Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্বায়নে নেতৃত্ব দিতে নিজের ত্রুটি সারাতে হবে চীনকে : আইএমএফ

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকতে হলে চীনকে তাদের নিজস্ব ভুল-ত্রুটিগুলো শোধরাতে হবে। বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নানা সীমাবদ্ধতা কমাতে উদ্যোগী হতে হবে দেশটিকে। গত সোমবার হংকংয়ে আয়োজিত এশিয়ার ফিন্যান্সিয়াল ফোরামে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রথম উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড লিপটন জানান, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নীতিমালাভিত্তিক বর্তমান ব্যবস্থা অনুযায়ী চীন নেতৃত্বের দাবি জানাতে পারলেও দেশটিকে এ অবস্থান পেতে আরো কাজ করতে হবে। লিপটন বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। পাশাপাশি সেই নেতৃত্বের নিজস্ব ঘাটতি চিহ্নিতকরণ ও সমাধানেরও সদিচ্ছা থাকতে হবে। অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি অধিকারের সুরক্ষা ও শিল্পনীতির বিকৃতি, অতিসক্ষমতা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার মতো নীতিমালাগুলো হ্রাস করতে হবে। চীনের অ্যালুমিনিয়াম শিট রফতানি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যবিষয়ক ট্রাইব্যুনালের এক রায়ের কয়েক দিন পরেই আইএমএফের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব কথা বলেন। এ ট্রাইব্যুনালের সা¤প্রতিক দেয়া প্রাথমিক রায়ে বলা হয়েছে, চীন থেকে আমদানিকৃত অ্যালুমিনিয়াম শিটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এ বাণিজ্যযুদ্ধ চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে অন্যতম হুমকি হয়ে উঠবে। আগামী সপ্তাহে দাভোসে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে অংশ নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেও তিনি বিশ্বায়ন নিয়ে তার সমালোচনা অব্যাহত রাখবেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে নতুন নতুন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দেবেন। অন্যায্য বাণিজ্যচর্চার অভিযোগ এনে চীনের বিরুদ্ধে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। অ্যালুমিনিয়ামের ইস্যুটি এর মধ্যে একটি। এ ধাতব পণ্য আমদানিতে শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের বিষয়েও ভাবছে হোয়াইট হাউজ। দেশের আর্থিক খাতকে আরো স্থিতিশীল করতে চীনের প্রচেষ্টা বাড়ানো উচিত বলে জানিয়েছেন লিপটন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সমন্বিত ও টেকসই প্রবৃদ্ধি এনে দেবে এমন অর্থনৈতিক সংস্কারে গতি আনার অনেক সুযোগ রয়েছে চীনের সামনে। স¤প্রতি চীনের আর্থিক খাত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ সংস্কারের জায়গায় অনেকটাই অগ্রগতি অর্জন করেছে দেশটি। তবে এ আর্থিক স্থিতিশীলতা দেশটির অসাধারণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিকে যাতে দুর্বল না করে দেয়, তা নিশ্চিত করতে সংস্কারের প্রচেষ্টাকে টেকসই করে তুলতে হবে। অর্থনীতিবিদদের হিসাবে দেখা গেছে, ২০২২ সালের মধ্যে ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৩২০ শতাংশের বেশিতে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে চীন। বøুমবার্গ টেলিভিশনকে দেয়া এক পৃথক সাক্ষাৎকারে আইএমএফের অর্থনীতিবিদ লিপটন বলেন, ঋণের ক্ষেত্রে চীনের নীতিনির্ধারকরা ‘সঠিক নির্দেশনার’ মধ্যে রয়েছেন। চীনের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় এটি দেশটির অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও আশাবাদ প্রকাশ করেন লিপটন। আগামী সপ্তাহে বৈশ্বিক অর্থনীতি বিষয়ে নতুন পূর্বাভাস প্রকাশ করতে যাচ্ছে আইএমএফ, যার পরিপ্রেক্ষিতে লিপটন বলেন, ‘বিশ্বের সব অঞ্চলে দ্রুততম প্রবৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর দীর্ঘ ও ক্রমপুনরুদ্ধারের সর্বশেষ প্রান্তে রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো থেকে সংকট প্রায় চলেই গেছে। তবে কতদিন পর্যন্ত এ সুসংবাদগুলো অব্যাহত থাকবে তা নিশ্চিত না।’ লিপটন সতর্ক করে বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির এই সেরা পারফরম্যান্স ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়তে পারে। এছাড়া মুদ্রানীতিমালায় অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন অথবা মুদ্রাবিনিময় হারে অতিরিক্ত ওঠানামা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এতে হঠাৎ করে পুঁজির বহির্গমনের আশঙ্কা করছেন তিনি। সেই সঙ্গে মজুরি ও উৎপাদনশীলতায় দুর্বল প্রবৃদ্ধিও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন লিপটন। লিপটন আরো বলেন, আমাদের কথা স্পষ্ট, টেকসই প্রবৃদ্ধিতে হুমকি হয়ে উঠতে পারে এমন সংকট ও কাঠামোগত ইস্যুগুলো সমাধান করারই সময় এখন। চক্রাকার পুনরুদ্ধার খুব বেশিদিন অর্থনীতির হাল ধরে রাখতে পারে না। তাই এখনই শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বøুমবার্গ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ