Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রের মসজিদগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা সহায়তার উদ্যোগ

হাউস্টন ক্রনিকল | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

তাদের দেখা হয় র‌্যালের ইসলামী সমিতির তিন তলায় একটি সম্মেলন কক্ষে- তাদের একজন থেরাপিস্ট ও মানসিক ধকল বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মসজিদের এক সদস্য। জানালাবিহীন একটি কক্ষে একটি টেবিল ঘিরে তারা প্রায় এক ঘন্টা কথা বলেন। এ সময় থেরাপিস্ট বাইরের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলো দেখলেন যারা বিবাহ সমস্যা, শিশুদের আচরণ সমস্যা, মানসিক চাপ, নেশাজনিত দুর্ব্যবহার ও অন্যান্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সহায়তা দিতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বহু মুসলিমই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পেশাদারদের কাছে যেতে অনিচ্ছুক, কারণ মানসিক অসুস্থতা সংশ্লিষ্ট লজ্জা বা একজন পশ্চিমা-প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট তাদের ধর্ম বা সংস্কৃতি বুঝতে পারবেন না বলে ভীতি। পরিবর্তে তারা ইমাম বা অন্য সমাজ নেতাদের দ্বারস্থ হন যারা প্রায়ই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসকদের কাছে পাঠান। কিন্তু র‌্যালে মসজিদ, যেখানে সপ্তাহে হাজার হাজার মুসল্লি নামায আদায় করেন, সে মসজিদের নেতারা উপলব্ধি করেন যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি আরো পেশাদারিত¦ পর্যায়ে ও সংগঠিত ভাবে দেখা প্রয়োজন। এ ধরনের অনুরোধ মসজিদের দু’জন ধর্মীয় নেতার মধ্যে ভাবনার সৃষ্টি করেছে। প্রশিক্ষিত মুসলিম ইমাম ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ বিষয়ক উদ্যোগের অন্যতম নেতা আজলিনা আজহার বলেন, আমাদের ইমামরা প্রতি সপ্তাহে শত শত অনুরোধ পাচ্ছেন। এ্টা তাদের জন্য বেশি চাপ সৃষ্টি করছে। মানুষ ধীরে হলেও উপলব্ধি করছে যে তাদের যদি কোনো আলেমের পরামর্শ নাও প্রয়োজন হয় তারা টিমের কাছে আসতে পারে এবং কারো সাথে কথা বলতে পারে। এক বছর আগে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি গ্রæপ , যারা মসজিদের সদস্যও, স্বেচ্ছাসেবা দিতে রাজি হন। সদস্যরা অনলাইনে গিয়ে বিনামূল্যে ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে একজন ফ্যামিলি থেরাপিস্ট, একজন ইমাম ও একজন নেশাজনিত দুর্ব্যবহার বিষয়ক পরামর্শক সহ ৬ জন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কারো সাথে কথা বলতে পারেন।
এই পরামর্শ প্রদানের উদ্যোগ শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বর থেকে এবং তা দেশব্যাপী আমেরিকান মুসলিমদের প্রয়োজন পূরণের সামাজিক সেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদার অঙ্ক যা কখনোই জোরদার ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমনরা বর্ণগত ভাবে ও জাতিগোষ্ঠিগত ভাবে বৈচিত্রমন্ডিত। তাদের প্রায় ৬০ শতাংশের জন্ম বিদেশে। তারা সংখ্যালঘুÑ মার্কিন জনসংখ্যার মাত্র ১.১ শতাঙ্ক। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে তারা হামলা ও ভীতি প্রদর্শনের শিকার। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয়তাবাদী বাগাড়ম্বর যা অভিবাসীদের ‘অন্য’ বলে আখ্যায়িত করেছে, তাদের মধ্যে নিপীড়িত, হয়রানির শিকার হওয়ার অনুভ‚তি সৃষ্টি করছে এবং অন্যভাবে সন্দেহজনক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
মুসলিম মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও মুসলিম মানসিক স্বাস্থ্য জার্নালের সম্পাদক মনোচিকিৎসক ও ¯œায়ু চিকিৎসক ডা. হামাদা হামিদ আলতালিব বলেন, এখনো এ রকম অবরুদ্ধ থাকার মত সমন্বিত উপলব্ধি রয়েছে।
ফিলাডেলফিয়ার মুসলিম কল্যাণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি কামিলাহ মুমিন রাশাদ বলেন, বহু মুসলমানই অভ্যন্তরীণ সহিংসতা ও আচরণগত বিষয়ে বাইরের লোকদের সাথে কথা বলতে সতর্ক এ ভয়ে যে তা সার্বিকভাবে ধর্মের প্রতি খারাপ ধারণার সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, কমিউনিটির বাইরে এ সব চ্যালেঞ্জ শেয়ার করার ব্যাপারে দোটানা মনোভাব আছে, কারণ তা বাঁধা ধরা ধারণাকে জোরদার করে যে আমরা কে সে ব্যাপারে পাল্টা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার চেষ্টা করছি।
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ^বিদ্যালয়ে মুসলিম মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ইসলামী মনস্তত্তে¡র মহিলা পরিচালক হিদার লেয়ার্ড বলেন, মসজিদের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান সেবার ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি আচ্ছাদনও প্রদান করতে পারে।
লেয়ার্ড ক্রমবর্ধান সংখ্যক মুসলিমদের একজন যারা মাানসিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা গ্রহণে ইচ্ছুকদের উৎসাহিত করতে কাজ করছেন। আগামী মাসে ‘মুভিং টুওয়ার্ড ডিফাইনিং এন ইসলামিক সাইকোলজি’ শীর্ষক এক সম্মেলনের আয়োজন করেছেন তিনি যাতে তার ভাষায় ‘ইসলামী মনস্তত্তে¡র কার্যকরী সংজ্ঞা প্রণয়নে ইসলামী পন্ডিত ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যোগ দেবেন।
লেয়ার্ড সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসরত মুসলিল্লদের জন্য একটি ২৪ ঘন্টা মানসিক স্বাস্থ্য হটলাইন তৈরির জন্য কাজ করছেন। তিনি আরো কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, চিকিৎসা ও র্পরামর্শের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে সাংস্কৃতিক সামঞ্জস্যপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান।
তিনি বলেন, আমাদের সম্প্রদায়ের বহু আন্তঃপ্রজন্মগত ট্রমা রয়েছে। বহু বিষয় রয়েছে যেগুলো সমাধানের কোনো ব্যবস্থা হয়নি যেমন মানসিক অবসাদ, বিবাহ সম্পর্কিত বিষয়, তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যা, এলজিবিটি যৌনবৈশিষ্ট্য ইত্যাদি। তিনি বলেন, আমাদের সমাজ দুর্ভোগের শিকার।
লস এঞ্জেলেসে ইসলামিক সোসাইটি অব ওয়েস্ট ভ্যালিতে রিসার্চ স্কলার ও ইউসিএলএ-তে ইমাম শেখ সুহাইল বলেন, এ ধরনের সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা জটিল, কারণ মুসলমানরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চাইবে না যদি তাদের মধ্যে ভয় থাকে যে এতে তাদের ধর্মীয় পরিচয় হুমকিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
তিনি বলেন, উদাহরণ স্বরূপ একজন হিজাব পরিহিত মহিলা সাইকোথেরাপি প্রত্য্শাী। তিনি চাইবেন না যে তাকে বলা হোকÑ আপনার হিজাব খুলে ফেলা প্রয়োজন। আপনাকে মিশে যেতে হবে ও অন্যদের মত হবে হবে। তাহলেই আপনি একটি চাকরি খোঁজার যোগ্য হবেন।
এ বছর মুল্লাহ ্লস এঞ্জেলেসে খলিল সেন্টারের একটি শাখা খোলার আশা করছেন। খলিল সেন্টার হচ্ছে একটি ক্লিনিক যারা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে ধর্ম ভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে যার শিকড় নিহিত রয়েছে মনোবিজ্ঞানে।
নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়াতে খলিল সেন্টারের তিনটি শাখা রয়েছে। আরো তিনটি শাখা আছে শিকাগোতে। অন্যান্য জায়গা, যেমন ডেট্রয়েটে ইসলামিক সার্কল অব নর্থ আমেরিকা মুসলিম ফ্যামিলি সার্ভিস নামে একটি কর্মসূচি শুরু করেছে। এতে কাউন্সেলিং করা হয়।
এ ছাড়া রয়েছে মুসলিম ইমামদের মডেল যারা বিশ^বিদ্যালয়, হাসপাতাল, জেলখানা ও সামরিক বাহিনীতে চাকুরি করেন। কাউকে কাউকে ইমামের সহকারী হিসেবে কাজ করার জন্য নেয়া হয়। মুসলিম মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টি্িটউট মুসলিম অনুশীলনকারীদের একটি নির্দেশিকা সঙ্কলন করছে। র‌্যালে মসজিদের পরামর্শ কর্মসূচির এক স্বেচ্ছাসেবক জেমস এম. লিয়ন বলেন, স্বধর্মী মুসলিমদের সাহায্য করতে পেরে ভালো লাগে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্রের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ