যেভাবে ৫০০
ক্লাব ফুটবলে গোলের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। এবার সেই লিওনেল মেসি উঠে গেলেন আরেক উচ্চতায়। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ৫০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মেসি।
একটু অবাকই হতে হলো। মহীশুরুরের বাঘ নামে পরিচিত টিপু সুলতানের প্রাসাদ ব্যাঙ্গালুরুতে। ব্যাঙ্গালুরুর মানুষের জন্য করেছেন অনেক কিছু। লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনের মতো তার প্রাসাদটিও এখন দর্শনীয় স্পট, যাদুঘর। অথচ ইংলিশদের যম টিপু সুলতানের প্রাসাদ ব্যাঙ্গালুরুর ট্যাক্সি ড্রাইভারদের অনেকেই চেনে না! বাংলাদেশ থেকে টি-২০ বিশ্বকাপ কভার করতে আসা তিন সাংবাদিককে তো ভুল করে টিপু সুলতানের প্রাসাদের পরিবর্তে ব্যাঙ্গালুরু প্রাসাদে নিয়ে গেল ট্যাক্সি ড্রাইভার। ঘুরতে ঘুরতে ওই দলটির টিপু সুলতান প্রাসাদে আসতে চক্কর খেতে হলো, সময় গেলো, গেলো টাকাও। বাবা নবাব হায়দার আলী খানের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করাকেই যেনো ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন মহীশুরের সর্বশেষ স্বাধীন নবার টিপু সুলতান। লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনটা যেমন বাবা শুরু করেছেন, শেষটা করেছেন টিপু সুলতানÑ একই ভাবে গ্রীষ্মকালে প্রশাসনিক কর্মকান্ড মহীশুর থেকে ব্যাঙ্গালুরুতে স্থানান্তরের আইডিয়াটাও নবাব হায়দার আলী খানের। ১৭৮১ সালে ব্যাঙ্গালুরুতে এই গ্রীস্মকালীন প্রাসাদ নির্মান কাজে দিয়েছেন হাত হায়দার আলী। বাবার মৃত্যুর পর এই প্রাসাদটি টিপু সুলতান করেছেন উদ্বোধন। ১৬০টি পিলার দিয়ে নির্মিত ইট-কাঠের এই প্রাসাদটি নির্মান করতে লেগে গেছে ১০ বছর। দোতলায় চারটি ছোট-বড় রুম। এক দিক দিয়ে ঢুকে,অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া যায়Ñ দ্বিতল প্রাসাদের অন্যতম বৈশিস্ট্য এটাই। গরম পড়লে মহীশুর থেকে রাজ-কাজের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়ে এই প্রাসাদে উঠতেন টিপু সুলতান। ২ প্রান্তে ২টি ব্যালকনি, সেখানে দাঁড়িয়ে,বসেই দিতেন উজির, নাজিরদের নির্দেশনা। তা এখনো আছে ঠিক আগের মতো অক্ষত।
ব্যাঙ্গালুরুর কৃষিকাজে আমূল পরিবর্তন আনতে ৮০ ফুট উচুঁ পাথরের পাহাড় কেটে জলাধার নির্মান করেছেন, বানিজ্যিক নগরীতে পরিনত করেছেন। মালাবারের সড়কটিও তার আমলে হয়েছে নির্মিত। ব্যাঙ্গালুরুতে গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদে কাটিয়েছেন ১০ বছরে অসংখ্যবার। তবে টিপু সুলতান আমলে গড়া প্রাসাদটির জৌলুসে আঘাত হেনেছে বৃটিশরা। ১৭৯৯ সালে অ্যাঙ্গলো-মহীশুর যুদ্ধে টিপু সুলতান নিহত হলে এই প্রাসাদটি বৃটিশদের হাতে তুলে দেন মহারাজা কৃঞ্চরাজা ওয়াদেয়ার তৃতীয়। টিপু সুলতানের আমলে এই প্রাসাদে সাধারনের প্রবেশাধিকার ছিল না। টিপু সুলতান নিহত হওয়ার ৯ বছর পর প্রাসাদটি করে দেয়া হয় সাধারনের জন্য উন্মুক্ত। ১৮৩১ সালে এই প্রাসাদটি বৃটিশ শাসককের প্রশাসনিক সদর দফতরে পরিনত হয়। ইংরেজদের যম ছিলেন বলে টিপু সুলতানের গড়া প্রসাদটিও চক্ষুশুল ছিল বৃটিশদের। প্রাসাদের দখল নিয়ে আক্রোশের বশে এই প্রাসাদের একটা অংশ নিলামে বিক্রি করেছে বৃটিশ শাসকরা। টিপু সুলতানের সিংহাসনটি পর্যন্ত স্থানান্তর করা হয়েছে।
টিপু সুলতানের ব্যবহৃত একটি তরবারি এবং কিছু চিত্রকর্ম এখন এই প্রাসাদের স্বাক্ষী। মহীশুরে তার শাসনামলের একটা খন্ড চিত্রও যায় এখানে পাওয়া। প্রাসাদের সামনে লম্বা লন,ঠিক নবাবী আমলের ঐতিহ্যই করছে ধারন। জানেন, এমন এক ঐতিহাসিক নিদর্শনের আগন্তকদের ফি মাত্র ৫ রুপী। এই সুযোগ শুধু সার্কভুক্ত দেশসমূহের পর্যটকদের জন্য। অন্যদের জন্য টিকিট সেখানে ১০০ রুপী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।