Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কিশমিশের গৌরব পুনরুদ্ধারে পপির প্রকোপ কমবে

আকর্ষণীয় আঙ্গুর উৎপাদনের জন্য আফগানিস্তান সুপ্রাচীনকাল থেকেই বিখ্যাত

| প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ইংরেজিতে সোনায় সোহাগার উদাহরণ দিতে বলা হয় আইসিং অন দ্য কেক আর বাংলার মিষ্টান্নে ‘আইসিংয়ের’ জায়গা নেয় কিশমিশ। মিষ্টান্নকে কেবল আরো সুস্বাদু নয়, কিশমিশ খাবারকে করে তোলে মনোহর, দৃষ্টিনন্দন। এ আকর্ষণীয় উপাদানটি উৎপাদনের জন্য আফগানিস্তান সুপ্রাচীনকাল থেকেই বিখ্যাত, যদিও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি সা¤প্রতিক সময়ে কিশমিশ উৎপাদন আর রফতানিতে পিছিয়ে পড়ে। তবে আফগানরা আবারো কিশমিশ বিষয়ে নিজেদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে আশাবাদী। আর এতে করে পপি চাষের প্রকোপও কমে আসতে পারে। আফগান কৃষক আব্দুল জলিল গুলজার বংশপরম্পরায় কিশমিশের ব্যবসা করে আসছেন। মাটির তৈরি ঘরে গুলজারের পরিবার বছরের পর বছর আঙ্গণর শুকায়, আর স্থানীয় দারি ভাষায় এ ঘরগুলোকে বলা হয় কিশমিশখানা। কিশমিশের উৎপাদন এবং এ থেকে আয় বাড়াতে আফগান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় এবং সাহায্য সংস্থাগুলো আধুনিক কিশমিশখানা গড়ে তোলার জন্য অর্থ সাহায্য দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। একসময় বৈশ্বিক কিশমিশ বাজারের ১০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি। উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের কৃষি দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এবং সবচেয়ে কর্মসংস্থানের বৃহত্তম খাত। কাবুলের কাছে অবস্থিত পারিবারিক খানায় বসে এএফপিকে গুলজার বলেন, আধুনিক কিশমিশভাÐারগুলো অনেক বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এবং এগুলোর একটাই উদ্দেশ্য (আঙ্গুর শুকানো)। কাবুলে একটি আধুনিক কিশমিশখানার মালিক হাজি মালেক জাবেত তার খানাটি ঘুরে দেখাচ্ছিলেন। সেখানকার সিমেন্ট নির্মিত মেঝেতে সারি সারি ধাতব তাক রাখা, যেখানে আঙ্গুরগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন জঙ্গলের ভেতর সারি সারি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে। আফগানিস্তানে প্রায় ১০০ রকমের আঙ্গুরের চাষ হয়। এসব আঙ্গুর নিয়ে বিস্তর কবিতা, ছড়া আর প্রবাদ প্রচলিত আছে। ইসলামী রাষ্ট্র হওয়ায় এখানে নিষিদ্ধ পণ্য ওয়াইনের কোনো শিল্প গড়ে না ওঠায় অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত আঙ্গুর শুকিয়ে কিশমিশে পরিণত করেন, যেটি সংরক্ষণ করা সহজ এবং দামও বেশি। সাত কেজি তাজা আঙ্গুর গড়ে ৩০০ আফগানিতে (প্রায় ৪ দশমিক ৫ ডলার) বিক্রি হয়, যেখানে কেবল এক কেজি কিশমিশের দাম পড়ে ১ হাজার আফগানি। আফগানিস্তানের বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক রফতানি পণ্য হচ্ছে আফিম, যেটি তালেবান জঙ্গিদের উপার্জনের প্রধান উৎস। জাতিসংঘের সা¤প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পপি চাষের এলাকাগুলো রেকর্ড পরিমাণে উৎপাদন করছে, আর তাই কৃষকদের এর বিকল্প চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আফগানিস্তান গত বছর নয় লাখ টন আঙ্গুর উৎপাদন করলেও এর মাত্র সামান্য একটি অংশÑ ১ লাখ ১১ হাজার টন আঙ্গুর ও ১৫ হাজার টন কিশমিশ রফতানি করে বলে সরকারি উপাত্তে জানা যায়। হিমাগার সুবিধার অপ্রতুলতা এবং বৈশ্বিক বাজারের আমদানি-মানের কড়াকড়ির কারণে আফগানিস্তানের বেশির ভাগ আঙ্গুর স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় উদ্যানবিদ্যা সমন্বয়কারী আব্দুল সামাদ কামাওয়ি বলেন, এ নতুন কিশমিশখানাগুলো তিন ধরনের প্রভাব ফেলছেÑ এরা বাজার থেকে তাজা আঙ্গণর সরিয়ে দিচ্ছে, প্রক্রিয়াজাত ও পণ্যে গুণগত মান বৃদ্ধি করছে এবং দর বজায় রাখছে। তবে এ উন্নতির পরও আফগানিস্তানের মান্ধাতা আমলের উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য পাকিস্তান, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং রাশিয়ার বাইরে অন্য কোথাও কিশমিশ রফতানি করা কঠিন। একজন পশ্চিমা আমদানিকারক বলেন, দক্ষতা থাকা সত্তে¡ও আফগানরা ইউরোপের নির্ধারিত মানদÐে পৌঁছাতে পারছে না, কারণ সেটি ক্রমেই কঠোর হচ্ছে। কিছু কোম্পানি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। যেমনÑ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান তাবাসোমের কাবুলে অবস্থিত কারখানায় এক্স-রে মেশিন ও মেটাল ডিটেক্টর বসানো আছে, যাতে কেবল সেরা কিশমিশগুলোই রফতানি হচ্ছে, সেটি নিশ্চিত করা যায়। তবে গুলজার এ আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ না করার ব্যাপারে একগুঁয়ে। মাটির ঘরে দুলায় হেলান দিয়ে তিনি বলেন, এ ঘর অনেক বেশি ঠাÐা। এএফপি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ