পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ‘মা’ কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই/ ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই’। মায়ের চেয়ে মানুষের আপন কেহ নেই। হায়রে রাজনীতি! সেই মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীর দিনে আদালতে হাজিরা দিতে হলো বেগম খালেদা জিয়াকে।
রাজনীতি মানুষের ব্যাক্তি জীবনের আবেগ অনুভূতি সব কিছুকেই যেন ‘নাই’ করে দেয়। গতকাল ছিল বেগম খালেদা জিয়ার জন্য বিশেষ দিন। ২০০৮ সালের এই দিন তাঁর গর্ভধারিনী মা তৈয়বা মজুমদার ইন্তেকাল করেন। তখন তিনি ছিলেন কারাগারে। মায়ের দশম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনেও আদালতে যেতে হয় তাকে।
আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে খালেদা জিয়ার পক্ষ্যে আদালতে মামলার কার্যক্রম এক দিনের জন্য স্থগিতের আবেদন করা হয়। এ উপলক্ষে একদিনের জন্য ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি পেলেও দুর্নীতির দুই মামলার কার্যক্রম স্থগিত না করায় হাজিরা দিতেই হয় খালেদা জিয়াকে।
ওয়ান ইলিভেনের পর সেনাসমর্থিত ফখরউদ্দীন-মঈনউদ্দীন সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বিশেষ জেলে আটক। তার দুই ছেলেও কারাবন্দি। হঠাৎ খালেদা জিয়ার খবর পান মমতাময়ী মা তৈয়বা মজুমদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। তখন কারাগারের ভিতরে মায়ের জন্য গুমরে কেঁদেছেন। নানা দেনদরবারের পর ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকারের নীতি নির্ধারকদের মন গলে। তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের লাশ দেখেন। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর প্রহরায় মায়ের কফিনে হাত দিয়ে অঝোরে কাঁদেন। অন্যদিকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মহানগরীর আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত জানাজা নামাজে শরিক হন বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো। মা তৈয়বা মজুমদারের লাখ দেখার সময় দুই পুত্রকে তাকে দেখতে দেয়া হয়নি। তাকে পুরনায় কারাগারে নেয়ার পর তারেক ও আরাফাতকে নানীর লাশ দেখতে দেয়া হয়।
১৯২০ সালে ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তৈয়বা মজুমদার। মরহুমা তৈয়বা মজুমদারের তিন মেয়ের মধ্যে বড়জন সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী খুরশিদ জাহান হক ২০০৭ সালে ইন্তেকাল করেন। বড় ছেলে মেজর (অব.) সাইদ এস্কান্দারও ইন্তেকাল করেছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ভোটারবিহীন নির্বাচনের এক বছর পর জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে ২০১৫ সারের ৫ জানুয়ারী সমাবেশে যেতে বাঁধা দেয়ার প্রতিবাদে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন বেগম জিয়া। উত্তাল হয়ে উঠে দেশ। সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। তাঁকে তিন মাস গুলশানের অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। অফিসের খাবার বন্ধ করে দেয়া হয় এবং বিদ্যুৎ-পানি ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ওই লাগাতার অবরোধের মধ্যেই ২৫ জানুয়ারি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। পরদিন কোকোর লাশ ঢাকায় আনা হলে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ কোকোকে এক নজর দেখার জন্য হাজির হন। কোকোর লাশ গুলশান অফিসে আনা হলে অবরুদ্ধ মা খালেদা জিয়া ছেলের লাশ দেখে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। লাখো মানুষের শ্রদ্ধা-ভালবাসায় ২৭ জানুয়ারি বনানী কবরস্থানে কোকোর লাশ দাফন করা হয়। শুধু কি তাই! ২০০৯ সালের মে মাসে ৪০ বছরের স্বামীর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ছাড়া হয়ে বেগম জিয়া উঠেন গুলশানের ভাড়া বাসায়। ক্যান্টনমেন্টের বাসা ছেড়ে আসার সময় খালেদা জিয়া অঝোরে কেঁদেছেন। সবগুলোই বেগম জিয়ার করুণ স্মৃতি। এই স্মৃতিগুলো এখনো বেগম খালেদা জিয়াকে কাঁদায়। এসব স্মৃতি কি খালেদা জিয়া ভুলে যেতে পারেন?
বিএনপি সুত্রে জানা গেছে বেগম খালেদা জিয়া নিজ বাসায় মায়ের মৃত্যু বাষির্কী পালন করেছেন সাদামাটাভাবে। ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলাওয়াত করেছেন এবং মায়ের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেছেন। দুপুরে আদালতে গেছেন। আদালত থেকে ফিরে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাসায় আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।