Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুশিয়ারায় সেতু না থাকায় দুই উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবুল কালাম আজাদ, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে : কুশিয়ারা নদীর উপর সেতু না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। সেতু নির্মাণ হলে সিলেটের বালাগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মধ্যে সরাসরি ‘সেতু বন্ধন’ এর দ্বার উন্মোচিত হবে। এ সেতু নির্মাণ করা হলে বালাগঞ্জ উপজেলাসহ ওসমানীনগর, রাজনগর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যস্ততার উন্নতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে একধাপ এগিয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলা শহরের সাথে সরাসরি আসা-যাওয়া করতে পারবেন। ফলে সহজতর হয়ে উঠবে শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করার। সড়েজমিনে দেখা যায়, কুশিয়ারা নদীর দক্ষিণ পারে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা এবং উত্তর পারে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের অবস্থান রয়েছে। রাজনগর উপজেলার উত্তরাঞ্চলের ফতেহপুর, উত্তরভাগ, পাঁচগাঁও ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাসিন্দারা কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিয়ে বালাগঞ্জ সদর হয়ে বিভাগীয় শহর আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। অপর দিকে বালাগঞ্জের লোকজন কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিয়ে রাজনগর হয়ে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ব্রিটিশ আমল থেকেই রাজনগরের লোকজন বালাগঞ্জ বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছেন। অনুরুপভাবে রাজনগরের শিক্ষার্থীরাও সেই অতিত কাল থেকে বালাগঞ্জ সদরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া করে আসছে। বর্ষা মৌসুমে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে প্রবল ¯্রােতের মধ্যে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকায় নদী পার হয়ে থাকেন। তাছাড়া নৌকা ডুবির ঘটনাতো হরহামেশাই ঘটছে। ইত্যাদি নানা কারণে কুশিয়ারা নদীর উপর সেতু নির্মাণ ছিল এলাকাবাসীর যোক্তিক দাবি। এলাকাবাসীর দাবির কারণে প্রায় দুই বছর পূর্বে সেতু নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হলেও কার্যত কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতু নির্মাণে কেন কাল ক্ষেপণ করছেন আমারা বুঝতে পারছি না। কেন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা বলছেন, প্রায় ৩শ’ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় একশ কোটি টাকা। একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে তা একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, বালাগঞ্জ বাজারস্থ খেয়া ঘাট ও রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বিলবাড়ী গ্রাম এলাকায় গড়ে উঠা খেয়াঘাট নামক বাজারের ঘাট দিয়ে ছোট-ছোট নৌকায় লোকজন কুশিয়ারা নদী পার হচ্ছেন। শিক্ষার্থী, মহিলা ও শিশু সহ ১৫-২০ জন লোককে তুলে একেকটি নৌকা বোঝাই দিয়ে নৌকা ‘ডুবুডুবু’ অবস্থায় নদী পার করা হচ্ছে। এমনকি নৌকা দিয়ে মোটরসাইকেলও পার করতে দেখা যায়। নদীর দুই পারে দুটি করে চারটি খেয়া রয়েছে। ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নৌকা দিয়ে নদী পারপার হয়ে থাকেন। নদীর উভয় তীরে গাড়ি চলাচল করছে অথচ একটি সেতুর অভাবে দুই উপজেলা সহ ৩টি জেলা শহরের সাথে তাদের কষ্ট করে যোগাযোগ করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেতু নির্মাণের দাবিতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে স্থানীয়রা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এ দাবি আদায়ে ২০০৫ সালে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আয়োজিত এক সভার মাধ্যমে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে যোগাযোগ মন্ত্রী, স্থানীয় এমপি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দেন। তৎকালীন সময়ে বালাগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে নিয়ে ৬৫সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়। এদিকে বালাগঞ্জ বাজার এলাকায় কুশিয়ারা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর একটি বিশেষজ্ঞ দল ২০১৩ সালে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শনও করেন। বালাগঞ্জ উপজেলা বিআরডিবির চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আনহার মিয়া বলেন, কুশিয়ারা নদীতে সেতু নির্মাণ হলে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন সাধিত হবে। এ যুক্তিক দাবি পূরণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুশিয়ারায় সেতু না থাকায় দুই উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরমে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ