Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চালের দাম বৃদ্ধিতে দারিদ্র্যসীমায় পাঁচ লাখ মানুষ

সানেমের গবেষণা প্রতিবেদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

দারিদ্র্য বিমোচনে গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ ধারাবাহিক যে সাফল্য দেখিয়ে আসছে, চালের দাম বৃদ্ধিতে তা ছেদ পড়েছে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিং-সানেমের গবেষণা বলছে, চালতি বছর চালের দাম বাড়ায় দারিদ্র্যসীমা থেকে বের হয়ে আসা পাঁচ লাখ ২০ হাজার মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় ঢুকেছে।
গতকার শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। বাংলাদেশের অর্থনীতির ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা তুলে ধরতেই এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
চলতি বছর বন্যায় হাওড় এলাকা ছাড়াও দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধানের উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ প্রধানত এই মৌসুমের ওপর নির্ভর করে আর এই সময় উৎপাদনে ধস নামায় চালের দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে। এক পর্যায়ে মোটা চালের দাম কেজি প্রতি ৫০ টাকার বেশি এবং চিকন চাল ৭০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। কেবল চালের দাম বেড়েছে, এমন নয়, ধান তোলা থেকে শুরু করে চাল বাজারে আনা পর্যন্ত নানা ধাপেই স্বল্প আয়ের মানুষের আয়ের পথ সংকুচিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার নিজে চাল আমদানির পাশাপাশি বেসরকারি খাতে আমদানি বাড়াতে শুল্ক তুলে দিয়েছে। এতে চালের দাম কিছুটা কমে আসলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দাম এখনও ৩০ থেকে শতাংশ বেশি।
সানেমের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বড় ধরনের আমদানি সত্তে¡ও চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই বছর চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দারিদ্র্যের হার দশমিক ৩২ শতাংশ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ এই বছর চালের দাম বৃদ্ধির ফলে পাঁচ লাখ ২০ হাজার মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো, দেশে দারিদ্র্যমুক্তির কাজ এগিয়ে চললেও এই হার আগের চেয়ে কমেছে। ২০০২ থেকে ২০০৫ সালে বার্ষিক দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০০৫ থেকে ২০১০ সালে ১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে। ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে এটি আরো কমে ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে যায়।
সেলিম রায়হান বলেন বলেন, বাংলাদেশের স্বাভাবিক জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বজায় থাকলে সামগ্রিক ও চরম দারিদ্র্যে হার ২০৩০ সালের মধ্যে যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও চার শতাংশে নেমে আসবে। আর জিডিপির গড় বৃদ্ধির হার আট শতাংশ হলে সামগ্রিক ও চরম দারিদ্র্যতার হার যথাক্রমে ৬ দশমিক শূণ্য ৫ এবং ও দুই শতাংশ হবে।
এই গবেষকের মতে বাংলাদেশের জন্য এখন দুইটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পাশাপাশি দারিদ্র্যের হার হ্রাসের প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করা। এটা ছাড়া ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে। দ্বিতীয়তÑ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেয়া।
ব্যাংকিং খাতে ঋণ কেলেঙ্কারি ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন এই অর্থনীতিবিদ। ব্যাংক আইন সংশোধন করে একই পরিবার থেকে আরও বেশি পরিচালক রাখার সুযোগ সৃষ্টিরও বিরোধিতা করেন তিনি। বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের একই পরিবারের চারজন সদস্যকে টানা নয় বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিলে তা ব্যাংকিং খাতকে আরো ভঙ্গুর করে দিতে পারে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত অর্থ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। তবে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত রফতানি ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চামড়া শিল্পকে বছরের পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা সত্তে¡ও এই খাতে দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য চামড়া খাতের রফতকানি ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চালের

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ