Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেঘনার টোলবুথে বিলীন ৪ লেনের সুফল

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : যানজটমুক্ত মহাসড়কে যানবাহন চলবে নির্ধারিত গতিতে। এ লক্ষ্যে অর্থনীতিতে গতি আনতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু চার লেন নির্মাণের এক বছর যেতে না যেতেই প্রতিনিয়ত ১৫ থেকে ২০ কি.মি. দীর্ঘ যানজটে স্থির হয়ে থাকছে এ মহাসড়ক। ভুক্তভোগিদে যাত্রী ও চালকদের মতে, চার লেনের মহাসড়কের শুধুমাত্র মেঘনা সেতু পার হতেই একেকটি যানবাহনকে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা বা কোনো কোনো সময় তারও বেশি সময় আটকে থাকতে হচ্ছে। মেঘনা সেতুতে টোল আদায়ের জন্য এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, চার লেনের মহাসড়ক ধরে যানবাহনগুলো এসে দুই লেনের সেতুতে উঠছে। এতে করে এমনিতেই চাপ বেড়ে যাচ্ছে। মেঘনা সেতুতে টোল আদায়ের জন্য আটটি বুথ বসানো হয়েছে। এই আটটি বুথে টোল আদায়ের সময় অনেকে বেশি সময় নষ্ট হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগি যাত্রী ও গাড়ির চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আতঙোকর নাম মেঘনা সেতু। ঢাকা থেকে একটি বাস ছেড়ে মেঘনা সেতু অতিক্রম করে গেলেই যাত্রী বা চালকদের তেমন কোনো ভাবনা থাকে না। যদিও বেশ কিছুদিন ধরেই ফেণীতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। নির্মাণাধীন একটি রেলক্রসিংয়ের কারনে সৃষ্ট ওই যানজটকে স্থায়ী মনে করছেন না কেউই। ভুক্তভোগিরা জানান, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে মেঘনা সেতুই থাকে প্রধান ভাবনায়। এই সেতু পার হয়ে কাঁচপুর সেতু অতিক্রম করা মানেই ঢাকা পৌঁছা। কিন্তু সেতুর টোল বুথে অব্যবস্থাপনার কারনে অনেক সময় বেশি লাগে। অনেকের হিসাবে ৮টি টোল বুথ থেকে মিনিটে যতোগুলো গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা তার অর্ধেকও সম্ভব হয় না। এতে করে টোল বুথে গাড়ির দীর্ঘ সারি মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি করে। আবার টোলবুথ অতিক্রমের পর সেতুতে ওঠার আগে যানবাহনগুলো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। টোলপ্লাজায় প্রবেশের আগেও চলে একইরকম প্রতিযোগিতা। এ কারনে সেখানেও কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে।
জানা গেছে, চালুর পর মেঘনা সেতুতে টোলবুথ ছিল চারটি। চলতি বছরের ২২ জুলাই সেতুতে ডিজিটাল টোল আদায় পদ্ধতি উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যানজট কমাতে ওইদিনই অতিরিক্ত বুথ বসানোর ঘোষণা দেন তিনি। এরপর কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো হয় আরো চারটি বুথ। গত সেপ্টেম্বরে চালু হয় এসব বুথ। কিন্তু টোলবুথ বাড়ানোর পর যানজট তো কমেইনি, উল্টো যান চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। আগে মাঝে মধ্যে যানজট হতো, এখন প্রতিদিনই হচ্ছে।
ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনা সেতুর টোলবুথকে কেন্দ্র করে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিনই। সেতুর দুই পারে একই চিত্র। দুদিকেই ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার যানজট এখন স্বাভাবিক ঘটনা। আর ছুটির আগের দিনে, বা ছুটি শেষ দিনে এই যানজট ১০-১৫ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। কয়েকজন বাস চালক জানান, আগে সেতুর ভেতরে যানজট হতো। বুথের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন টোলপ্লাজা পার হয়ে সেতুতে ওঠার আগেই দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। যা দীর্ঘায়িত হয়ে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্তও ছড়িয়ে পড়ছে কখনো কখনো।
ঢাকা-চট্টগ্রম রুটে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের এক চালক জানান, সেতু পর্যন্ত আসতে চার-পাঁচ কিলোমিটার যানজটে প্রায় ১ ঘণ্টা বাড়তি সময় লেগে যায়। আবার সেতুর ওপরে উঠেও কমবেশি ৩০ মিনিট আটকে থাকতে হয়। এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিনই। মহাসড়কের আরেক সেতু মেঘনা-গোমতীরও একই অবস্থা। দুই লেনের এ সেতুর দুপাশেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, এখানেও টোল আদায়ে বাড়তি সময় লাগার কারণে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের।
এ দুই সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্বে আছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এখানকার কর্মকর্তাদের দাবি, দুই লেনের সেতুর কারণে যানজট হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে নতুন সেতু না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে হাইওয়ে পুলিশের অভিযোগ, টোল আদায়ে অনিয়মের কারণেও যানজট পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করছে। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, এখানে যানজট তৈরি হচ্ছে মূলত মেঘনা সেতুর কারণে। তিনি বলেন, সেতু থেকে শুরু করে চার কিলোমিটার দূরে এসে ঠেকে গাড়ির জটলা। সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে যানজট পরিস্থিতি ক্রমেই তীব্র হয়ে ওঠে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সেতুর টোলপ্লাজায় অনিয়মের শেষ নেই। ওজন স্কেলে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায় করা হয়। যেসব যানবাহনের চালক অবৈধভাবে টাকা দিতে আপত্তি জানান, তাদের দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয়। আটকে থাকা এসব যানবাহনের পেছনে তৈরি হয় গাড়ির দীর্ঘ সারি।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে নির্মিত মেঘনা সেতুটি দুই লেনের। জাপানের অর্থায়নে মেঘনা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয় ১৯৯১ সালের নভেম্বরে। নাম ‘জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ ১’ হলেও এটি মেঘনা সেতু নামেই বেশি পরিচিত। মহাসড়কটিতেই মেঘনা-গোমতী নামে আরো একটি দুই লেন সেতু আছে। অথচ মহাসড়কটি চার লেন করার সময় দুই লেনের এই দুই সেতুর অসুবিধার কথা বিবেচনাই করা হয়নি। এতে করে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়ক চার লেন করার পরও দুই লেনের সেতুর কারণে এর সুফল পুরোপুরি মিলছে না। এখন নতুন অনসঙ্গ হিসাবে যোগ হয়েছে ৮টি টোলবুথ।
এদিকে, চলতি বছর জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অনুষ্ঠিত আইন শৃংখলা বিষয়ক সভায় বক্তারা অভিযোগ করেছিলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা টোলপ্লাজায় ওজন মাপার যন্ত্র স্থাপন ও যানবাহনের টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে মহাসড়কে দিনভর যানজট লেগে থাকে। স্থানীয় প্রশাসন এ সমস্যা নিরসনে সরকারের দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দিলেও গত ৬ মাসে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ