বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নাছিম উল আলম : ঐতিহ্যবাহী খুলনা শিপইয়ার্ড স্কুল এন্ড কলেজ এর ৫০বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ থেকে দুই দিনব্যপী সুবর্ণ জয়ন্তি উৎসবের অনুষ্ঠানমালা শুরু হচ্ছে। আজ সকালে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী সহ শিক্ষক মন্ডলীর এ মিলন মেলার উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর খুলনা এরিয়া কমোডর কমান্ডিং কমোডর সামসুল আলম (জি), এনইউপি, এনডিইউ, পিএসসি-বিএন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকছেন খুলনা শিপইয়ার্ড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর আনিসুর রহমান মোল্লা(এল)এনইউপি, পিএসসি-বিএন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন ছাত্র ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক শেখ সোহেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
আজ (শনিবার) সকাল সাড়ে ৭টায় কলেজ প্রাঙ্গনে অংশগ্রহনকারীদের নিবন্ধনের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সূচনা হচ্ছে। সকাল ১০টা ৩৫মিনিটে জাতীয় পতাকা উত্তলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পরে পবিত্র কোরয়ানুল করিম থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে। এ উপলক্ষে সূবর্ণজয়ন্তি স্মৃতিস্ত¢’রও উদ্বোধন করা হবে।
দু’দিনব্যপী এ অনুষ্ঠানমালার মধ্যে প্রাক্তন ও নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও স্মৃতিচারনমূলক বক্তৃতা, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ছাত্রÑছাত্রী ও শিক্ষকমন্ডলীর যৌথ পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কৌতুক নকশা, ছাড়াও প্রাক্তন ছাত্রÑছাত্রীদের তরফ থেকে বর্তমানদের কাছে প্লাটিনাম জুবলী উদযাপনের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে। এ উপলক্ষে দেশের স্বনামধণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় আগামীকাল দুপুরে একটি আলাদা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
খুলনা শহরের দক্ষিণপ্রান্তে রূপসা নদীর ক‚লঘেসে ১৯৫৭ সালে গড়ে ওঠে খুলনা শিপইয়ার্ড। তৎকালীন সময়ে এ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই নাম দস্তখত করতেও জানতেন না। শ্রমিকদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে ১৯৬৭ সালে তৎকালীন শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ শ্রমিক কলোনীর কয়েকটি কক্ষ নিয়ে নৈশকালীন বয়স্ক শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেন। প্রথমাবস্থায় বয়স্ক শিক্ষার্থীরা ছিল শিপইয়ার্ড লিমিটেডের নিরক্ষর শ্রমিকবৃন্দ। পরবর্তীতে পাশর্^বর্তী দাদা ম্যাচ ও বিএমসির শ্রমিকেরাও নৈশ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বিদ্যালয়ের অবৈতনিক প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন আব্দুল জব্বার ও সহকারি শিক্ষক হিসেবে ছিলেন আফাজ উদ্দিন, হারুন অর রশিদ ও ইয়াকুব আলী। নৈশ বিদ্যালয়ের পাশাপাশি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও চালু করা হয়।
সে থেকে দেশ স্বাধিনতার পরে পর্যন্ত ঐ অবস্থায় এ নৌ নির্মাণ শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নৈশ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চালু ছিল। ১৯৭৪ সালে বিদ্যাপীঠটিতে নৈশ বিদ্যালয় থেকে দিবা বিভাগে কার্যক্রম শুরু হয়। শিক্ষার্থী হিসেবে খুলনা শিপইয়ার্ড’র শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সন্তান এবং স্থানীয় ছেলেমেয়েরাও নিয়মিত পাঠ গ্রহণ শুরু করে। একই বছর বিদ্যালয়টি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে যশোর শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন লাভ করে। ১৯৭৫ সালে ৯ম শ্রেণী ও ১৯৭৬ সালে ১০ম শ্রেণীর পাঠদানের অনুমতি লাভের পরে ১৯৭৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ড স্কুলটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৭ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রথমবারের মত ৮ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সকলেই কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়।
১৯৮০ সালে বিদ্যালয়টি শ্রমিক কলোনী থেকে শিপইয়ার্ড-এর উত্তর পশ্চিম প্রান্তে প্রায় এক একর জমির ওপর নিজস্ব ইউ আকৃতির ভবনে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে খুলনা শিপইয়ার্ডেএর আর্থিক দৈন্যতার কারণে শিপইয়ার্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরাও অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে পড়েন। তবে ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে এমপিওভূক্তির মাধ্যমে বিদ্যালয়টি আর্থিক সঙ্কট কাটাতে সক্ষম হয়। ইতোমধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড চরম অনিশ্চয়তা ও দৈনতার মধ্যে থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর হয়। ফলে সব বাধা পেরিয়ে খুলনা শিপইয়ার্ড স্কুল এন্ড কলেজটিতেও যথাযথ নিয়ম-শৃঙ্খলা পুনঃ প্রতিষ্ঠা সহ অর্থনৈতিক দুরবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-ছাত্রীদের ফলাফলও যথেষ্ঠ ভাল হতে শুরু করে।
শিপইয়ার্ড-এর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুপ্রেরণায় বিদ্যালয়টিতে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি খুলনা শিপইয়ার্ড স্কুল এন্ড কলেজ নামে আত্মপ্রকাশ করে। যশোর শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে এখনে উচ্চ মাধ্যামক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রমও শুরু করা হয় ঐ বছরই। বিদ্যালয়ের মত শুরু থেকে কলেজ শাখাটিও মেধাবী শিক্ষক দ্বারা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করে আসছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি একটি ডিজিটাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতির অপেক্ষায়।
২০১৩সালে খুলনা শিপইয়ার্ড-এর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কলেজটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটির ডিজিএমÑপ্রশাসন কমান্ডার এ এম রানা’কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেন। তাঁর দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে অগ্রসরমান। ইতোমধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড স্কুল এন্ড কলেজটি কঠোর নিয়মÑশৃঙ্খলা, উন্নত শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ছাড়াও সহ পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। এখানে আরো উন্নত পরিবেশে পাঠদানের লক্ষ্যে একতলা সরকারি ভবনটির ২য় ও ৩য় তলার নির্মাণ কাজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ও খুলনা শিপইয়ার্ড’র যৌথ অর্থায়নে সমাপ্তির পথে। এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যেখানে ল্যপটপ সহ ৪০টি বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার,মাল্টিমিডিয়া সহ তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন অত্যাধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান মনস্ক করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অসংখ্য দুর্লভ গ্রন্থসহ আধুনিক লেখকের বইয়ের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ লইব্রেরীও গড়ে তোলা হয়েছে এখানে। পাশাপাশি খুলনা শিপইয়ার্ড স্কুল এন্ড কলেজে ‘৫২-এর মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে নান্দনিক শহীদ মিনারও নির্মিত হয়েছে।
আর্থিকভাবে সুবিধা বঞ্চিত প্রাক্তন শিক্ষকদের বকেয়াসহ বর্তমান শিক্ষকÑকর্মচারিদের নিয়মানুযায়ী সকল সুবিধা প্রদান করে তাদের আর্থিক কষ্ট লাঘব করা হয়েছে। বর্তমান প্রিন্সিপাল ও পরিচালনা পরিষদ-এর অসামান্য অবদানসমুহ প্রতিষ্ঠানটির সকল শিক্ষকÑকর্মচারি সারা জীবন স্মরন করবেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।