Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ফিলিস্তিনিমুক্ত জেরুজালেম প্রস্তাব পাস নেসেটে

পবিত্র শহরের ওপর পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বিলটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সমগ্র জেরুজালেমে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় পার্লামেন্টে একটি সংশোধিত বিল পাস করেছে ইসরাইলি আইনপ্রণেতারা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নেসেটের (ইসরাইলি পার্লামেন্ট) অনুমোদন পাওয়া ওই বিল অনুযায়ী জেরুজালেমের কোন অংশের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি রাষ্ট্রের আওতায় ছেড়ে দিতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতার সমর্থন দরকার পড়বে। পুরনো আইনে প্রধানমন্ত্রী একাই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এবং ইসরাইলভিত্তিক হারেৎজ-এর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিমুক্ত করে পবিত্র ওই শহরের ওপর পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই বিলটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ৬ ডিসেম্বর বুধবার জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরাইলের মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির কথাও জানান তিনি। এই নিয়ে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বজুড়ে তুমুল নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও পূর্ব জেরুজালেমের একাংশকে তাদের ভবিষ্যত স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চায়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়,ওই দাবিকে কঠিন করে তুলতেই এই বিল পাস করা হয়েছে। ইসরাইলের ডানপন্থী জোটের প্রস্তাবিত বিলটি ৬৪ ভোট নিয়ে পাস হয়। প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেন ৫২ জন আইন প্রণেতা। ১৯৬৭ সালে জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরাইল। এরপর থেকে তারা জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসলেও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় তার বৈধতা দেয়নি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি নেতারা দাবি করে আসছেন পূর্ব জেরুজালেম তাদের রাজধানী হবে। তবে ইসরাইল শহরটি বিভক্ত করা বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আছে। জেরুজালেমের বেশিরভাগ ফিলিস্তিনির স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা থাকলেও ইসরাইলি নাগরিকত্ব নেই। আল-জাজিরা বলছে, বিভিন্ন কারণে যেকোনও সময় তাদের সেখান থেকে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর জানিয়েছে, ১৯৬৭ সালে জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসরাইল প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দার অনুমোদন বাতিল করেছে। পূর্ববর্তী আইনে প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাহী ক্ষমতাবলে জেরুজালেমের কোনও অংশ অন্য কারও হাতে ছাড়তে পারতেন। এই আইনটি প্রণীত হওয়ার পর নির্বাহী ক্ষমতার বলে প্রধানমন্ত্রী আর এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। হারেৎজ-এর প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ডানপন্থীদের রাজনৈতিক চাপের মুখে আইনটি সংশোধন করে কঠোর করা হয়েছে। ইসরাইলের শিক্ষামন্ত্রী নাফতালি বেনিট ও জেরুজালেম বিষয়ক মন্ত্রী জিভ এলকিন পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটির মাধ্যমে ভবিষ্যতে জেরুজালেমের ওপর দেশটির বিচার বিভাগের কর্তৃত্ব কমিয়ে আনার একটি প্রবণতা খুঁজে পেয়েছে খোদ ইসরাইলি একটি সংবাদমাধ্যম। প্রগতিশীল ইহুদি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রণীত আইনটির মাধ্যমে অধিকৃত জেরুজালেমকে ইসরাইলি বিচার ব্যবস্থার বাইরে নেওয়া এবং এর কোনও অংশকে ফিলিস্তিনিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পদক্ষেপ জটিল করে তোলা হয়েছে। এখন থেকে ইসরাইলি নাগরিক ছাড়া কেবল ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের জন্য এককভাবে আলাদা পৌর এলাকা অনুমোদন করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী একক সিদ্ধান্তে তা করতে পারবেন না। পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন নিয়ে এটি করতে হবে। একইভাবে পার্লামেন্টে বিলটির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ইসরাইলি আইনপ্রণেতা ইসাবি ফ্রেইজ বলেন, ‘নতুন জেরুজালেম আইন একটি প্রতিযোগিতা আইন। জেরুজালেম থেকে আরব বাসিন্দাদের নির্মূল করার জন্যই এই আইন।’ তিনি বলেন, ‘ইসরাইলি সরকার জেরুজালেমের মধ্য দিয়ে দেওয়াল নির্মাণের পর এবার শহরটির এক লাখ বাসিন্দাকে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।’ বহুমুখী চাপ ও প্রতিবাদের মুখেও ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের রাজধানীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে জেরুজালেম সবার মনযোগের কেন্দ্রে রয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। এরপর জেরুজালেম বিষয়ে যেকোনও সিদ্ধান্ত অকার্যকর ঘোষণা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদেও প্রস্তাব পাস করা হয়। আল-জাজিরা, হারেৎজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ