Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফিরে দেখা ২০১৭

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৫৭ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

 দেয়ালে ঝুলন্ত ২০১৭ সালের ক্যালেন্ডারটা আজ থেকে পুরোনো হয়ে গেল। কালের গহŸরে আরো একটি বছর হারিয়ে গেলেও এর কিছু ঘটনা স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে আমাদের স্মৃতিপটে। এসময় বিশ্ব রাজনীতির মত অস্থির ছিল আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনও। বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেটের দিকে নজর দিলে এমন অনেক ঘটনাই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠবে। তেমনি কিছু ঘটনা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন সাজিয়েছেন ইমামুল হাবীব বাপ্পি

ভারতের দাপট, মন্দ যায়নি বাংলাদেশেরও
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০১৭ সাল জুড়েই দাপট দেখিয়েছে ভারত। টেস্ট, ওয়ানডে ও টুয়েন্টি টুয়েন্টিতেই সেরা সাফল্যগুলোর প্রায় সবই ছিল ভারতের। তারপরও আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে পাকিস্তানের শিরোপা জয় ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
চলতি বছর ১১ ম্যাচে অংশ নিয়ে সাত জয়ের স্বাদ পাওয়া ভারত আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিং-এর শীর্ষেও জায়গা করে নেয়। ভারতের মত সাতটি জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকাও। অবশ্য ভারতের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে প্রোটিয়ারা। ওয়ানডেতেও সবচেয়ে বেশি জয় ভারতের। ২৯ ম্যাচে জয় ২১টিতে। টি-২০তেও সবচেয়ে বেশি জয়ের স্বাদ নিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। ১৩ ম্যাচে তাদের জয় ৯টি।
বছর জুড়ে ভারতের দাপটের মাঝে আইসিসির সিদ্বান্তে টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত ক্লাবের নয়া সদস্য হয় আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড। এছাড়া ক্রিকেটের আইনে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আসে বিদায়ী বছরে। পাশাপাশি বছরের শেষদিকে টি-টেন নামে নতুন ফরম্যাটের আর্বিভাবও ঘটে। বছরের শেষটা হয়েছে ‘ছাইদানীর’ যুদ্ধ দিয়ে। ঐতিহ্যের অ্যাশেজে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। প্রথম তিন ম্যাচ জিতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে বছর শেষ করে অজিরা। এছাড়া বছরের শেষদিকে বিপিএল উন্মদনাও ছিল দেখার মত।
ব্যাক্তিগত অর্জনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ডেভিড মিলার, রোহিত শর্মা, স্টিভেন স্মিথ ও বিরাট কোহলির নাম। মিলারের সাথেই টি-টোয়েন্টির দ্রæততম শতকের যৌথ মালিক হন রোহিত। এ বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করেন মিলার। আর ডিসেম্বরে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে মিলারের পাশে বসেন রোহিত। এই রেকর্ড গড়ার কয়েকদিন আগেই প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানডেতে তৃতীয়বারের মত ডাবল-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রোহিত। ৫০ ওভারের ম্যাচে একের অধীক দ্বিশতক হাঁকানো একমাত্র খেলোয়াড়ও রোহিত।
তবে ব্যাক্তিগতভাবে সবচেয়ে ধারাবাহীক ছিল অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের ব্যাট। ২০১৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেন স্মিথ। ১১ ম্যাচে ১৩০৫ রান করেছেন তিনি। চলতি বছর ছয়টি সেঞ্চুরি ও ১টি ডাবল-সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। স্মিথের পরই আছেন ভারতের চেতেশ্বর পূজারা। ১১ ম্যাচে ১১৪০ রান করেছেন এই ডান-হাতি ব্যাটসম্যান। সর্বোচ্চ রান সংগ্রহে এরপরই আছেন দক্ষিণ আফ্রিকা ডিন এলগার। ১২ ম্যাচে বাঁ-হাতির সংগ্রহ ১১২৮ রান।
টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ডান-হাতি স্পিনার নাথান লায়ন। ১১ ম্যাচের ২০ ইনিংসে ৬৩ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ৫৭ উইকেট শিকার করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডান-হাতি পেসার কাগিসো রাবাদা।
বছরের শেষদিকে নতুন রূপে দেখা দেয় টেস্ট ক্রিকেট। প্রথমবারের মত চার দিনের টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। পোর্ট এলিজাবেথের দিবা-রাত্রির সেই ম্যাচে মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে। অনেক নিয়মের বেড়াজালে টেস্ট শুরু হলেও, সেই লড়াই দু’দিনেই শেষ হয়ে যায়।
ক্রিকেটকে ঘিরে বছর জুড়ে মাঠে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে মাঠের বাইরেও। এরমাঝে মাঠের বাইরে ঝড় তুলেন ভারতের দলপতি কোহলি। বলিউড অভিনেত্রী আনুষ্কা শর্মাকে বিয়ে সবার নজর ক্রিকেটের বাইরে নিতে বাধ্য করেছিলেন কোহলি। আর কোহলি-আনুষ্কার বিবাহ-বন্ধনই ছিলো এ বছরের অন্যতম আলোচনার বিষয়।
ক্রিকেটে সময়টা মন্দ যায়নি বাংলাদেশেরও। তিন ফরম্যাটেই বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট ফরম্যাটে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মত হারানোর পাশাপাশি নিজেদের শততম টেস্টে প্রতিপক্ষের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় সেই সাক্ষই বহন করে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা সফরে তিন ফরম্যাটেই সিরিজ ড্র’তে করতে পারা টাইগারদের জন্য বড় অর্জনই। এছাড়া আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফইনাল পর্যন্ত যাওয়া ছিলো মাশরাফি-সাকিবদের জন্য অনন্য এক অর্জন।
এবছর টেস্টে ব্যাটিং-এ মুশফিকুর রহিম ও বোলিং-এ সাকিব আল হাসানের বছর ছিলো। মুশফিকুর যেখানে রান করেছেন ৭৬৬। বল হাতে সাকিব নিয়েছেন ২৯ উইকেট। ওয়ানডেতে ৬৪৬ রান নিয়ে তামিম ইকবাল ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। বোলিং-এ ১৪ উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজুর রহমান হলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী।
এছাড়া বছরের শুরুর দিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিক-সাকিবের বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বড় রানের জুটি। এবং একই সঙ্গে সেই ম্যাচে পরাজয় ভিন্ন দুই অভিজ্ঞতা উপহার দেয় টাইগার ক্রিকেট ভক্তদের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে হারতে বসা ম্যাচ অবিশ্বাস্যভাবে সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কল্যাণে জয়ও মনে রাখার মত। যার ফলে প্রথমবারের মত কোন বিশ্বমঞ্চে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা পায় বাংলাদেশ।

 

 ট্র্যাজেডির নাম ‘ইতালি’, অর্জনে রোনালদোর রিয়াল

ফুটবলের জানালা দিয়ে তাঁকালে অনেক সুখস্মৃতিই মনের জানালায় ভেসে উঠতে পারে। ক্লাব ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদ আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর অর্জন, বিষ্ময় জাগানিয়া রেকর্ড গড়ে বার্সেলোনা থেকে নেইমারের পিএসজিতে যোগদান, লিওনেল মেসির বিয়ে, এমন আরো কত ঘটনা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিফা বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত জায়গা করে নিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পানামা ও আইসল্যান্ড। তবে যে বিষ্ময় ইতালি উপহার দিয়েছে তা সম্ভবত ছিল ফুটবল রোমান্টিকদের কল্পনারও বাইরে। 

বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে ব্রাজিলের পরেই জার্মানির সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় সফলতম দল ইতালি। সেই দলকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে আসছে জুন-জুলাইয়ের রাশিয়া বিশ্বকাপ। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বাছাইপর্বে প্লে-অফে সুইডেনের কাছে হেরে বিশ্বকাপের স্বপ্নভঙ্গ হয় ইতালির। যে ঘটনা শুধু ইতালিয়ানদের জন্যেই নয়, বিশ্ব ফুটবলেই তা জন্ম দেয় বড় এক হতাশা। ‘ইতালিকে ছাড়া বিশ্বকাপ’ এমনটা ভাবতেই যেন ফুটবল ভক্তদের মনে এক ধরণের হাহাকার তৈরী হয়। ৬০ বছর পর বিশ্বকাপের আসর থেকে বাদ পড়তে হয় আজ্জুরিদের। একই রকম ঘটনা ঘটতে চলেছিল বিশ্বকাপ ফটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল আর্জেন্িটনাকে ঘিরে। কিন্তু শেষ ম্যাচে লিওনেল মেসির জাদুকরী হ্যাটট্রিকে সেই শঙ্কা দুর হয়। এছাড়া তরুণ এক দল নিয়ে জার্মানির ফিফা কনফেডারেশন কাপ জয়ও ছিল অপ্রাত্যাশিত এক ঘটনা।
ক্লাব ফটবলের কথা বললেই সবার আগে চলে আসবে একটি নামÑ রিয়াল মাদ্রিদ। প্রায় ছয় দশক পর প্রথমবারের মত ডাবল জেতে বার্নাব্যুর দলটি। সব মিলে বছরজুড়ে পাঁচ-পাঁচটি শিরোপা ইউরোপিয়ান জায়ান্টদের শোকেসে জায়গা করে নেয়। আর এই সব সাফল্য যার হাত ধরে সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও বছরজুড়ে ভুষিত হয়েছেন একের পর এক সব খেতাবে। ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতে বছর শুরু করেছিলেন। আর শেষ করেছেন ব্যালন ডি’অর জিতে। প্রতিদ্ব›দ্বী মেসির সমান পঞ্চম ফিফা বর্ষসেরার পুরষ্কার ওঠে রোনালদোর হাতে।
তার কল্যাণেই ১৯৫৮ সালের পর এই প্রথম এক মৌসুমে লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে রিয়াল। রোনালদোর ঝলকেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফাইনাল পর্যন্ত অন্য চেহারায় দেখা দেয় রিয়াল। বায়ার্ন মিউনিখ ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর ফাইনালে জুভেন্টাসের বিপক্ষে জোড়া গোল করে দলকে শিরোপার স্বাদ নেন পর্তুগিজ তারকা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামকরণের পর প্রথম দল হিসেবে টানা দু’বার ইউরোপ সেরার আসনে বসে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। এরপর একে একে উয়েফা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ আর ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফিও নিজেদের দখলে নেয় রিয়াল। 
সিআর-সেভেনের মত ক্লাব ফুটবলে আলোকিত ছিলেন বিশ্ব ফুটবলের জাদুকর লিওনেল মেসি। গোলের সংখ্যায় রোনালদোর চেয়ে এগিয়ে থাকলেও দলীয় অর্জনে ছিলেন পিছিয়ে। তবে দেশের হয়ে যে অর্জন তিনি এনে দিয়েছেন তা সত্যিই বিষ্ময়কর। নিজের জাদুতেই খাদের কিনারে পড়ে যাওয়া আর্জেন্টিনাকে টেনে তুলে বিশ্বকাপে পৌঁছে দেন।
একইভাবে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে চিলির বাদ পড়া, আর মধ্য আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপে খেলতে না পারাও ছিল বছরের অন্যতম আলোচিত বিষয়। আর বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে জায়গা করে নিয়ে চমক উপহার দেয় মধ্য আমেরিকার ছোট্ট দেশ পানামা, এবং ইউরোপের সাড়ে তিন লক্ষের কম জনসংখ্যান দেশ আইসল্যান্ড। মিশরের মতো দেশের বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়াটাও ছিল চমক। ২০২৬ বিশ্বকাপ থেকে ৪৮ দল নিয়ে আয়োজনের ঘোষণা ছিলো ফিফার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
২০১৭ সালের ফুটবলে বিস্ময়ের আরেক নাম নেইমার। প্রায় দুই মাসের জল্পনা-কল্পনা আর নানা হিসাব-নিকাশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ক্লাব ফুটবলে রেকর্ড ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেন এ ব্রাজিলিয়ান তারকা।

 



 

Show all comments
  • কাজী আব্দুছ ছোবহান ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১১:৩৩ এএম says : 0
    কোনো মন্তব্য নাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ