পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : চলতি বছর প্রথম শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা সবক্ষেত্রেই প্রশ্নফাঁসে আলোচিত ছিল। বছরের শেষ সময়ে এসে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য (ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে) নিয়েও কম আলোচনা হয়নি। তবে এর সাথে প্রাথমিক ও নন-এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলনে শিক্ষাঙ্গনে স্থবিরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকদের ১০টি সংগঠনের জোট বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক মহাজোট। দাবি মানা না হলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করারও হুমকী দেন শিক্ষকরা। টানা তিনদিন অনশনের পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা আন্দোলন স্থগিত করে ফিরে যান। তবে একটি পক্ষ তখনও দাবির পক্ষে আন্দোলন করতে থাকেন। আর যারা ফিরে গেছেন তারা জানিয়েছেন দাবি মেনে নেওয়া না হলো আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি নিয়ে তারা ঢাকায় আসবেন। তখন আর আশ্বাসে কোন কাজ হবে না।
এর পরের দিনই গত মঙ্গলবার এমপিওভুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। দাবি মানা না হলে আগামীকাল থেকে অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এর ফলে নতুন বছরের শুরুতে ২০ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম স্থবিরতা হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। আন্দোলন ছেড়ে ক্লাস রুমে না ফিরলে অচল হয়ে পড়বে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্তরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় আছে। যা এই স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক-চতুর্থাংশ। অথচ ২০১০ সালের পর থেকে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত হয়নি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৮০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী ২০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বেতন-ভাতা না পেয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অন্যদিকে দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে ২১ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন বেড়েছে। এ অবস্থায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির দাবিতে আমরণ অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন। আগামীকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করবেন। তাদের এই কর্মসূচিতে অংশ নিবেন সরকার স্বীকৃত সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসা শিক্ষক-কর্মচারীরা গতকাল শুক্রবার দুপুরে এক বৈঠকে অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদ্দুন্নবী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা এমপিওভুক্তির জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। প্রতিবারই আমাদেরকে আশ্বাস্ত করেই দায় সারছে কর্তৃপক্ষ। একদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হচ্ছে। অন্যদিকে আমারা দীর্ঘ ৭ বছর ধরে কোন বেতন-ভাতা ছাড়াই চাকরি করছি। এভাবে কতদিন চলবে। তিনি বলেন, কোনো রকম আশ্বাস নয়, এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন থেকে তাঁরা সরে দাঁড়াবেন না। দাবি আদায়ের জন্য এ পর্যন্ত ২০ বার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়, প্রতিবারই সরকার শুধু আশ্বাসই দিয়েছে। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন ছাড়াও কঠিন থেকে কঠিনতর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল চতুর্থ দিনের মতো তাদের কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নেয়। এ ছাড়া রাতেও অনেক শিক্ষক-কর্মচারী অবস্থান নিয়ে থাকছেন। অবস্থানরত শিক্ষক নেতারা বলেন, দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার ৯৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যবস্থাপনা নির্ভর। বিভিন্ন স্তরে সাত হাজারের বেশি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় আছে; যা এই স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চার ভাগের এক ভাগ। ১৫ থেকে ২০ বছর বিনা বেতনে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁদের এই মানবেতর জীবন থেকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপও দাবি করেন শিক্ষকরা। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায় সারা দেশের নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ঢাকায় অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকে আরও বেগবান করার আহŸান জানান।
শিক্ষকদের এই আন্দোলনের বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হাসান আজিজুল হক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এমপিওভুক্ত হওয়ার নীতিমালার শর্ত পূরণ করে তাহলে শিক্ষকদের এই দাবি অবশ্যই যৌক্তিক। তিনি বলেন, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করা উচিত। শিক্ষকসমাজকে পিছনে রেখে রাষ্ট্র কখনোই এগিয়ে যেতে পারবে না। নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীতের আন্দোলনের এই ইস্যুকে সরকারের অবশ্যই দ্রæত হাতে নেওয়া উচিত। অবহেলা করা ঠিক হবে না। তাদের দাবি নিয়ে শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা করে একটা সমাধানে যাওয়া দরকার।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এমপিওভুক্ত করার জন্য তিনি ও তাঁর শিক্ষা মন্ত্রণালয় আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কোন নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত হবে, সেটা ঠিক করতে অর্থ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা যে নীতিমালা করে দেবে, সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।
এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে বেতন বৈষম্য দূর করার দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলন শুরু করেন প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকরা। প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকদের ১০টি শিক্ষকদের জোট ওই আন্দোলন পরিচালনা করেন। মহাজোটের অধীনে সহকারী শিক্ষকদের ১০টি সংগঠনের হাজার হাজার শিক্ষক দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসে যোগ দেন অনশন কর্মসূচিতে। তাদের দাবি ছিল আগের বেতন স্কেলগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পেতেন। কিন্তু ২০১৫ সালের বেতন কাঠামোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ব্যবধান তিন ধাপ রাখা হয়। এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। আর প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন দশম গ্রেডে। সহকারি শিক্ষকরা এ বৈষম্য নিরসনে প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে ১১তম গ্রেডে বেতন চান। টানা তিনদিন অনশন কর্মসূচি পালনের পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পর আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষক নেতারা। তবে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা বলেছেন, আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা ফিরে যাচ্ছি। মন্ত্রণালয়ের উপর আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই। তবে শুধু আন্দোলন স্থগিতের জন্য আশ্বাস হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচির মুখোমুখী হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।