Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাইরে রাখা যাবে না নির্বাচন করব

ছাত্রদলের সমাবেশে খালেদা জিয়া

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সরকার জনগণের সরকার নয় দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, অবিলম্বে এই সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিবে হবে। কারণ শেখ হাসিনার অধীনে অতীতে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, আগামীতেও হবে না। এজন্য এই সংসদ রেখে শেখ হাসিনার অধীনেও কোন নির্বাচন হবে না। আমরা বিএনপি, নির্বাচনী দল। আমরা নির্বাচন করব। বাইরে রাখতে চাইলেই রাখা যাবে না। আমরা নির্বাচন করবো। তবে সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় ছাত্রদলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই তাদের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। আজকে পার্লামেন্ট বলে কিছুই নেই। হাসিনারা ক্ষমতায় থাকার জন্য পার্লামেন্ট রেখে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করেছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এঁরা কেউ ভোটই পাননি। এরা পার্লামেন্টের মেম্বার থাকার যোগ্য নন। কাজেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে।’
বেগম জিয়া বলেন, আপনারা(সরকার) যদি মনে করেন, আমাদের লোকজন ধরে নিয়ে যাবেন। তারপর নির্বাচন ঘোষণা করবেন, সেটা আর হবে না। ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন আর হবে না। এই দেশে নির্বাচন হবে সকল দলের অংশগ্রহণে। বিএনপি সবচেয়ে বড় দল, তাকে (বিএনপি) বাদ দিয়ে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হতে পারে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হবে। আমরা নির্বাচন করব। কিন্তু সে নির্বাচনটি হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। হাসিনার অধীনে নয়। সেই নির্বাচনই এই দেশে হবে। কারণ, সারা পৃথিবী বুঝে গেছে হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবে না। সেটা মানুষও বুঝেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন ও কথা বলার অধিকার নেই। আজ দেশ এক ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী চলছে। হাসিনা যা বলে সেই অনুয়ায়ী চলে। আসলে কিছু চলছে না। দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। সব কিছু অচল হয়ে যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, এক ব্যক্তির শাসনে তো এদেশে চলতে পারে না। এজন্য দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি, সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছিলো। যে অত্যাচার পাকিস্থানিরা করেছে, তার চেয়ে বেশিগুণ অত্যাচার করছে হাসিনার সরকার।
সদ্য পদত্যাগকারী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ‘অস্ত্রের মুখে’ পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয় না। কাজেই এখনো মতলবটা তাদের ভালো নয়। মওদুদ সাহেব (মওদুদ আহমদ) বলেছেন একদিনও নাকী ওই পদ খালি রাখা যায় না। কাজেই আমরা বলতে চাই, হাসিনা যা চাইবে সেটা না করলে তাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে, তার নামে মামলা হবে, তাকে জেলে যেতে হবে, অত্যাচারিত হতে হবে।
এই সরকার ভালো লোককে দীর্ঘদিন আটক রেখে জঙ্গি বলে চালিয়ে দিচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি প্রধান বলেন, দেশে জঙ্গির উত্থান হয়েছে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে। তিনি বলেন, এখন নিজেরা বোমা রাখে, অস্ত্র রাখে। তারপর যাকে ইচ্ছা তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। জঙ্গি সৃষ্টি আওয়ামী লীগ করেছিলো। শাইখ আবদুর রহমান, বাংলা ভাই সব তাদের জ্ঞাতি-গোষ্ঠি। কথায় কথায় কিছু হলে জঙ্গির ভয় দেখায়। বাংলাদেশে মানুষ জঙ্গি নয়, তারা শান্তিপ্রিয় মানুষ, তারা জঙ্গি হতে চায় না। তাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাদেরকে জঙ্গি বানানো হচ্ছে, জঙ্গি বানাচ্ছে তারা (সরকার)। বিদেশীদের কাছে জঙ্গি দেখানো হচ্ছে। দাঁড়িওয়ালা-টুপি পরা লোক হলে সে জঙ্গি হয়ে যায়। একজন লোককে একমাস নিয়ে রাখা যায় তাহলে তার দাঁড়ি এরকম হয়ে যাবে, তার চেহারা এরকম হয়ে যাবে। তাকে ঘুমাতে দেবে না, তাকে খেতে দেবে না তাহলে জঙ্গি বানানো সহজ। এই কাজগুলো তারা করছে প্রতিনিয়ত। মানুষকে ধরে নিয়ে দীর্ঘদিন নিয়ে বন্দি করে রেখে জঙ্গি সাজায়।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আজকে আমরা বলি, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যারা আছেন, যারা থাকবেন তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে কাজগুলো করছেন, একদিন তাদের বিরুদ্ধেই মানুষ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবে। কারণ তারা সব কিছু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে করছে। দেশের এতোগুলো মানুষকে গুম করা, খুন করার কাজ করছে।
পদ্মাসেতুর প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, এখন তারা পদ্মাসেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলে এই সেতু হবে না। কেনো একটা যদি জোড়াতালি বানায় সেই সেতুতে কেউ উঠতে যাবেন না। অনেক রিস্ক আছে।
আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে নির্যাতন, গুম, খুন ও দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ভয় পায়। কারণ বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় এসেছে। আজকে দেশের উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে। অভাব অনটন আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ২০১৪ সালে দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০০৮ সালে সরকার বলেছিল ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে। বিনামূল্যে সার দিবে। ঘরে ঘরে চাকরি দিবে। কিন্তু সারের দাম তিনগুণ বাড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ পদ্মাসেতু করতে পারবেনা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ব্যাংক ডাকাতি হচ্ছে এমন ভাবে যে কেউ টের পাচ্ছেনা। ব্যাংক ও শেয়ারবাজার লুট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনর সুইস ব্যাংকে টাকা পাঠাচ্ছে। দেশ থেকে লুট করে দেশকে ধ্বংস করছে। বিচারবিভাগ, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা সবই তারা ধ্বংস করেছে। জনগণের জন্য আর কিছুই থাকলোনা।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ বাঁচবেনা। মানুষ এখন বুঝে গেছে এজন্য তারা পরিবর্তন চায়। জনগণের দাবি মেনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। কারণ শেখ হাসিনার অধীনে অতীতে যত নির্বাচন হয়েছে সুষ্ঠু হয়নি। আগামীতেও হবেনা। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। আজকে সংসদ বলে কিছুই নেই। এই সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে অবিলম্বে নির্বাচন দিতে হবে।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ঐক্য, ঈমান ও শৃঙ্খলা- এই তিনটি জিনিস তোমাদের মধ্যে থাকতে হবে। তোমাদের আরো সুশৃঙ্খল হতে হবে। তাহলে সব কিছু জয় করা সম্ভব হবে। শুধু শ্লোগান দিলে চলবে না।
সমাবেশ স্থলে তালা:
ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল দিনভরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায়। জানা গেছে, আগে থেকেই সমাবেশের অনুমতি নিয়েছিল ছাত্রদল। পরে সকাল থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সেখানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীলা জড়ো হতে থাকেন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের প্রধান গেটে ঢুকতে না দিয়ে তালা লাগিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে তালা দেখে তা খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান। সেখানকার দায়িত্বরত ব্যক্তি জানায় খুলে দিতে নিষেধ আছে। তবে কার নিষেধ আছে তা তারা বলেননি। প্রধান ফটন বন্ধ থাকায় ছাত্রদল ও বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী মিলনায়তনের প্রধান ফটকের সামনেই অবস্থান নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। এরআগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রদলের সমাবেশ নির্বিঘœ করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু তারপরও মিলনায়তন তালাবন্ধ থাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচেই অবস্থান নিয়ে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন।
এরইমধ্যে ছাত্রদলের সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া সভাস্থলে আসেন বিকেল ৪ টা ২৬ মিনিটে। তিনিও নেতাকর্মীদের কর্মসূচীতে সমর্থন দিয়ে গাড়িতেই অবস্থান নেন। একপর্যায়ে বিকেল ৫ টা ১৭ মিনিটে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের প্রধান ফটক খুলে দেয়া হয়। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলেন, এই মুহুর্তে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মিলনায়তনের তালা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এরপর সন্ধ্যায় সভা শুরু হয়। ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের পরিচালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, হাবিবুর রশিদ হাবিব, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, শিরিন সুলতানা, রেহানা আখতার রানু, শাম্মী আখতার প্রমুখ।



 

Show all comments
  • গোলাম ফারুক ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৪:৪০ এএম says : 0
    ঘোষণা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল গফুর ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৪:৪০ এএম says : 0
    শুধু নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেই হবে না শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • বিপ্লব ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৪:৫০ পিএম says : 0
    নির্বাচন করতে হলে বিএনপি নেতাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সাজিদ ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৪:৫১ পিএম says : 0
    শুধু নির্বাচনে গেলে হবে হবে না, সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ