Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আসামে নাগরিকত্ব নির্ধারণ, স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : আসামে নাগরিকত্ব বিষয়ক ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি)তে অনেক বাংলাভাষী স্থানীয় মুসলিমের নাম ওঠেনি। এর মধ্যে রয়েছেন অল আসাম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট আজিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আইনুদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া বাদ পড়েছেন অনেক মুসলিম। এরই প্রেক্ষিতে ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে নাগরিকত্ব নির্ধারণের দাবি করছেন অনেকে। নাগরিকত্ব নির্ধারণ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে আসামে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, উপজাতি এ নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত খবরে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আসামের উত্তরাঞ্চলে বাংলাভাষী মুসলিম বা অভিবাসীর সংখ্যা কম। এ জন্য ওই অঞ্চলে নাগরিকত্ব নির্ধারণের তালিকা দ্রæত করা যাচ্ছে। কিন্তু নিম্নাঞ্চল বা দক্ষিণাঞ্চলের দিকে রয়েছেন প্রচুর বাংলাভাষী মুসলিম। তাদেরকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দাবি করা হয় স্থানীয়ভাবে। বলা হয়, তারা বাংলাদেশী অভিবাসী। তাদেরকে শনাক্ত করে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য শুরু হয়েছে নাগরিকত্বের রেজিস্টার হালনাগাদ কার্যক্রম। এরই অংশ হিসেবে গত রোববার দিবাগত রাতে প্রথম খসড়া তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে ও পরে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, এ প্রক্রিয়ায় অবৈধ হতে পারেন ৩০ থেকে ৪০ লাখ মুসলিম এবং তাদেরকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। অজিত রাভা (৪৯) বলেন, অবৈধ অভিবাসী শনাক্তকরতে গিয়ে এনআরসি আধুনিকায়ন করার সময় তা ধর্মের ভিত্তিতে হওয়া উচিত নয়। এমনিতেই ভারত ঘোষণা দিয়েছে, তারা হিন্দু অভিবাসীদের বৈধতা দেবে। আসামের রাভা ও অন্যান্য আদি জাতিগোষ্ঠী স¤প্রদায় নিজেদেরকে ভূমিপুত্র হিসেবে পরিচয় দেয়। তারা এ বিষয়ে সচেতন যে, ২০১৬ সালের প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী পাস হলে তার আওতায় হিন্দু অভিবাসীরা বৈধতা পাবেন। অজিত রাভা গোয়ালপাড়ার শালপাড়ার একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এনআরসি নবায়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই আমরা। তবে খুব বেশি মনে হচ্ছে, যারা অভিবাসী তারা ধর্মীয় পরিচয়ে অভিবাসীই থেকে যাবেন। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ বা যেকোনো জাতিসত্তার ক্ষেত্রে একই নীতি গ্রহণ করা উচিত সরকারের। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, দৃশ্যত ক্ষমতাসীন বিজেপি দ্বিমুখী আচরণ করছে। তারা মুসলিমদেরকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে হিন্দুদের দেশভাগের সময়ে ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত শরণার্থী হিসেবে দেখছে। এনআরসি নিয়ে তাই আসামের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শালপাড়ার স্কুল শিক্ষক চিত্তরঞ্জন রাভা। তিনি মনে করেন আসামের মানুষ একটি সঠিক নাগরিকত্বের তালিকা পাবে। করবি উপজাতির সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী করবি কালচারাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট চন্দ্রসিং ক্রো একটি সঠিক তালিকার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে নাগরিকত্ব বিষয়ক একটি সরকারি এনআরসি পাবো আমরা। তাতে থাকবে না অভিবাসীদের নাম। এখানে উল্লেখ্য, অভিবাসী হিসেবে যাদেরকে দায়ী করছে আসাম তাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রধান ক্ষোভ হলো অর্থনৈতিক। এ খাতে তারা ওইসব কথিত অভিবাসীদের কাছে পরাজিত হচ্ছে। এটাই রাভা ও অন্য উপজাতি স¤প্রদায়ের প্রধান সমস্যা। এ ছাড়া আসামে মুসলিম অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি এসব স¤প্রদায়ের কাছে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। চন্দ্রসিং ক্রো আরো বলেন, করবি অ্যাংলং এলাকার রংপুর মাটিখোলায় ১৯৬০-এর দশক থেকে বসতি স্থাপন করা শুরু করেছে হিন্দু অভিবাসীরা। তাতে করবিদের জন্য প্রচুর সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের কাছে আমরা শুধু আমাদের জমিই হারাইনি। একই সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সুবিধাগুলোও তারা নিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয় কবি উজ্বল পাওগাম। তিনি মিশিং উপজাতির সদস্য। একটি সঠিক এনআরসি পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, হ্যাঁ। আমি আস্থাশীল। নাগরিকত্বের দাবি করে করা আবেদনগুলো যাচাই করার ক্ষেত্রে এনআরসির কর্মকর্তাদের কোনো ভুল করা উচিত হবে না। একটি ভুলের জন্য একজন অবৈধ অভিবাসী হয়ে যেতে পারেন বৈধ ভারতীয়। অভিবাসীদেরকে ফিরে যেতেই হবে। কারণ, তারা আমাদের অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর বড় প্রভাব ফেলছে। বোরো উপজাতির সদস্য প্রমোদ বোরো। তিনি অল বোরো স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টও। তিনি বলেন, এনআরসি নিয়ে বোড়োরা দ্বিধাদ্ব›েদ্ব। যেহেতু সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের নজরদারির অধীনে এনআরসি নবায়ন করা হচ্ছে তাই এ নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও আমাদের মধ্যে দ্বিধাদ্ব›দ্ব কাজ করে। কারণ, রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক পর্যায়ে কি হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই। অন্যদিকে ধর্মীয় পরিচয় যা-ই হোক না কেন, অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেয়া হোক- এমনটা চাইছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএএসইউ)। এ সংগঠনের উপদেষ্টা সমুজ্বল ভট্টাচার্য বলেন, আসাম চুক্তি বলে যে, যারা ১৯৭১ সালের ২৪ শে মার্চের আগে আসামে এসেছিলেন তারা ধর্মীয় পরিচয় যা-ই হোক তারা আসামে থাকতে পারবে। কিন্তু এই তারিখের পরে যারাই আসামে এসেছেন তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। সরকারকে এ বিষয়টি জানাতে হবে এবং দ্রæততার সঙ্গে তা করতে হবে। ১৯৮৫ সালে সম্পাদিত আসাম অ্যাকর্ডের অধীনে এনআরসি নবায়ন করা হচ্ছে। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সরকারের সময়ে এতে স্বাক্ষর করেছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। তার পর থেকেই এনআরসি নবায়ন নিয়ে সোচ্চার সমুজ্বল ভট্টাচার্য। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অব ইন্ডিয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ