পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু আজ
ঈমান, আমল ও আখলাকের ওপর দেশী-বিদেশী বুর্জুগ আলেম ওলামা ও মাওলানাদের আ’ম বয়ান এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আজ বাদ ফজর শুরু হয়েছে মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার ৫৩তম আসরের দ্বিতীয় পর্ব। আজ শুক্রবার অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার ২১ জানুয়ারি রোববার জোহরের নামাজের পূর্বে যে কোন এক সময় আখেরী মোনাজাতের পরই সমাপ্তি ঘটবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার। শীতের তীব্রতা কিছুটা কম হলেও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ ইতোমধ্যে ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দিতে লাখ লাখ মুসল্লিদের স্রোত গত বুধবার বিকাল থেকে শুরু হয়েছে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরস্থ বিশাল ময়দানের দিকে। তারা রেলপথ, সড়ক পথ, নৌ-পথ এবং যানজট এড়াতে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে অনেকে পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে সমবেত হচ্ছেন। টঙ্গীর যেদিকে চোখ যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবী পড়া মুসল্লিদের দেখা মেলে। ইবাদাত-বন্দেগীর মোক্ষম সময় হৃদয়ে ধারণ করে মুসল্লিদের স্রোত টঙ্গী অভিমুখে বেড়েই চলছে। গত পর্বের ন্যায় এবারো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সমাগমের স্রোত শিল্প শহর টঙ্গীর ৪বর্গ কিলোমিটার জুড়ে যেন জনসমুদ্রে পরিণত হতে চলেছে। এ স্রোত থাকবে আখেরী মুনাজাতের আগ পর্যন্ত। ইতিমধ্যে ময়দানে আগত কয়েক লাখ মুসল্লি তাদের নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল রয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা আলাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদত বন্দেগি আর কোরআন হাদিসের আলোচনায় এখন বিশ্ব ইজতেমার বিশাল প্যান্ডেলে পবিত্র ধর্মীয় আবহাওয়া বিরাজ করছে। আজ ইজতেমা ময়দানে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার জন্য পুরো ময়দানকে জেলা ওয়ারি ২৮ টি খিত্তায় সাজানো হয়েছে।
বিশ্বের শতাধিক বিদেশী রাষ্ট্রের মেহমানসহ ১০/১২ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশ নেবেন বলে আয়োজকদের ধারণা। দেশী-বিদেশী ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরামগণ ছয় উসুল যথা-ঈমান, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমীন, তাসহীহে নিয়ত, দাওয়াত ও তাবলীগ সম্পর্কে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক মূল্যবান বয়ান রাখবেন। মূল বয়ান সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ভাষাভাষিদের মাঝে তরজমা করে শোনানো হবে। আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ান শুরু হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই খিত্তায় অবস্থানকারী মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান শুরু হয়েছে। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় দেশি-বিদেশি মুরব্বিরা বিভিন্ন ভাষায় পর্যায়ক্রমে আম ও খাস বয়ান করবেন। আগত মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে বয়ান শোনার জন্য পুরো মাঠে শব্দ প্রতিধ্বনি রোধক প্রায় ১৮০টি বিশেষ ছাতা মাইকসহ ৪৯০ মাইক স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা তুরাগ নদীতে ৭টি ভাসমান পন্টুন সেতু নির্মিত রয়েছে।
ইজতেমাকে সামনে রেখে ১৬০ একর ময়দানে তৈরী সুবিশাল সামিয়ানার নিচ ঝাড়-মুছ করা, ছিড়ে যাওয়া, খসে পড়া চট ঠিক করে বাধাসহ নতুন করে সাজানো হয়েছে পুরো ময়দানকে। এছাড়াও বিদেশী মেহমানদের আবাসন কামরা, ইজতেমার আয়োজক তাবলীগ জামাতের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কামরা, প্রথম পর্বের লাখো মুসল্লির ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট, ময়দানের চারপাশে তৈরি করা হাজার হাজার কাঁচা-পাকা শৌচাগার, ওজু-গোসল ও রান্না-বান্নার স্থান ধুয়ে মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে, ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও ইতিমধ্যে তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েয়েছেন। যাতে দ্বিতীয় পর্বে যোগ দেওয়া মুসল্লিদের নিরবচ্ছিন্ন ইবাদত বন্দেগীতে কোন প্রকার ব্যাঘাত না ঘটে।
গতকাল ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা যায়, ইজতেমা ময়দানে লাখো মুসল্লির সমাগমকে কেন্দ্র করে টঙ্গী, উত্তরা, তুরাগ, কামারপাড়া, আব্দুল্লাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভাসমান দোকানপাট ও হোটেল-রেস্তোরাঁ। এসব দোকানপাটে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য রাখা হচ্ছে দুই-তিন গুন। এতে এলাকাবাসী ও ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা এসব জুলুমবাজদের নিয়ন্ত্রনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
দ্বিতীয় পর্বে খিত্তাওয়ারি মুসলিদের অবস্থান
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় মুসুল্লিদের অংশ নেয়ার জন্য জেলাওয়ারি পুরো প্যান্ডেলকে ২৮টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এতে ১৬টি জেলার মুসুল্লিগন অংশ নেবেন। খিত্তা অনুয়ায়ি এসব জেলা গুলো হচ্ছে, ১নং খিত্তায় ঢাকা-০১, ২ নং খিত্তায় ঢাকা-০২, ০৩ নং খিত্তায় ঢাকা-০৪, ৪ নং খিত্তায় ঢাকা-১৯, ৫ নং খিত্তায় ঢাকা-২০, ৬ নং খিত্তায় ঢাকা-২১, ৭ নং খিত্তায় ঢাকা-০৩, ৮ নং খিত্তায় ঢাকা-২৩, ৯ নং খিত্তায় ঢাকা-২২, ১০ নং খিত্তায় ঢাকা-০৬, ১১ নং খিত্তায় জামালপুর-০১, ১২ নং খিত্তায় জামালপুর-০২, ১৩ নং খিত্তায় ফরিদপুর, ১৪ নং খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ১৫ নং খিত্তায় ঝিনাইদহ, ১৬ নং খিত্তায় ফেনী, ১৭ নং খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ১৮ নং খিত্তায় ঢাকা-০৭, ১৯ নং খিত্তায় ঢাকা-০৫, ২০ নং খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা, ২১ নং খিত্তায় কুমিল্লা-০১, ২২ নং খিত্তায় কুমিল্লা-০২, ২৩ নং খিত্তায় রাজশাহী-০১, ২৪ নং খিত্তায় রাজশাহী-০২, ২৫ নং খিত্তায় খুলনা-০১, ২৬ নং খিত্তায় ঠাকুরগাঁও, ২৭ নং খিত্তায় খুলনা-০২ ও ২৮ নং খিত্তায় পিরোজপুর জেলার মুসুল্লিগন অবস্থান নেবেন।
এদিকে, দু’পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় রাজধানীসহ ঢাকাসহ মোট ৩৩টি জেলার মুসুল্লিগন অংশ গ্রহণের সুযোগ থাকলেও খোদ গাজীপুরসহ বাকি ৩১টি জেলার মুসুল্লিগণ এবারের বিশ্ব ইজতেমায় শামিল হতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে ইজতেমা মাঠে দায়িত্বে নিয়োজিত আয়োজক কমিটির অন্যতম মুরুব্বি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, মাঠে মুসুল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং মুসুল্লিদের অংশ গ্রহণের সুবিধার্থে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় ৬৪ জেলার মধ্যে শুধুমাত্র ৩২টি জেলার মুসুল্লিগণকে দুই পর্বের ইজতেমায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। বাকি ৩২টি জেলার মুসুল্লিগন আগামি বছর ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমায় অংশ গ্রহণের সুযোগ থাকছে।
মুসলিল্লদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য টঙ্গী সরকারী হাসপাতালসহ ৪টি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প, হৃদরোগ ইউনিট, বক্ষব্যাধি/এ্যাজমা ইউনিট, ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সসহ চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রথম পর্বের মতই অব্যাহত থাকবে। কিন্ত সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধপত্র না থাকায় বা না পাওয়ায় মুসল্লিরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বলে একাধিক মুসল্লি জানান। বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য স্থাপিত ৪৫টি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আসা মুসল্লিদের মহাসড়ক পারাপারের স্টেশনরোডের ফুটওভার ব্রীজটিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে অন্ধ, ল্যাংড়া, বাক প্রতিবন্ধী, শারীরিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত দরিদ্র ভিক্ষুকের পাশা-পাশি এক শ্রেণীর মৌশুমী ভিক্ষুকদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা যেভাবে পরিচালিত হয়েছে একইভাবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমাও পরিচালিত হবে বলে ইজতেমা পরিচালনা কমিটিসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী র্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়। তাদের মাধ্যমে জানা যায়, ৬ স্তুরের নিরাপত্তায় এপর্বেও ময়দান ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ, র্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৮ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ময়দানের নিরাপত্তা বিধানে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। মুসল্লিদের জন্য ১৩ টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। বিদেশি মেহমানখানায় ও ইজতেমা আয়োজকদের রান্না বান্নার জন্য ১৩৬ টি চুলা এবং সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১৩২ কেভি সোর্স, ফিডার লাইন, বিতরণ কেন্দ্র, ট্রলি ট্রান্সফরমার, জেনারেটরসহ ডেসকোর কর্মীরা অনবরত দায়িত্ব পালন করছেন। মুসল্লিদের পঁচা-বাসি খাবার সরবরাহ রোধে এ পর্বেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করবে। গত দুদিনের শৈতপ্রবাহকে উপেক্ষা করে প্রতিটি বাসাবাড়িতে ইজতেমা উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মেহমানদের আপ্যায়নে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে বাসাবাড়ির গৃহবধূ থেকে শুরু করে বাড়ির মা, বোনদের। এ উপলক্ষে প্রতিটি ঘরে বিভিন্ন রং-বেরঙের রান্নার ধুম পড়েছে। রান্না-বান্নাকে কেন্দ্র করে অনেক বাড়ির ভাড়াটিয়াদের মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। কে কার আগে রান্না করে মেহমানদের আপ্যায়ন করবে।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বী প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, ইজতেমার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিরা ময়দানে স্ব-স্ব খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। শুক্রবার ফজর নামাজের পূর্বেই জামাতবদ্ধ মুসলিরা ময়দানে উপস্থিত হবেন। ইনশাআল্লাহ, আশা করি আল্লাহর রহমতে এপর্বটিও নির্বিঘেœ ইজতেমা শেষ হবে।
বৃহত্তম জুমার জামাত : আজ শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জুমার জামাতে অংশ নিতে তিনদিনের ইজতেমায় আগত মুসল্লীগণ ছাড়াও ঢাকা ও গাজীপুরসহ আশপাশের জেলার আরো কয়েক লাখ মুসল্লী ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।