। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে রিপোর্ট করার সময় মিয়ানমারের দু’জন সাংবাদিককে আটক করে পুলিশ। তাদের এক সপ্তাহ পরে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১৭ অক্টোবর কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করে এবং তাদের দেশে ফিরে যেতে দেয়।
ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে ফেব্রæয়ারি ও মার্চে এর নিন্দা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রæপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সেস এবং হিউম্যান রাইটস কমিশন। এসব ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও জবাবদিহিতার ঘাটতি থাকায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
তবে এ বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সরকার। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সফরের জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর এবং অফিস অব দ্য হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস। তাতেও কোনো সাড়া মেলেনি। এতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দায়মুক্তির দীর্ঘ ইতিহাস আছে। তারা ভয়াবহভাবে আইন লঙ্ঘন করছে। এর মধ্যে রয়েছে খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার, নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐ। এই ধারা থেকে তারা ২০১৭ সালেও বেরিয়ে আসেনি। আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সন্দেহজনক উগ্রপন্থিদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখে বিগত বছরেও। তাদের আদালতে হাজির করার আগে দীর্ঘ সময় গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়। নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের মতে, তাদের অনেককে গান-ফাইটে হত্যা করা হয়েছে। এতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐের বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। প্রতিবেদনে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি লাখ লাখ শ্রমিকের অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব শ্রমিক প্রতি বছর দেশে শত শত কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। ২০১৭ সালে এক লাখ নারী পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। তাদের বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়েছেন গৃহকর্মী হিসেবে। অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী অভিযোগ করেছেন তারা খাদ্য স্বল্পতায় ভুগছেন, মানসিক কষ্টে আছেন, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটা জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োজিত করানো অথবা পাচারের সমতূল্য।
প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, এমনিতেই বাংলাদেশে সম্পদের ঘাটতি রয়েছে। তার ওপর মিয়ানমার থেকে আসা কমপক্ষে ৬ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার অপ্রত্যাশিত এক চাপ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের ওপর। মিয়ানমারে নিজেদের বাড়িঘরে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো দ্রæততার সঙ্গে নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে চাপ দিতে আহŸান জানায় বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে ২০১৭ সালে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হামলা ও হুমকি দেয়া হয়েছে। নভেম্বরের মধ্যভাগে রংপুরের ঠাকুরপাড়া গ্রামে হিন্দুদের ৩০টি বাড়িতে হামলা হয়। অগ্নিসংযোগ ও লুট করা হয় মালামাল। ফেসবুকের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে দেয়া গুজবকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী পাহাড়িরা দশকের পর দশক ধরে বৈষম্য, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত, হামলা, উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে। এতে আরো বলা হয়, ‘সাসটেইনেবল কমপ্যাক্ট’-এর অধীনে ২০১৭ সালে নিজেদের প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ছিল রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোন সংক্রান্ত শ্রম আইনের সংশোধন। বলা হয়েছে, বিশ্বে বাল্যবিবাহের সর্বোচ্চ হারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০২১ সাল নাগাদ সরকার ১৫ বছরের কমবয়সী ছেলেমেয়েদের বিবাহ বন্ধ রাখার কথা বলেছে। ১৮ বছরের ওপরে বয়স যাদের তাদের বিয়ের অনুমতি দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রসঙ্গে রিপোর্ট বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার জাতি নিধন অভিযান চালায়। এর নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব ও শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের হাই কমিশনার। ২০১৭ সালে সরকারি বিবৃতিতে বাংলাদেশের মানবাধিকারের রেকর্ডের বিষয়ে দৃশ্যত অনেকাংশে নীরবতা অবলম্বন করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সময়ে তারা বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে অবস্থান নিরাপদ করেছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার সহায়তা দিয়েছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বৃটিশ সরকার। নভেম্বরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতি নিধনের নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। তিনি এ সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সূত্র : ওয়েবসাইট।



 

Show all comments
  • জাহিদ ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:২৯ এএম says : 1
    বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • N i ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ৮:৩৫ এএম says : 0
    Mot pokaser sadinota nai takle deser upor bpod aste pare.".gaye manena apni murol "
    Total Reply(0) Reply
  • Junaed Hasan Shimul ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:২৫ পিএম says : 0
    তাদের শুধু রিপোর্ট ছারা অন্য কোন ক্ষমতা নেই। কি লাভ তাতে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rahman Lutfor ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:২৬ পিএম says : 0
    Right
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ