Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ ও তুরস্ককে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সোচ্চার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরেদোগান

আল জাজিরা | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপড়েন অবসান করে দু’দেশকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকে সেটাই দেখা যাচ্ছে। 

তুরস্ক ও বাংলদেশ সরকারের মধ্যে সব সময় এ ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না, কিন্তু রোহিঙ্গা সংকট অবস্থা পাল্টে দিয়েছে।
এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি মিয়ানমার সামরিক বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা হত্যাকে গণহত্যা বলে বর্ণনা করেন।
দু’দিনের সফরকালে ইলদিরিম তুর্কি সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থার (টিকা) কিছু খাবার বিতরণে নিজে সহায়তা করেন। টিকা ২৫ হাজার রোহিঙ্গার খাবার জন্য প্রতিদিন আড়াই টন খাদ্য সামগ্রী দিচ্ছে।
তিনি কক্সবাজারে বালুখালি উদ্বাস্তু শিবিরে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। তুরস্ক স্থানীয় প্রশাসনকে দু’টি অ্যাম্বুলেন্সও দান করেছে।
টিকা উদ্বাস্তুদের ১০ হাজার কম্বল দিয়েছে , সে সাথে চিকিৎসা সুবিধা দিচ্ছে। বিভিন্ন শিবিরে শিশুদের জন্য খেলার মাঠও তৈরি করে দিয়েছে তারা।
টিকা প্রথম বিদেশী সংস্থা যারা ২ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংঘর্ষ কবলিত অঞ্চলে প্রাথমিক পর্যায়ে এক হাজার টন খাদ্য ও ওষুধ প্রদান করে।
আগস্ট মাসে রাখাইনে দমন অভিযান শুরুর পর মিয়ানমার সরকার সেখানে জাতিসংঘের সকল ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
তুরস্কের বিপর্যয় ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (আফাদ) ও তুর্কি ধর্মীয় বিষয়ক অধিদফতরও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে ত্রাণ ও ওষুধ প্রদান করছে।
আগস্টে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ সফরকারী কয়েকজন তুর্কি নীতিপ্রণেতা ও ঊর্ধ¦তন ব্যক্তির মধ্যে ইলদিরিম অন্যতম।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু ও তুর্কি পরিবার ও সামাজিক নীতি মন্ত্রী ফাতমা বেতুল সায়ান কায়া ছাড়াও প্রেসিডেন্ট এরদোগানের স্ত্রী এমিন এরদোগান বাংলাদেশ সফর করেন।
এরদোগানই প্রথম বিশ^নেতা যিনি মিয়ানমার থেকে অন্যায্য শক্তি প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিন্দা করেন ও একে জাতিগত নিধনের ঘৃণ্য ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেন।
ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) বর্তমান প্রধান এরদোগান সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হামলা বন্ধে মিযানমারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ^ব্যাপীি মুসলিম নেতাদের একত্রিত করেন।
তিনি রোহিঙ্গা বিষয়টি জাতিসংঘেও উত্থাপন করেন।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বর্র্্েরলন, তুরস্ক রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, এটা বিশ^ব্যাপী সুন্নী মুসলমানদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন রোধে তুরস্কের ব্যাপক প্রচেষ্টার অংশ।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে তুরস্কের বিপুল সমর্থন এরদোগানের মুসলিম বিশে^র নেতায় পরিণত হওয়ার প্রচেষ্টার অংশ।
রোহিঙ্গা সংকটে তুরস্কের ভ‚মিকা নিশ্চিত ভাবে সে সুযোগ এনে দিয়েছে।
যুদ্ধাপরাদের জন্য বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিচারে ঘটনায় বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দেয়। এরদোগান ২০১৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৭৩ বছর বয়স্ক দলীয় প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নিন্দা করেন। নিজামী মুসলমান বলে এ ঘটনাকে উপেক্ষা করার জন্য তিনি তাদের অভিযুক্ত করেন। সে সময় তুরস্ক বাংলাদেশে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওজতুর্ককে দেশে তলব করে। তিন মাস পর অবশ্য তিনি ঢাকা ফেরেন।
২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঘটনায় এরদোগান সরকারের প্রতি সমর্থন জানানোর প্রেক্ষিতে গত বছর ওজতুর্ক বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
রোহিঙ্গা সমস্যা দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষত উপশম করেছে কিনা, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকার তুর্কি দূতাবাসের কর্মকর্তারা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় যা ঘটেছিল বাংলাদেশ ও তুরস্ক তা ভুলে যেতে চায়। তিনি বলেন, দু’দেশই তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের পরিকল্পনা করেছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার এখন শেষ, তুরস্ক এ নিয়ে আর উদ্বিগ্ন নয় বা এটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি তুরস্কের জোর সমর্থন দু’দেশের মধ্যকার টানাপড়েনের সম্পর্ক উন্নয়নে নিশ্চিত ভাবে সাহায্য করেছে।

 

বিক্ষোভের প্রতীক ফিলিস্তিনি কিশোরের ছবিতে এরদোগানের ভোট ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি পুতিন-এরদোগানের সমর্থন


রাশিয়া ও তুরস্ক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বীকৃতি দানকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ প্রত্যাখ্যান করার একদিন পর শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেন, তারা উভয়েই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সমর্থন করেন।
ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জেরুজালেমের মর্যাদা বিষয়ে গৃহীত প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে দু’নেতা টেলিফোনে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা পরিস্তিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, পুতিন ও এরদোগান আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ফিলিস্তিনিদের অধিকার বাস্তবায়নের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিরোধ নিরসনে সাহায্য অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তাদের সমর্থন নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দান ও জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের অনুমোদন দেন।
তার এ সিদ্ধান্ত বিশ^ব্যাপী নিন্দার শিকার হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক, মিসর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জর্দানসহ বহু দেশে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। এখনো বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১২৮টি দেশ ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ভোট দেয়। ৯টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেয়। ৩৫টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। তবে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেন, এ ভোটের ফলে মার্কিন সিদ্ধান্তের কোনো নড়চড় হবে না।

তুরস্ককে পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠাই এরদোগানের প্রতিশ্রুতি
আনাদোলু, ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির ফটোস অব দ্য ইয়ার প্রতিযোগিতায় গত শুক্রবার ভোট দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। বছরের সেরা ছবি হিসেবে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে ওঠা ফিলিস্তিনি কিশোরের ছবিতে ভোট দেন এরদোগান। নিউজ ক্যাটেগরি শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত আনাদোলু এজেন্সির ফটোসাংবাদিক উইসাম হাসলামানের তোলা ছবিটির জন্য এরদোগান ভোট দেন। ছবিতে দেখা যায়, ১৬ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি কিশোর ফেজবি আল-জুনাইদিকে চোখ বেঁধে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনীর সদস্যরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত ৭ ডিসেম্বর পশ্চিম তীরের হেব্রোনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ থেকে তাকে আটক করা হয়। এছাড়াও, এরদোগান জীবন এবং ক্রীড়া বিভাগেও ভোট দেন। তিনি কোস্টাক নামে এ একটি কুকুরের ছবিটি বেছে নেন। একটি গাড়ির আঘাতে কুকুরটির পিছনের পা প্যারালাইজ হয়ে গেছে। কুকুরটিকে এখন একটি শপিং কার্টের সঙ্গে সেট করা একটি যন্ত্রের সাহায্যে হাঁটতে হয়। ছবিটি ফটো জার্নালিস্ট জাকারিয়া কারাদাভুত কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল। স্পোর্টস বিভাগে, গত ৯ অক্টোবর ইস্তাম্বুুলে তুরস্ক ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর উদযাপনরত তুর্কি ফুটবল খেলোয়াড় আব্দুল্লাহ কসকুনের ছবিটিতে ভোট দেন। অপর এক খবরে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা, তার সমষ্টিগত লক্ষ্য এবং তার দেশকে একটি পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচারণা- এক সময়ের পশ্চিমা জোটের সঙ্গে তাকে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে যায় এবং তা ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়তে থাকে। এথেন্স-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস ইনস্টিটিউটের গবেষক কনস্টান্টান্টিনস ফিলিস বলেন, তুরস্ক কেবল আঞ্চলিক পর্যায়েই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একটি শক্তিশালী খেলোয়াড় তা প্রদর্শনের জন্য তার নিজেকে পশ্চিমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে এবং এতে দেশটির নিজস্ব অবস্থান, নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে; যা আবশ্যিকভাবে পশ্চিমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি আরো বলেন, এরদোগানের লক্ষ্য তার দেশকে একটি মহান আঞ্চলিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা; যাতে তুরস্কের স্বার্থকে সকলে সমীহ করে। খবরে বলা হয়, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের স¤প্রতি গ্রিসে রাষ্ট্রীয় সফরে আশা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, দুই ন্যাটো মিত্রের মধ্যেকার ভঙ্গুর সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে এবং মাসের পর মাস ধরে চলা আন্তরিকতাশূন্য সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে তুরস্কের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ইউরোপের দিকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করবে। এর আগে তিনি তার গ্রিক অভ্যর্থনাকরীকে একের পর এক বিতর্কের মধ্য রাখেন এবং দুই দেশের সীমানা প্রকাশ করে- এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সুতরাং বলা যায় এরদোগান নেহাতই এথেন্সে পৌঁছাননি। গত দেড় বছরে বিশেষ করে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তার সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর থেকে অনেক ইউরোপীয় দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হয়েছে। এই সময়ে এরদোগান কখনোই তার মৌখিক তিরস্কার বন্ধ রাখেননি। তিনি ধারাবাহিকভাবে তার মিত্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকেন। ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়া এবং নাৎসিদের মতো আচরণ করার অভিযোগ আনেন এরদোগান। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে আঙ্কারার যোগদান করার কয়েক দশকের প্রচেষ্টাকে আরো দূরে ঠেলে দেয়। মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিহুলুল ওজকান বলেন, তিনি যদি কোনো বিষয়ের ওপর আলোচনা শুরু করতে চান; যা তিনি আকর্ষণীয় মনে করেন, তবে তাকে জনগণের কাছে যেতে হবে এবং জনগণকে ঝাঁকুনি দিতে হবে। গত ১৫ বছরে তিনি তা অনেক বার করেছেন এবং গত কয়েক বছরে কূটনীতির মাধ্যমে তিনি এটি করছেন। আড়ম্বরপূর্ণ ভাষা অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বেশ ভাল কাজ করছে। অধিকাংশ তুর্কি নাগরিক এরদোগানকে দেশটির গর্ব হিসেবে অভিহিত করেন এবং একইভাবে মুসলিম বিশ্বও। তুরস্কের বৈদেশিক নীতি নিয়ে গত জুনে দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাদরি হস ইউনিভার্সিটির জনমত জরিপে দেখা যায় ৩৮.৫ শতাংশ তুর্কি জনগণ মনে করেন তুরস্কের পররাষ্ট্র নীতি সফল হয়েছে। উত্তরদাতাদের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং ইইউকে তুরস্কের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ৩ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পরিচালিত গবেষণাটিতে ২৬টি তুর্কি শহরের ১,০০০ জন লোক তাদের মতামত প্রদান করে। ইলমাজ ডেমিরজ নামে ইস্তাম্বুল শহরের ৪৮ বছর বয়সী একজন মালী বলেন, আমি মনে করি তিনি (এরদোগান) আমাদের আগের নেতাদের চেয়ে অনেক ভাল, অন্তত মুসলিম দেশগুলোর তুলনায়। আমার দেখা পূর্বের সব নেতাদের থেকে তার পরিষ্কার অবস্থান রয়েছে। বিভিন্ন কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক নাজুক অবস্থায় চলে গেছে। আঙ্কারার অভিযোগ, তুর্কি নাগরিক ফেতুল্লাহ গুলেনকে আশ্রয় প্রদান করে এবং ইরান ও এরদোগানকে জড়িয়ে নিউইয়র্কে চলমান তুর্কি ব্যাংকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে বিচারের মাধ্যমে ওয়াশিংটন ইচ্ছাকৃতভাবে তুরস্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। এসব কারণে মার্কিন-তুর্কি সম্পর্ক কীভাবে উন্নত হবে তা স্পষ্ট নয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এসম্পর্কে ওজকান বলেন, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক খুব নেতিবাচক দিকে প্রবাহিত হতে পারে এবং তা তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই খুবই নেতিবাচক ফলাফল হতে পারে। এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা সত্যিই খুবই কঠিন। ইইউ এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক থাকায় মস্কো এবং তেহরান সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক উষ্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি বছরে এরদোগান এবং রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন এবং রাশিয়ান এস-৪০০ মিসাইল ক্রয়ের জন্য তুরস্ক স¤প্রতি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এই পদক্ষেপ ন্যাটোকে উদ্বিগ্ন করে তুলে। উল্লেখ্য, ১৯৫২ সাল থেকে তুরস্ক ন্যাটোর একজন সদস্য। ফিলিস বলেন, তুরস্ক একটি বিপজ্জনক নীতি অনুসরণ করছে। দেশটি ছুরির ধারালো প্রান্তে অগ্রসর হচ্ছে। রাশিয়া এবং ইরান সঙ্গে তুরস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেশটিকে পশ্চিমাদের থেকে আরো দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এই ধরনের নীতিমালার প্রেক্ষাপটে তুরস্ককে কিভাবে পরিচালনা করা যায় সে ব্যাপারে পশ্চিমাদের মধ্য বিবেকের সমস্যা তৈরি করেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন যে, তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাশিয়া বা ইরানে ভয় পশ্চিমা দেশগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করতে পারে, বিশেষ করে তুরস্কের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার এবং বিনিয়োগকারী হিসাবে ইইউর ভূমিকা পালনের মাধ্যমে।



 

Show all comments
  • তারেক মাহমুদ ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:১৭ এএম says : 0
    এটা খুব ভালো খবর
    Total Reply(0) Reply
  • Lecturer Mannan Tarif ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৯:২৫ এএম says : 0
    হয় আরবের শাসক হবেন সুন্নী একজন হক্কানি পীর, নয় আরবের শাসক হবেন অনুসারী বীর আইয়ুবীর। মাহমুদুল মান্নান তারিফ
    Total Reply(0) Reply
  • নিজাম ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:৪০ পিএম says : 0
    বর্তমান বিশ্বে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরেদোগান শ্রেষ্ঠ মুসলীম শাসক
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmudul Mannan Tarif ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৪ পিএম says : 0
    শব্দসনেট----- কাকের বাসায় কাকেরে শাসায়! _____________________ মাহমুদুল মান্নান তারিফ হিমেলে হিজলে হিয়ে হাওরে হাঁপায় চিলের চিঁচিঁরে চির চাপাতে চাপায়! আকাশে বাতাসে রণ রবের রকেটে! নীর নিয়ে কর ধরে, পচন পকেটে! ফাগুনে আগুন সাপ শাপে শাঁশাঁহীন সাপের শাপের কড়া, শাপ ভাষাহীন। কানের কাছের খাসা কাকের বাসায় সাপের ছোবল ছেটে কাকেরে শাসায়! ঝরে ঝড় ঝাঁপ ঝড়ে বুনো বক বুক বাঁচনে নাচন নাশা নাচে রোক ভুখ। নিরেট নীলাম্বু নেই, বাদলের বাঁধ বরফের বড়গলা, বরষার বাধ। মধ্যাহ্নের আলো নেভা আলয় ধাঁধার কালোর কালির লেপ কালের আঁধার। রচনাঃ ১৩ জানুয়ারি ২০১৯
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ