মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের ১২০ কোটি মানুষের মধ্যে মুসলিমরা হচ্ছে ১৪ ভাগের বেশি। তারা রয়েছে দুর্ভাগ্যজনক অবস্থানে। কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের তুলনাতেই নয়, শিডিউল কাস্ট (এসসি) এবং অন্যান্য পশ্চাতপদ শ্রেণির (ওবিসি) মতো সরকারিভাবে স্বীকৃত পশ্চাদপদ স¤প্রদায়গুলোর চেয়েও পিছিয়ে আছে মুসলিমরা। এর একটি কারণ হলো মোটামুটিভাবে হিন্দু ‘ভারত’ ও মুসলিম ‘পাকিস্তান’ হিসেবে ভারতবর্ষকে বিভক্ত করার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছে মুসলিমদের রাজনৈতিক ক্ষমতা হারানো এবং আরেকটি কারণ হলো স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতে শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে কোটার মতো ব্যবস্থার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে মুসলিমদের বাদ রাখা। কোটা সীমিত রাখা হয় এসসি, এসটি এবং পরে ওবিসিদের জন্য। রাষ্ট্রের ছদ্মবেশী সেকুলারকরণের ফলে ধর্মের ভিত্তিতে কোটা সংরক্ষণে সংবিধানের বাধা রয়েছে। কিন্তু এসনি, এসটি ও ওবিসিরা হিন্দু হলেও তাদের ব্যাপারে সাংবিধানিক দোহাই না দেওয়া হলেও মুসলিমদেরকে ওই সুবিধাটি নিতে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ড. মনমোহন সিংয়ের কংগ্রেস সরকারের আমলে ২০০৪ সালের অক্টোবরে মুসলিম ও অন্যান্য প্রান্তিক স¤প্রদায়কগুলোর অবস্থা উন্নত করার উপায় খুঁজতে রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন মুসলিমদের জন্য ১০ ভাগ কোটার সুপারিশ করে। কিন্তু তখন বিজেপির নেতৃত্বাধীন হিন্দু ডানপন্থীরা ধর্মীয় সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে কোটা চালু করার বিরোধিতা করে। অবশ্য ২০০৫ সালে কংগ্রেস সরকার মুসলিমদের অবস্থা সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানার জন্য রাজিন্দর সাচার কমিশন গঠন করে। ২০০৬ সালে কমিশনের প্রদত্ত রিপোর্টে মুসলিম স¤প্রদায়ের ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়ার কথা বলা হয়। এতে দেখা যায়, মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষার হার জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক নিচে। মুসলিম ও জাতীয় গড়ের মধ্যকার ব্যবধানটি নগর এলাকা এবং নারীদের মধ্যে অনেক বেশি। ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী মুসলিম শিশুরা হয় একেবারেই স্কুলে যায়নি, বা ঝরে গেছে। কলেজ পর্যায়ে ২৫ জনে মাত্র একজন আন্ডার-গ্রাজুয়েট এবং পোস্ট-গ্রাজুয়েট ছাত্রদের মধ্যে ৫০ জনে একজন মুসলিম। যেকোনো সামাজিক-ধর্মীয় স¤প্রদায়ের মধ্যে মুসলিম গ্রাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মধ্যে যত ব্যাংক ঋণ প্রদান করা হয়, সে তুলনায় মুসলিমদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এর দুই-তৃতীয়াংশ। শহর এলাকায় বিরাট সংখ্যক মুসলিম বাড়ি ‘৫০০ রুপির কম’ বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে। ভারতের প্রশাসনিক সার্ভিসে মুসলিমরা মাত্র ৩ ভাগ, ভারতীয় পররাষ্ট্র বিভাগে মাত্র ১.৮ ভাগ, পুলিশ বিভাগে ৪ ভাগ। বিভিন্ন বিভাগে মুসলিম কর্মীর সংখ্যা অতি নগণ্য পর্যায়ে। ভারতীয় রেলওয়েতে মুসলিম স¤প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব মাত্র ৪.৫ ভাগ। তারাই স¤প্রদায় হিসেবে রয়েছে সবচেয়ে নিচে। বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাংকগুলোতেও মুসলিম প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। ভারতের কোনো রাজ্যেই সরকারি বিভাগগুলোতে মুসলমানরা তাদের জনসংখ্যার হারে প্রতিনিধিত্ব পায় না। পুলিশ কনস্টেবল পদে মাত্র ৬ বাগ, স্বাস্থ্যে ৪.৪ ভাগ, পরিবহনে ৬.৫ ভাগ। ভারতবর্ষ বিভক্তির পর থেকেই উত্তর ভারতে প্রায়ই হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়ে থাকে। কংগ্রেস সরকারের আমলে এ ধরনের সহিংসতায় রাষ্ট্র কখনো সমর্থন দেয়নি। সেক্যুলার রাজনীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কংগ্রেস মুসলিমদের ভোট ব্যাংক বিবেচনা করে। কিন্তু বিজেপির আমলে এর পরিবর্তন ঘটেছে। নরেন্দ্র মোদি আগেই গুজরাটে ক্ষমতায় ছিলেন, ২০১৪ সালে বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। ২০০২ সালে মোদি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন গুজরাটে ২০০০ মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছিল। কেন্দ্রের তার নজরদারির মধ্যেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে, গরু নিয়ে চলাফেরা বা গরুর গোশত খাওয়ার জন্য প্রহার করা হয়ে থাকে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে বিজেপি প্রায়ই গোরক্ষার কথা বলে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে থাকে। ‘ইন্ডিয়াস্পেন্ড’ নামের ওয়েবসাইট অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত গরুকেন্দ্রিক সহিংসতায় ৫২ ভাগ শিকার হয়েছে মুসলিমরা। ৬০টি ঘটনায় নিহত ২৫ জনের মধ্যে ৮৪ ভাগই তারা। ২০১৪ সালের মে মাসে মোদি ক্ষমতায় আসার পর হয়েছে এসব আক্রমণের ৯৭ ভাগ। গরু-সংশ্লিষ্ট সহিংসতার অর্ধেক (৬০টির মধ্যে ৩০টি) হয়েছে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে। ২০১৭ সালের প্রথম ছয় মাসে ১৮টি গরু-সংশ্লিষ্ট হামলার খবর পাওয়া গেছে। সংখ্যাটি ২০১৬ সালে ৭৫ ভাগ। ২০১০ সালের পর ২০১৭ সালেই এ ধরনের সহিংসতা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। খুন ছাড়াও পরিস্থিতির শিকার লোকদেরকে বেঁধে রাখা, পোশাক খুলে ফেলা, প্রহার করার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব আক্রমণ ঘটেছে ২৯টি ভারতীয় রাজ্যের ১৯টিতে। এসবের মধ্যে উত্তর প্রদেশে ৯টি, হরিয়ানায় ৮টি, কর্নাটকে ৬টি, গুজরাটে ৫টি, রাজস্তানে ৫টি, মধ্যপ্রদেশে ৪টি হয়েছে। কর্নাটক ছাড়া বাকি রাজ্যগুলোর সবই বিজেপি-শাসিত। রয়টার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, মোদির নির্বাচনের পর থেকে উত্তর ভারতে উগ্র হিন্দু গো-রক্ষকরা প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার গরু নিয়ে গেছে। অনেক সময় তারা পুলিশের সামনেই তা করেছে। এসব গরুর প্রায় সবগুলোর মালিক ছিল মুসলিমরা। সহিংসতা ও অপরাধের ক্ষেত্রে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মুসলিমদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করে থাকে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবেশ কাপুরের মতে, কারাগারে থাকা লোকদের মধ্যে ১৯.৪ ভাগ মুসলিম, অথচ তারা জাতীয় জনসংখ্যার মাত্র ১৪.২ ভাগ। কারাগারে থাকা মোট বন্দির ৫৩ ভাগই মুসলিম, এসসি ও এসটি। অথচ তারা ভারতের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪০ ভাগ। একদিকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়ছে, অন্যদিকে তাদের ভাগ্য-উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আবার মোদি সরকার মুসলিমদের ব্যক্তি আইনেও হস্তক্ষেপ করছে তাদের দুরাবস্থা বাড়ানোর জন্য। সা¤প্রতিক একটি বড় ইস্যু হলো ‘তিন তালাক’ বিল। কোনো মুসলিম তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে জামিন ছাড়াই তাকে তিন বছর কারাগারে থাকতে হবে। মুসলিমপন্থী ও মানবাধিকার কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কোনো স্বামী যদি কারাগারে থাকে, তবে তিনি কিভাবে তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে খোরপোশ দেবেন? তাছাড়া মুসলিমদের বিয়ে যে একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা। এটিকে ফৌজদারি আইনের মাধ্যমে অপরাধ পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায় না। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কপিল সৈবাল বলেছেন, কেবল স্ত্রীই তিন তালাকের ব্যাপারে মামলা দায়ের করতে পারবে- এমন কোনো বিধান প্রস্তাবিত বিলে রাখা হয়নি। সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।