Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঋণের সুদ ১১১৭ কোটি টাকা

চালুর আগেই ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঢাকার বিমানবন্দর সড়ক থেকে আশুলিয়ার ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে সেতু বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় সাভারের নবীনগরে একটি ফ্লাইওভারও নির্মাণ করা হবে। জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করতে হবে পাঁচ হাজার ৯৫১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এক্সপ্রেসওয়েটি চালুর আগেই ঋণের সুদ গুণতে হবে এক হাজার ১১৭ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি জিটুজি ভিত্তিতে চার লেনে উন্নীত করতে যাচ্ছে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এ ক্ষেত্রে নির্মাণকালীন কোনো সুদ ধরা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ সহজ করতে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেতু বিভাগের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক এবং প্রায় সব জাতীয় মহাসড়ক যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-চন্দ্রা সড়কে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা বা চট্টগ্রামগামী ওই এলাকার যানবাহনকে ঢাকার যানজটের মধ্যে ঢুকতে হবে না। এতে ঢাকার ওপর যানবাহনের চাপ কম পড়বে। প্রকল্পটির জন্য ১২ শতাংশ ভ্যাট ও কর পরিশোধ করবে সরকার। এ ছাড়া বিভিন্ন সরঞ্জাম আমদানির জন্য চার শতাংশ কাস্টমস শুল্ক ও সরকারি তহবিল থেকে বহন করতে হবে। যদিও অন্যান্য প্রকল্পে এটি ঠিকাদার নিজেই বহন করে থাকে। আবার পুনঃ রফতানির শর্তে যন্ত্রপাতি আমদানির বিপরীতে ধার্যকৃত কাস্টমস শুল্ক মওকুফও করে দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সূত্র মতে, চার বছরে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা। আর এ সময়ের জন্য এক হাজার ১১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা সুদ নেবে চীন। অর্থাৎ চার বছরের জন্য ঋণের ১০ দশমিক ২০ শতাংশ শুধু সুদই দিতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত গ্রেস পিরিয়ডে শুধু ঋণের সুদ দিতে হয়। তাই নির্মাণকালের এতটা সুদ বাস্তবসম্মত নয়। জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি জিটুজি ভিত্তিতে চার লেনে উন্নীত করতে যাচ্ছে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এ ক্ষেত্রে নির্মাণকালীন কোনো সুদ ধরা হয়নি। সূত্র জানায়, চীনের ঋণে দুই শতাংশ সুদ হার ছাড়াও দশমিক ২০ শতাংশ কমিটমেন্ট চার্জ ও দশমিক ২০ শতাংশ ম্যানেজমেন্ট চার্জ দিতে হয়। তবে ঋণ ছাড় করতে যত দেরি হবে, কমিটমেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট চার্জ তত বাড়তে থাকবে। আর পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে পুরো ঋণ।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির জন্য নির্মাণ ব্যয়ের ১২ শতাংশ কর ও শুল্ক বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর কাস্টমস শুল্ক ধরা হয়েছে নির্মাণ ব্যয়ের চার শতাংশ। এ জন্য ব্যয় হবে ৪০৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ অর্থও সরকারি তহবিল থেকে বহন করতে হবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ খাতে চার কোটি, অন্যান্য ব্যয় খাতে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এসব ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সেতু বিভাগের তথ্য মতে, গত বছরের ২৪ অক্টোবর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়। এর আওতায় ২৪ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে, ১০ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার ওঠানামার র‌্যাম্প, এক দশমিক ৯২ কিলোমিটার ফ্লাইওভার, ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার দুই লেনের সার্ভিস সড়ক পুননির্মাণ, দুই দশমিক ৭২ কিলোমিটার সেতু, ৫০০ কিলোমিটার রেল ওভারপাস ছাড়া ১৮ কিলোমিটার ড্রেনেজ ও ডাক্ট এবং পাঁচটি টোলপ্লাজা নির্মাণ করা হবে।
সূত্র জানায়, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর প্রাক্কলনের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করার জন্য গত বছরের ২৯ নভেম্বর চুক্তি সই করে সেতু বিভাগ ও সিএমসি। এ ক্ষেত্রে সিএমসি ভ্যাট-কর ছাড়া ১৪৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার প্রস্তাব করে। পরে নেগোসিয়েশন শেষে পাঁচ বছরের রক্ষণাবেক্ষণসহ ১৩৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রস্তাব করা হয়। তবে কারিগরি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার ব্যয় চ‚ড়ান্ত করা হয়।
সূত্র জানায়, টেকনিক্যাল কমিটি এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয় প্রস্তাব করেছিল ১২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তবে গত বছর ২৫ মার্চ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন স্থানে নতুন করে র‌্যাম্প সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়। পরে আরো সাত কোটি ডলার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। তবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আরো ১৭ কোটি ১২ লাখ ডলার বা এক হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা কম ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ২০১৫ সালে সমঝোতা স্মারক সই করে সেতু বিভাগ। ২০১৬ সালে এটি নির্মাণে চ‚ড়ান্ত প্রস্তাব দেয় চীন। এরপর এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে অস্ট্রেলিয়ার স্ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল এবং বাংলাদেশের ডেভ কনসালটেন্টস ও এসিই কনসালটেন্টস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ