পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুসলমানদের ঈমানী চেতনায় তেজোদৃপ্ত হতে হবে -পীর সাহেব কাগতিয়া
চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে গতকাল (সোমবার) মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটির উদ্যোগে গাউছুল আজম কনফারেন্সে নবীপ্রেমিক লাখো মানুষের ঢল নামে। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবারের পীর আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ আহমদী (ম.জি.আ.) বলেন, অগণিত যুবককে নবীপ্রেম-ভালোবাসায় সিক্ত করে কোরআন-সুন্নাহর পূর্ণ আমলে উদ্দীপ্ত করেছেন হযরত গাউছুল আজম (রহঃ)। তার প্রতিষ্ঠিত কাগতিয়া দরবারে রয়েছে শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ, নবীপ্রেমে সিক্ত হয়ে নবীজীর সকল সুন্নাত ও আদর্শ বাস্তবায়নের অনন্য আধ্যাত্মিক আয়োজন।
কনফারেন্সে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, বিশ্বাসযোগ্য জনমত গঠনে আলেম মাশায়েখগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এদেশের লাখ লাখ মসজিদ এবং প্রতিবছর তিন লাখের বেশি ওয়াজ মাহফিল থেকেই জনমত তৈরী হয়। জনমত গঠনে এর চেয়ে বড় কোন শক্তি নেই। আগামী নির্বাচন এবং আগামী দিনের নেতৃত্বে তরুণ সমাজ হবে নিয়ামক শক্তি মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরী হয়েছে। এরাই আগামী দিনে সব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। মুসলমানরাই আগামী দিনে এ উপমহাদেশসহ সারাবিশ্বে নেতৃত্ব দেবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আরও বলেন, এদেশের দরবার ও মাদরাসা নীতি-নৈতিকতাভিত্তিক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মাদকের ভয়াল বিস্তারে সমাজে অপরাধ বাড়ছে। এতে করে সমাজ, পরিবারে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। মাদকাসক্তরা অদৃশ্যমান অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। ইন্টারনেটের অপব্যবহারের কারণেও যুব সমাজের মধ্যে অনৈতিকতা ও অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। অনৈতিকতা থেকে তরুণ প্রজন্মকে মূল্যবোধের দিকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন একটি দর্শনের। এ দর্শন পীর-মাশায়েখদের দরবারে রয়েছে। এদেশের আলেম-মাশায়েখগণ যুবসমাজকে ন্যায়-নীতি ও সুপথে আনার কাজ করে যাচ্ছেন। ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আলেমসমাজ ও পীর-মাশায়েখগণ বিশ্বাসযোগ্য জনমত তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা সমাজ ও নেতৃত্ব পরিবর্তনে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিগত ১০ বছরে দেশে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়েছে। এ প্রজন্মের তরুণরাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিয়ামক ভূমিকা পালন করবে। আগামী দিনের নেতৃত্বেও তাদের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে মুসলমানদের উত্থান হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী দিনে মুসলমানরাই বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। ট্রাম্প প্রশাসন খ্রিস্টান ধর্মভিত্তিক নীতি নৈতিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমেরিকা থেকে শুরু করে পশ্চিমা দেশে খ্রিস্টীয় মতবাদের প্রতি সরকারগুলোর আগ্রহ বাড়ছে। ঠিক একইসাথে ওইসব দেশে মুসলমানদের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানরা এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে তুরস্কের নতুন প্রজন্ম ইসলামী মূল্যবোধের পাশাপাশি অত্যাধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে উঠছে। ফলে আগামী দিনে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য মানুষ তৈরি হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে মুসলমানের সংখ্যা হবে একশ কোটি। এত বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ তৈরিতে আলেমসমাজ ভূমিকা রাখছেন।
কাগতিয়া দরবার যুবসমাজকে ইসলামী মূল্যবোধের শিক্ষা দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দরবার ইসলামী শিক্ষা বিস্তারেও যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে গড়ে উঠা কাগতিয়া মাদরাসায় মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আগামী দিনের নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য নাগরিক তৈরি করছে এ মাদরাসা। অনেক বছর আগে ওই মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাস শুরু করার ঘটনাকে কাগতিয়া দরবারের পীর সাহেবের দূরদর্শিতা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কাগতিয়ায় আন্তর্জাতিক মানের মসজিদ নির্মাণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মসজিদের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে ভিন্ন এক পরিচিতি পাবে। কাগতিয়া দরবারের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এ দরবারের অনুসারীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামী মূল্যবোধের বিকাশ ও লালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কাগতিয়ার পীর সাহেব কথা নয়; কাজের মাধ্যমেই আধ্যাত্মিক আদর্শকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রেখে চলেছেন।
পবিত্র জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) ও কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম (রহঃ) স্মরণে এ কনফারেন্সের আয়োজন করে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ। অরাজনৈতিক আধ্যাত্মিক এ সংগঠনের সম্মেলনকে ঘিরে লালদীঘি ময়দান ও আশপাশের এলাকায় মানুষের ঢল নামে। বাদে জোহর শুরু হয় সম্মেলনের মূল কার্যক্রম। মাগরিব নাগাদ জনতার ঢল ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের সড়কে বিস্তৃত হয়। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নবীপ্রেমিক মানুষ সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনকে ঘিরে লালদীঘি ময়দান সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। সুউচ্চ দৃষ্টিনন্দন মঞ্চের পাশাপাশি মুসল্লিদের বসার জন্য ছিল সুব্যবস্থা। সুশৃঙ্খল পরিবেশে আগত মুসল্লিরা সেখানে জোহর, আসর, মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে সম্মেলনের কার্যক্রম। দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনার মধ্যদিয়ে সম্মেলন শেষ হয়।
প্রধান অতিথি ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ আহমদী (ম.জি.আ.) বিশ্বব্যাপী মুসলিম জাতি বিশেষ করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন এবং মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলা বায়তুল মোকাদ্দাসধন্য ফিলিস্তিনের রাজধানী জেরুজালেম দখলের যে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এসব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে হলে মুসলমানদেরকে তরিক্বতের চর্চায় রূহানীশক্তিতে জাগরিত ও দৃঢ় ঈমানী চেতনায় তেজোদৃপ্ত হতে হবে, মুসলিম মিল্লাতের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে হবে। যুব সমাজের উদ্দেশে বলেন, আলোকিত যুব সমাজ গড়তে পারে একটি পাপমুক্ত মানবিক বিশ্ব। আর এ ধরনের আলোকিত যুব সমাজ গড়তে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে কাগতিয়া দরবার ও মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি। যুগশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক মহামনীষী গাউছুল আজম (রহঃ)’র জীবন, কর্ম ও দর্শনে রয়েছে যুব সমাজের জন্য আলোর দিক নির্দেশনা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, কাগতিয়া দরবারসহ এদেশের পীর-আউলিয়াদের দরবারে মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া হয়। প্রতিটি দরবারের সাথেই রয়েছে মাদরাসা। এসব মাদরাসায় নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন নাগরিক তৈরি করছে। দেশের ১৬ হাজার মাদরাসা আদর্শ নাগরিক তৈরি করে সুন্দর সমাজ উপহার দিচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষার কারণেই দেশে জঙ্গিবাদ ঠাঁই পাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন হচ্ছে।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম ছায়েফ উল্যা বলেন, মাদরাসা শিক্ষা ও পীর-মাশায়েখগণের দরবার থেকে মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া হয়। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আলেমসমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকার এদেশের আলেমদের শত বছরের স্বপ্ন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি এখন স্বপ্ন নয় বাস্তব।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুরের সভাপতিত্বে কনফারেন্সে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাসান মুরাদ বিপ্লব, এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ নেজাম উদ্দিন, আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম হানফি, আল্লামা মুফতি আনোয়ারুল আলম ছিদ্দিকি, আল্লামা মোহাম্মদ আশেকুর রহমান, আল্লামা এমদাদুল হক মুনিরী, আল্লামা মোহাম্মদ সেকান্দর আলী ও আল্লামা মুহাম্মদ মুহাম্মদ ফোরকান প্রমুখ। কনফারেন্স সার্বিক সমন্বয় করেন মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক মুহাম্মদ ফোরকান মিয়া। সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর বলেন, তরিক্বতের মাধ্যমে ছাত্র ও যুবকদেরকে মাদক, সন্ত্রাসসহ সকল অপরাধমূলক কাজ থেকে মুক্ত করে পরিশীলিত জীবনযাপনে প্রেরণা যোগাচ্ছে কাগতিয়া দরবার ও মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি।
গাউছুল আজম কনফারেন্সকে ঘিরে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক মোড়ে ফেস্টুন, ব্যানার এবং আলোকসজ্জিত করা হয়। সম্মেলনে মহানগরী ছাড়াও আশপাশের উপজেলা রাউজান, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারাতেও সাজ সাজ রব পড়ে। নগরীর প্রবেশপথগুলোতে দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করা হয়। দেশের বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, ওমান, কাতার, সউদি আরব, আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও কাগতিয়া দরবারের অনুসারী শত শত প্রবাসী সম্মেলনে যোগ দেন। এতে দেশবরেণ্য বহু ওলামায়ে কেরাম, শিক্ষাবিদ, নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবীসহ সর্বস্তরের সুন্নি জনতা শরিক হন। সুশৃঙ্খল এই কনফারেন্সে তরুণ-যুব সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।