Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাভাষী মুসলিমদের বিতাড়নে উত্তেজনা

আসামে নাগরিকত্ব নিয়ে দ্ব›দ্ব : এমএলএ’র বিরুদ্ধে মুসলিম সংগঠনের মামলা

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : আসামে নাগরিকত্ব বিষয়ে মন্তব্য করার অভিযোগে বিজেপি দলের এমএলএ শিলাদিত্য দেবের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মুসলিমদের একটি সংগঠন। এ সংগঠনটি রাজ্যে আদিবাসী মুসলিমদের তরুণ ও ছাত্র বিষয়ক পরিষদ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়েছে, রোববার মধ্যরাতে আসামে নাগরিকত্ব বিষয়ক প্রথম খসড়া তালিকা ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি) প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে মন্তব্য করেন শিলাদিত্য দেব। তিনি বলেছেন, প্রাথমিক খসড়া ওই তালিকায় বাংলাদেশী অনেক অবৈধ অভিবাসীর নাম রয়েছে। তার এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধে ওই মামলা করেছে মুসলিমদের সংগঠনটি। তারা বলেছেন, শিলাদিত্যর মতো একজন জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্তে¡ও এমন মিথ্যা কথা বলা দুঃখজনক। আসামে বাংলাভাষী বা বাংলাভাষী মুসলিম ইস্যুতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। অন্যদিকে আসামে বসবাসকারী অনেক মুসলিম বাংলাভাষীর মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। ন্যাশনাল রেজিস্ট্রোর অব সিটিজেনস (এনআরসি)-এর প্রাথমিক খসড়া তালিকায় তাদের অনেকের নাম নেই। তাই তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় ভুগছেন। বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, এমন রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়তে পারেন ৩০ থেকে ৪০ লাখ বাংলাভাষী মুসলিম। এরই মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, আসামে বাঙালিদের টার্গেট করা হচ্ছে। তাদের গায়ে হাত পড়লে তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, এনআরসি নবায়ন করার বিরোধিতা করছেন মমতা। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনে তিনি ‘অবৈধ অভিবাসীদের’কে ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করতে চান। বিজেপির এমপি রাম প্রসাদ শর্মা বলেছেন, মমতা বাংলাদেশী ভোটব্যাংক অটুট রাখতে চান। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, আসামে বসবাস করেন মর্জিনা বিবি। তাকে রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করা হতে পারে বলে আতঙ্কিত তিনি। নাগরিকত্বের যে প্রাথমিক তালিকা রোববার মধ্যরাতে প্রকাশিত হয়েছে তাতে ২৬ বছর বয়সী মর্জিনার নাম নেই, যদিও তার আছে ভোটার পরিচয়পত্র, ২০১৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। মর্জিনা বিবির প্রশ্নÑ আমার সঙ্গে তারা এসব করছে কেন? আসামের ফোফেঙ্গা গ্রামে তার বসতি। মর্জিনা বলেন, তারা মনে করেছে আমি একজন বাংলাদেশী। কিন্তু আমার জন্ম এই আসামে। আমার পিতামাতার জন্ম আসামে। তাই আমি একজন ভারতীয়। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় আসাম থেকে অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের বের করে দেয়ার ঘোষণা দেয় বিজেপি। এ ইস্যুতে প্রচারণা চালিয়ে ২০১৬ সালের এপ্রিলে আসামে ক্ষমতায় যায় বিজেপি। এরপরই শুরু হয় ওইসব বাংলাভাষীদের আসাম থেকে বের করে দেয়ার তৎপরতা। তবে অধিকার বিষয়ক কর্মীরা বলেন, বিজেপি সরকারের এ উদ্দেশের কারণ হলো মুসলিমদের টার্গেট করা। এসব মুসলিম ভারতীয় নাগরিক। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন জাতীয় পর্যায়ে বিজেপির দু’জন মুখপাত্র। এ বিষয়ে নয়া দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে রয়টার্স। সংস্থাটির সাংবাদিকরা ইমেইল ও টেলিফোনে তার মন্তব্য প্রত্যাশা করেন। কিন্তু কোনো জবাব দেয়া হয়নি মন্ত্রণালয় থেকে। আসাম হলো চা উৎপাদনশীল ও তেলসমৃদ্ধ রাজ্য। এখানে ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশই হলেন মুসলিম। এই রাজ্যে নাগরিকত্ব ও অবৈধ অভিবাসন উত্তেজনাকর ইস্যু। স্থানীয় আসামী গ্রুপগুলোর অভিযোগ, বহিরাগতরা সেখানে গিয়ে কাজ লুফে নিচ্ছে। সম্পদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। এ নিয়ে ১৯৮০র দশকে ভয়াবহ সহিংসতা শুরু হয়। তখন হত্যা করা হয় কয়েক শত মানুষকে। ১৯৫১ সালের পর এবারই প্রথম নতুন করে নবায়ন করা হচ্ছে নাগরিকত্ব। এতে নাম তালিকাভুক্ত রাখতে একজন নাগরিককে প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। তাতে প্রমাণ দিতে হবে যে, তার পরিবার ১৯৭১ সালের ২৪ শে মার্চের আগে থেকে ভারতে বসবাস করছে। এমনটা দেখাতে পারলে তাকে ভারতের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে। প্রাথমিক এনআরসি মতে, আসামের প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ মানুষকে নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে এ বছরের জুলাইয়ে। এ বিষয়ে মর্জিনা বিবিসহ প্রায় দু’ডজন মুসলিমের সঙ্গে কথা বলেছেন রয়টার্সের সাংবাদিক। তারা বলেছেন, প্রাথমিক তালিকায় তাদের নাম নেই। মর্জিনা বিবি বলেন, আমরা মুসলিম। আমার মনে হচ্ছে এ কারণেই আমাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তিনি এরই মধ্যে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তিনি ভারতীয়। বিজেপি বলেছে, আগের সরকারগুলো নির্বাচনে বিজয়ী হতে ভোট কেনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে অনেক বাংলাদেশী অভিবাসীকে। স্থানীয়ভাবে মুসলিম প্রধান একটি এলাকায় বসানো হয়েছে এনআরসি অফিস। ওই এলাকায় আবেদন করেছেন প্রায় ১১ হাজার মানুষ। তার মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ৫০০ মানুষের নাম উঠেছে প্রাথমিক তালিকায়। ওই কেন্দ্রটির দায়িত্বে আছেন সরকারি কর্মকর্তা গৌতম শর্মা। তিনি বলেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, এটা অসম্ভব। আমরা শুধু প্রমাণপত্র দেখি। তারা যেসব প্রমাণপত্র দিচ্ছেন তার ওপর ভিত্তি করে যাচাই-বাছাইয়ে সময় কম বেশি লাগে। এনআরসি অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন একজন হিন্দু। তার মুখে হাসি। তিনি রয়টার্সের সাংবাদিককে বলেন, তার পরিবারের ৬ সদস্যের সবার নামই আছে ওই তালিকায়। এর অল্প সময় পরেই তাদের নবজাতক সন্তানদের নিয়ে সেখানে যান। কিন্তু তারা ফিরে যান হতাশ হয়ে। দ্য ইকোনমিক টাইমস, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আসাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ