Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাত্তাই পেল না জিম্বাবুয়ে

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইমরান মাহমুদ, মিরপুর থেকে : আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে কেটে গেল হতাশার কুয়াশা। সেই আলোর আভায় রেঙেছে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটও। প্রায় দেড় বছর পর দেশের মাটিতে ওয়ানডে খেলতে নেমে বাংলাদেশ পেল দাপুটে জয়। ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পেল না জিম্বাবুয়ে!
৮ বছর পর ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজ। আলোটা স্বভাবতই ছিল বাংলাদেশের দিকে। শুরুটাও হয়েছে বেশ। গতকাল মিরপুরে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেটাও ১২৯ বল হাতে রেখে! কুয়াশার কারণে টস জিতে ফিল্ডিং নেন স্বাগতিক অধিনায়ক মাশরাফি। তার সিদ্ধান্তকে বিফলে যেতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। মাশরাফি-সাকিব-মুস্তাফিজ-রুবেলদের বোলিং তোপে মাত্র ১৭০ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। জবাবে তামিম ইকবালের ধৈর্য্যশীল ব্যাটিংয়ে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ২৮.৩ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় মশরাফির দল। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত খেলা সাকিব আল হাসান হয়েছেন ম্যাচসেরা।
লক্ষ্যটা মামুলি। সেই ছোট টার্গেট তাড়া করতে নেমে ঝড়ো শুরু করেন তামিম-বিজয়। তমিমের ওপেন জুটি হয়ে তিন বছর পর খেলতে নামা বিজয় ফিরে যান ঝড়ো শুরুর পরই। সিকান্দার রাজার বলে অরভিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তার ১৪ বলে ১৯ রানের ইনিংসটি ৪টি চারে সাজান। তিনে নামবেন সাকিব, আগেই জানা গিয়েছিল। সেই পরীক্ষাতেও সফল বাংরাদেশ টিম ম্যানেজম্যান্ট। ক্রিজে যতক্ষণ ছিলেন বন্ধুকে দারুণ সঙ্গ দেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। তাদের জুটিতে মাত্র ১৭.২ ওভারেই ৬৮ মিনিটের ইনিংসে ১০৬ বলে ১০০ ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। সেই সিকান্দারের বলে এলবিডবিøউ হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ৪৬ বলে ৫ চারে ৩৭ রানের মারমুখী ইনিংস খেলেন সাকিব। এই বাঁহাতি ফিরে গেলেও অবিচল ছিলেন আরেক বাঁহাতি ওপেনার তামিম। তুলে নেন নিজের ৩৯তম ওয়ানডে ফিফটি। মুশফিককে নিয়ে যখন তীরে ভিড়িয়েছেন জয়ের তরী, ততক্ষণে নামের পাশে ঝলমলে ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থেকে ৯৩ বলের ইনিংসটি সাজান ৮টি চার ও একটি দর্শণীয় ছক্কায়। মুশফিক ছিলেন ১৪ রানে।
এর আগে শেরে বাংলা সেটডিয়ামে একশ রান তুলতেই ৫ উইকেট খুইয়ে বসে জিম্বাবুয়ে। তিনটি সহজ ক্যাচ না ছাড়লে আরো বিপর্যয় হতে পারতো সফরকারীদের। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ইনিংস শুরু করেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এসেই জোড়া আঘাত। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ঘূর্ণিতে শূন্য হাতে ফিরে যান জিম্বাবুয়ের ওপেনার সলোমন মির ও ক্রেইগ আরভিন। দলীয় মাত্র ২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে যাওয়া জিম্বাবুয়েকে পরবর্তীতে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার হ্যামিল্টন মাসকাদজা ও সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে দলের স্কোর বড় করছিলেন তারা। কিন্তু ২৮ রানের এই জুটিকে বড় হতে দেননি মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২টি চারে ২৪ বল মোকাবেলায় ১৫ রান করা মাসাকাদজাকে ফিরিয়ে দিয়ে জুটি ভাঙ্গেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
মাসাকাদজা ফিরে যাবার পর নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি টেইলরও। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম শিকার হবার আগে ২৪ রান করেন টেইলর। ফলে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৫১। এ অবস্থায় জিম্বাবুয়ের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম। সাকিবের সাথে বোলিং উদ্বোধন করা সানজামুল ১৩ রানে থাকা ম্যালকম ওয়ালারকে শিকার করেন। ওয়ালারের পর পিটার মুরকে নিয়ে জিম্বাবুয়ের পালে রানের হাওয়া যোগান গত মাসে বিপিএল খেলা সিকান্দার রাজা। এই দু’জনের জুটি কিছুটা চিন্তার কারণে হয়ে দাঁড়ায় টাইগারদের জন্য, পেরিয়ে যায় শতরান।
যক্ষের ধনের মত একদিক আগলে রাখা অবশেষে ভাঙে সেই দেয়াল। নাসিরের বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়েই দ্রæত এক রা নেয়ার চেষ্টায় ছিলেন এই মিডল অর্ডার। তবে তার আগেই সেখান থেকে বল কুড়িয়ে মুশফিকের হাতে তুলে দেন সাকিব, মুশফিকও ভেঙে দেন উইকেট। ৫২ রানে সিকান্দার ফিরে যাবার সময় সফরকারীদের সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ১৩৫। তার ৯৯ বলের ইনিংসে ২টি করে চার ও ছক্কায় মোড়ানো। সেখান থেকে দলীয় ইনিংসে আর মাত্র ৩৫ রান যোগ করতে পারেন বাকি ৪ ব্যাটসম্যান। বলতে হেলে শেষ ৯ রানেই ব্যবধানে সফরকারীদের শেষ ৪ উইকেট তুলে নেন সাকিব-রুবেল ও মুস্তাফিজ। এছাড়া জিম্বাবুয়ের পক্ষে মুর ৩৩, টেইলর ২৪, ক্রেমার ১২, ওয়ালার করেন ১৩ রান। তখনও বাকি ছিল এক ওভার। ৩ উইকেট নিয়েছেন সকিব, দুটি করে শিকার রুবেল-মুস্তাফিজের এবং একটি করে একটি মাশরাফি-সানজামুলের। রকেট ত্রিদেশীয় সিরিজের অপর দল শ্রীলঙ্কা।
স্কোর কার্ড
ত্রিদেশীয় সিরিজ, ১ম ওয়ানডে
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, মিরপুর
টস : বাংলাদেশ
জিম্বাবুয়ে ইনিংস রান বল ৪ ৬
মাসাকাদজা ক মুশফিক ব মাশরাফি ১৫ ২৪ ২ ০
সলোমন স্ট্যাম্প মুশফিক ব সাকিব ০ ০ ০ ০
অরভিন ক সাব্বির ব সাকিব ০ ২ ০ ০
টেইলর ক মুশফিক ব মুস্তাফিজ ২৪ ৪৫ ২ ০
সিকান্দার রানআউট (সাকিব/মুশফিক) ৫২ ৯৯ ২ ২
ওয়ালার ক সাব্বির ব সানজামুল ১৩ ৩০ ১ ০
পিটার মুর বোল্ড রুবেল ৩৩ ৫৮ ২ ০
ক্রেমার ক রুবেল ব সাকিব ১২ ২০ ০ ০
জারভিস অপরাজিত ৪ ১০ ০ ০
চাতারা বোল্ড রুবেল ০ ১ ০ ০
মুজারাবানি বোল্ড মুস্তাফিজ ১ ৫ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ৫, ও ১১) ১৬
মোট (অলআউট, ৪৯ ওভার) ১৭০
উইকেট পতন : ১-২ (সলোমন), ২-২ (অরভিন), ৩-৩০ (মাসাকাদজা), ৪-৫১ (টেইলর), ৫-৮১ (ওয়ালার), ৬-১৩১ (সিকান্দার), ৭-১৬১ (ক্রেমার), ৮-১৬৭ (মুর), ৯-১৬৭ (চাতারা), ১০-১৭০ (মুজারাবানি)।
বোলিং : সাকিব ১০-০-৪৩-৩, সানজামুল ১০-০-২৯-১, মাশরাফি ৯-০-২৫-১, মুস্তাফিজ ১০-১-২৯-২, রুবেল ৫-০-২৪-২, নাসির ৫-০-১৫-০।
বাংলাদেশ ইনিংস (লক্ষ্য ১৭১) রান বল ৪ ৬
তামিম অপরাজিত ৮৪ ৯৩ ৮ ১
বিজয় ক অরভিন ব সিকান্দার ১৯ ১৪ ৪ ০
সাকিব এলবি ব সিকান্দার ৩৭ ৪৬ ৫ ০
মুশফিক অপরাজিত ১৪ ২৩ ১ ১
অতিরিক্ত (নো ৫, ও ১২) ১৭
মোট (২ উইকেট, ২৮.৩ ওভার) ১৭১
উইকেট পতন : ১-৩০ (বিজয়), ২-১০৮ (সাকিব)।
বোলিং : জারভিস ৪-০-১৫-০, চাতারা ৩-০-২৬-০, সিকান্দার ১০-১-৫৩-২, মুজারাবানি ৪-০-৩১-০, ক্রেমার ৭.৩-০-৪৬-০।
ফল : বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ ম্যাচ : সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ