Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশের হকি ও অন্যান্য...

ফিরে দেখা ২০১৭

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বছরজুড়ে আলোচনায় হকি
জাহেদ খোকন : কালের পরিক্রমায় সবার জীবন থেকেই হারিয়ে গেল আরেকটি বছর। শেষ হলো ২০১৭, নতুনের আগমনী বার্তা নিয়ে পদার্পণ ঘটলো ২০১৮ সালের। গেল বছর বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যে ক’টি ডিসিপ্লিন আলো ছড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হকি। নানা কারণে ২০১৭’র বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল দেশের হকি। গেল মার্চের শুরুতে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন (বাহফে) ঢাকায় আয়োজন করে বিশ্ব হকি লিগ রাউন্ড-২’র খেলা। মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে ছয় দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় এ টুর্নামেন্ট। আসরকে সামনে রেখে জার্মান কোচ অলিভার কার্টজের অধীনে দেশে-বিদেশে দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলন, প্রস্তুতি ম্যাচ খেললেও লক্ষ্যপূরণ হয়নি জাতীয় দলের। সেমিফাইনালের আগেই বাদ পড়ে জিমি বাহিনী। পরে ওমানকে হারিয়ে পঞ্চমস্থান নিয়ে বিশ্ব হকি লিগ রাউন্ড-২ শেষ করে বাংলাদেশ। এ আয়োজনের পরেই বাহফে’র সদস্যরা সরব হন নির্বাচন ও এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে। বছরের মাঝামাঝিতে নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নতুন নির্বাচন নিয়ে তোরজোর শুরু হয়। কিন্তু নানা নাটক মঞ্চস্থ হলেও শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি হকির নির্বাচন। যা এখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছে।
হকির নির্বাচনে নাটক- পুরনো এই রীতি গেল বছরও ভাঙতে ব্যর্থ বাহফে। গত ২৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল বহুল কাঙ্খিত ও আলোচিত হকির নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনের দশ দিন আগে হঠাৎ তা স্থগিত ঘোষণা করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। দেশে বন্যার অজুহাতে স্থগিত করা হয় এই নির্বাচন। অথচ নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা, শো ডাউন, প্যানেল চ‚ড়ান্ত, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ পর্যন্ত শেষ হয়েছিল। যেদিন মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার কথা (১৭ আগস্ট) সেদিন এনএসসি এক প্রজ্ঞাপণে স্থগিত করে হকির নির্বাচন। আগস্ট পেরিয়ে ডিসেম্বর শেষ। এখনো হকির নির্বাচন আয়োজনের কোন ঘোষণা দেয়নি দেশের ক্রীড়া প্রশাসন। ফলে সংশ্লিষ্টদের মনে শঙ্কা জেগেছে- আদৌ হকির নির্বাচন হবে কিনা। নির্বাচন স্থগিত হলে হকি সংশ্লিষ্টরা ঝাাঁপিয়ে পড়েন দশম এশিয়া কাপ নিয়ে। দীর্ঘ ৩২ বছর পর অক্টোবরে ঢাকায় বসে হিরো এশিয়া কাপ হকি টুর্নামেন্ট। আসরকে স্মরণীয় করে রাখতে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে সংস্কার কাজসহ স্থাপন হয় ফ্লাডলাইট ও ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ড। আট দলের অংশগ্রহণে টুর্নামেন্টে একেবারে খারাপ করেনি বাংলাদেশ। আগেই জাতীয় দলের ঘোষণা ছিল এশিয়া কাপে ষষ্ঠস্থানে থাকার। চীনকে হারিয়ে জিমি, চয়ন, আশরাফুলরা সেই লক্ষ্য পূরণ করেন। ষষ্ঠ হয়েই দশম এশিয়া কাপ শেষ করেন তারা। ফলে আগামী এশিয়া কাপ,চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিসহ আরো কিছু টুর্নামেন্টে বাছাইপর্ব ছাড়াই সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে লাল-সবুজরা।
এরই মধ্যে দেশের হকিতে নেমে আসে শোকের ছায়া।
২২ অক্টোবর এশিয়া কাপ শেষ হলে এর দু’দিনের মাথায় ২৪ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জাতীয় দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড়, দক্ষ ও সফল সংগঠক এবং বাহফে’র বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি খাজা রহমতউল্লাহ। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন তিনি। তার হঠাৎ চলে যাওয়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে হকি আঙিনায়। হকির আকাশ যেন কালো মেঘে ঢাকা পড়ে, বিনা মেঘে শুরু হয় বজ্রাঘাত। নির্বাচন আর এশিয়া কাপ হকির জন্য রাতদিন আক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন রহমতউল্লাহ। সফলভাবে এশিয়া কাপ শেষ করলেও নির্বাচন করা হয়নি তার। নির্বাচনে জয়ী হয়ে আরেকবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসার স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই সবার প্রিয় খাজা রহমতউল্লাহ চলে যান না ফেরার দেশে।
এতো কিছুর পরেও গেল বছর দেশের ঘরোয়া হকি পড়েছিলো মুখ থুবড়ে ঘরোয়া। হকিতে পদ নিয়ে কামড়া-কামড়ি নতুন ঘটনা নয়। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারেই সবার চোখ। গত চার বছর ধরেই সেটা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে ঘরোয়া হকিতে। ২০১৩ সালে সাধারণ সম্পাদক হয়ে ক’বার প্রিমিয়ার লিগ আয়োজন করতে পেরেছিলেন মরহুম খাজা রহমতউল্লাহ! সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারেই তো বড় জোর থেকেছেন দু’বছর। বিদ্রোহী পাঁচ-ছ’টি ক্লাবের তোপের মুখে নামকাওয়াস্তে ২০১৫ সালে লিগ আয়োজন করেছিলেন তিনি। পদ ছেড়ে ২০১৬ সালে লিগ আয়োজন করলেও সেই লিগ শেষ হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। ২০১৭ সালের মার্চ-এপ্রিলে খেলোয়াড়দের দলবদল কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এশিয়া কাপের পরেই প্রিমিয়ার লিগ টার্ফে গড়ানোর কথা ছিলো। কিন্তু সেই কথাও রাখতে পারেনি বাহফে। এমনকি জাতীয় দিবসে (স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস) দু’টি টুর্নামেন্ট পর্যন্ত করতে পারেনি তারা। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই আরেকটি বছর পার করলো দেশের হকি।
গেল বছর ক্রিকেট, ফুটবল, হকি ছাড়াও বাংলাদেশের বেশ ক’টি ক্রীড়া ফেডারেশন তাদের কার্যক্রমে সরব ছিলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রোলার স্কেটিং, আরচ্যারি, শুটিং ও অ্যাথলেটিক ফেডারেশন। তারা তাদের বর্ষপঞ্জি ছাড়াও আন্তর্জাতিক কর্মকান্ড সফলভাবে শেষ করে গেল বছর। ২০১৭ সালের শুরুতেই রোলার স্কেটিং ফেডারেশন ঢাকায় আয়োজন করে চতুর্থ রোলবল বিশ্বকাপের। এ আসরকে সামনে রেখে মাত্র ৭৫ দিনে পল্টন ময়দান সংলগ্ন স্থানে নির্মান করা হয় শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ স্থাপনায় এখন প্রতিদিন শত শত ছেলে মেয়েরা অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছে। তবে কমপ্লেক্স তৈরি করে স্কেটিং ফেডারেশন সবচেয়ে বড় চমক দেখায় রোলবল বিশ্বকাপ আয়োজন করে। ২০১৭ সালে ফেব্রæয়ারিতে ৩৯ দেশের অংশগ্রহণে ঢাকায় বসে চতুর্থ রোলবল বিশ্বকাপ। আসরে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও চতুর্থস্থানে থেকে অনেকেরই মন কেড়ে নেয় বাংলাদেশ। শুধু বিশ্বকাপ আয়োজন করেই নয়, এই কমপ্লেক্সের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপণন করে বছর জুড়েই আলোচনায় ছিল রোলার স্কেটিং ফেডারেশন।
আরচ্যারি ফেডারেশনও কম যায়নি। তারা গেল বছরের শেষ দিকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আয়োজন করে ২০তম এশিয়ান আরচ্যারির প্রতিযোগিতার। যে আসরে ৩৩টি দেশ অংশ নেয়। এ আসরে আয়োজক হয়েই শুধু নয়, স্বাগতিক আরচ্যাররা ভালো পারফরম্যান্স করেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। পদক না জিতলেও কম্পাউন্ড রাউন্ডের এককে আবুল কাশেম মামুনের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা কিংবা কম্পাউন্ড রাউন্ডে মেয়েদের দলগত ইভেন্টে অল্পের জন্য ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া হওয়াও কম বড় ঘটনা নয়।
শুটিংয়ের জন্যও ২০১৭ সালটি ছিলো গৌরবের। এ বছর এক রুপাতেই বাজিমাত করেন দেশের তরুণ শুটার বিকেএসপির ছাত্র অর্নব শারার লাদিফ। গত ৯ ডিসেম্বর জাপানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের এককে (যুব ইভেন্ট) ২৪৯.৫ স্কোর গড়ে রুপা জেতেন অর্নব। মাত্র .৫০ স্কোরের জন্য স্বর্ণ জেতা হয়নি তার। চলতি বছর আর্জেন্টিনায় বসবে যুব অলিম্পিক আসর। আর তাতে ওয়াইর্ল্ড কার্ড নয় সরাসরি খেলার সুযোগ পাবেন শুটিংয়ের বিস্ময় বালক অর্নব।
অ্যাথলেটিক ফেডারেশনও তাদের নিয়মিত আয়োজন ঠিক রেখেছে গেল বছর। ২২, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আলো ছড়ান অ্যাথলেটরা। এই তিন দিন জাতীয় সিনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ উপলক্ষ্যে সাবেক ও বর্তমান তারকা অ্যাথলেটদের বিচরণে মুখরিত ছিলো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। প্রতিযোগিতার উদ্কেবাধন করতে ঢাকায় আসেন এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি দাহলান আল হামাদ। এছাড়া দাবায় দেশের সর্বকনিষ্ঠ ফিদে মাস্টার ফাহাদ রহমানের মালয়েশিয়াতে অনূর্ধ্ব-১৪ ফেস্টিভ্যালে স্বর্ণ জেতা, বাকুর ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে রাব্বি হাসানের রুপা জেতা এবং জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে মেজবাহ আহমেদের রেকর্ড সপ্তমবারের মতো স্বর্ণ জয়, ইলেকট্রনিক টাইমার চালু ছিল গেল বছরের আলোচিত ঘটনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ