পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একদিকে সুউচ্চ কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফ ঢাকা চূড়া, অন্যদিকে বইছে তিস্তার খরস্রোত। চারদিকে শান্ত সবুজের সমাহার। এটাই কাঞ্চনজঙ্ঘা রিজার্ভড বায়োস্ফিয়ার অঞ্চল। লেপচা উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত বাসস্থান। ওই বায়োস্ফিয়ারেরই একটা অঞ্চল জোংগু। সেখানেই হিগিয়াথাং গ্রামে বাস মায়াল্মিত লেপচার।
তিনি বলছিলেন, ‘এই কাঞ্চনজঙ্ঘা, আর এখান দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা, রঙ্গীত - এই সব নদীগুলো হল আমাদের প্রাণ। আমাদের কাছে অতি পবিত্র এই অঞ্চল’। ‘আমরা মনে করি কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফ দিয়ে আমাদের শরীর তৈরী আর মৃত্যুর পরে এই নদী বেয়েই পূর্বপুরুষদের কাছে পৌঁছিয়ে যায় আমাদের আত্মা,’ বলছিলেন মায়া।
তার মতো হাজার চারেক লেপচা উপজাতির মানুষ ওই সংরক্ষিত এলাকায় থাকেন। বাকিরা সিকিমেরই অন্যান্য অঞ্চলে বা দার্জিলিং, নেপাল বা পশ্চিমবঙ্গের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছেন। লেপচাদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় অন্য কেউ স্থায়ী বসতি গড়তে পারে না - আইন এটাই। কেউ জমিও কিনতে পারে না।
কিন্তু তাদের সেই সংরক্ষিত এলাকাতেই হাজির হয়েছে এক বিপদ - যার বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রতিবাদে নেমেছেন লেপচা মানুষরা।
তিস্তা আর রঙ্গীতের মতো নদীগুলোতে যেভাবে একের পর এক বাঁধ দেওয়া চলছে, তাতেই অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে এই লেপচা জাতি’।
মায়াল্মিতের কথায়, ‘এসব নদীগুলোই আমাদের প্রাণ, আমাদের জীবন। যেভাবে বাঁধ দেওয়া চলছে, তাতে নদী আটকিয়ে যাবে। এই পানি দিয়েই আমরা ধান চাষ করি, মাছ ধরি নদীতে, ফুল-ফলের বাগান করি। আমাদের তো জীবনটাই স্তব্ধ হয়ে যাবে। আমাদের জীবিকা বন্ধ হয়ে যাবে।’
সিকিমে এখনও পর্যন্ত ২০টি বাঁধ দেওয়া হয়েছে পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য। তার মধ্যে শুধু তিস্তার ওপরেই ইতিমধ্যে চারটি প্রকল্প তৈরী হয়ে গেছে, আরও দুটি তৈরী হওয়ার অপেক্ষায়। সেই প্রকল্পেরই অন্তর্গত তিস্তা-৪ প্রকল্পটি, যা থেকে ৫২০ মেগাওয়াট পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। লেপচা জাতির একটি সংগঠন এই বাঁধগুলিরই বিরোধীতা করছে বেশ কয়েক বছর ধরে।
জোংগুরই আরেকটি গ্রাম পাসিংডাঙ্গে থাকেন গিৎসো লেপচা। অনেকদিন ধরেই তিনি তিস্তা-৪ পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আইনী লড়াই লড়ছেন।
‘কতগুলো বাঁধের জন্য তিস্তা প্রায় শুকিয়ে গেছে। আমাদের বলা হয় যে এগুলো রান অফ দা রিভার প্রকল্প। কিন্তু আসলে তারা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে সুরঙ্গ দিয়ে ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নদীর পানি নিয়ে যাচ্ছে’।
‘ভূবৈজ্ঞানিকরা বারে বারে বলেছেন যে, হিমালয় সব থেকে কম বয়সী পর্বতমালার একটা। এখনও তৈরী হচ্ছে। যদি আপনি বর্ষার সময়ে আসেন, দেখতে পাবেন কত জায়গায় ভূমি ধস হয়েছে। সেটা থেকেই বোঝা যায় যে, এই পাহাড় কতটা নাজুক। এরকম একটা জায়গায় যদি বড় আকারের নির্মাণ কাজ চালাতে থাকেন, তাহলে খুব স্বাভাবিক যে, গোটা অঞ্চলে আরও বড় বিপদ নেমে আসবে,’ বলছিলেন গিৎসো লেপচা। ইতিমধ্যেই তিস্তাকে অনেক জায়গায় আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে, শেষ পানির আধারটা বাঁচিয়ে রাখতেই আমরা লড়াই করছি, জানাচ্ছিলেন মি. লেপচা।
জাতীয় পানিবিদ্যুৎ নিগম, যারা তিস্তার ওপরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি তৈরী করছে, তারাও এই বিপদের সম্বন্ধে অবহিত। তাদের দাবি এরজন্য আগে থেকেই বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে তারা। নিগমের চেয়ারম্যান বলরাজ যোশীর কথায়, ‘লেপচা সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য আমরা প্রকল্পের জায়গাটাই বদল করে দিয়েছি। আর এটা রান অফ দা রিভার প্রকল্প, তাই এর জন্য বড় পানির আধারের প্রয়োজন নেই। মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য নদীর পানিপ্রবাহকে আটকিয়ে রাখা হয়, আর বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেই সেটা আবারও নদীতে ফেরত পাঠানো হয়’।
তবে মি. যোশী এটাও স্বীকার করে নিলেন যে, আগে যেসব পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরী হয়েছে তিস্তার ওপরে, তার ফলে সেই সব জায়গায় নদী বেশ অনেকটাই শুকিয়ে গেছে।
উত্তরপূর্ব ভারত নদীগুলিতে পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই গবেষণা করছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কল্পবৃক্ষ-এর সদস্য নীরজ বাঘোলিকর।
‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরেই পানিস্রোত আবারও নদীর প্রবাহে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, সেটা ঠিক। কিন্তু তিস্তার ওপরে এতগুলো বাঁধ তৈরী হয়েছে যে কোনও না কোনও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকছেই। একটা প্রকল্প থেকে পানি ছাড়ার পরে অন্য প্রকল্পে আটকানো হচ্ছে। তাই গোটা নদীতেই তার প্রভাব পড়ছে,’ বলছিলেন বাঘোলিকর। মায়াল্মিত আর গিৎসোদের কথায়, ‘আমরা কখনই উন্নয়নের বিরুদ্ধে নই। তবে যদি উন্নয়নই চান, তবে আমাদের ভাল রাস্তা, পরিবহন ব্যবস্থা - এসবের মতো বিষয়গুলোর সমাধান করুন আগে’।
তিস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে মায়াল্মিত বলছিলেন, ‘এখানকার সমাজের প্রত্যেকটা লোকই উন্নয়ন চায়। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না’।
পরিবেশবিদ ইসাক কিহিমকরের কথায়, ‘আমরা এটা বুঝি যে, সিকিমে পানিবিদ্যুৎ তৈরীর প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নদীটা থেকে যদি শুধুই শুষে নেন সবকিছু, তা কী করে হয়! তিস্তার ওপরে একের পর এক বাঁধ তৈরী হয়েছে। আর কত বাঁধ দেবেন ওই একটা নদীতে?’ সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।