বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রেজাউল করিম রাজু : দুয়ারে কড়া নাড়ছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। হিসেব অনুযায়ী এক বছরের কম সময়ের মধ্যে এ নির্বাচন হবার কথা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ এবার তাদের হারানো আসনটি ফেরত আনতে এখনি তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। তাদের প্রার্থী হিসাবে সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনকে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে। বসে নেই বর্তমান নির্বাচিত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বিপুল ভোটে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেও শুরু থেকে তার চলার পথ মসৃন হয়নি। ক্ষমতা নিতে গিয়ে দেখেন মেয়রের প্রতিমন্ত্রীর মর্যদা কেড়ে নেয়া হয়েছে। তার দায়িত্ব নেবার দিনটিতে ছিলেন না প্রশাসনের বিশিষ্টজনরা। কারনটা বোধ হয় বিরোধী দলের মেয়র। প্রতিবাদে দীর্ঘদিন কর্পোরেশনের পতাকাবাহী গাড়ি ব্যবহার করেননি। দায়িত্বভার নেবার অল্প কমাস পর সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সতের মামলায় আসামী হন। কারাগারে যেতে হয়। আইনের দোহায় দিয়ে কেড়ে নেয়া হয় তার পদ। নিজ অধিকার তথা নগরবাসীর দেয়া রায়ের মর্যদা পূর্ন:প্রতিষ্ঠার জন্য নামেন আইনী লড়াইয়ে। স্থানীয় আদালত আর উচ্চ আদালতে দৌড়াদৌড়ি করতে কেটে যায় আরো প্রায় আড়াইটি বছর। অবশেষে নগরবাসীর রায়ের বিজয় ঘটে। অনেক নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে চেয়ারে বসতে না বসতে ফের বহিস্কার। আবার আদালতের রায়ে চেয়ারে ফেরা। মেয়রের আসনে বসে ঘোষণা দিয়েছেন যে কটাদিন দায়িত্ব থাকব। সে কটাদিন দ্বিগুন পরিশ্রম করে নগরবাসীর সেবা করে যাবার। প্রথমে তার সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে বিগত দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র কর্তৃক নগরবাসীর উপর চাপিয়ে দেয়া বিপুল ট্যাক্সের বোঝা নামানো। এনিয়ে নগরীর বিভিন্ন ফোরামে আন্দোলন করেছে। তাদের কথা দিয়েছেন ট্যাক্স সহনীয় পয্যায়ে নিয়ে আসবার। এদিকে সরকারী থোক বরাদ্দের পরিমানও কম। বেতনবৃদ্ধি করায় কর্মচারী বেতন দিতে হিমসীম খেতে হচ্ছে। কর্পোরেশনের নিজস্ব আয় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত। এরপর বরাবর নগরীর রাস্তাঘাট উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংকের একটা সহায়তা থাকে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও নির্বাচিত মেয়র না থাকার কারনে তহবিলের ছাড় দেয়নি। ফলে নগরীর রাস্তাঘাটের সংস্কার হয়নি। যদিও বড় বড় কটি রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। মেয়রের চেয়ারে বসে আবারো যোগাযোগ শুরু করেছেন তহবিলের জন্য। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নগরীর ত্রিশটি ওয়ার্ডে অন্তত ষাটকোটি টাকার কাজ করে ভাঙ্গা রাস্তার স্বরুপ ফিরিয়ে এনে নগরবাসীর কিছুটা হলেও দুর্ভোগ লাঘব করা। আলাপ চারিতায় আরো বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানান। প্রত্যাশা সরকার তার সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে। নগর ভবনে তার পরিষদ ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে পরিশ্রম করছেন। এর মধ্যেও অদৃশ্য আলো ছায়া তার পিছু ছাড়ছেনা। কিছুদিন আগে মাষ্টার রোল কর্মীদের মাঠে নামিয়ে বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নজির বিহীনভাবে নগরভবনে প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে সব কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। তিনদিন আর্বজনা পরিস্কারসহ নানা সেবা বন্ধ থাকায় নগরবাসী পড়ে বিপাকে। অবশেষে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এক নেতার উপস্থিতিতে প্রত্যাহার হয় কর্মসুচি। নেপথ্যের কুশিলবরা এতে উল্লসীত হলেও সচেতন নগরবাসী এটা ভালভাবে নেয়নি। সামনের দিন গুলোতে এমনিভাবে মেয়রকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে এমন তৎপরতা চলবে তা বোঝাই যাচ্ছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পাশাপাশি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বিএনপির রাজশাহী মহানগর সভাপতি। এখানেও খুব একটা স্বস্তিতে নেই তিনি। দলের আভ্যন্তরীন কোন্দল প্রকট। এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি। সব ওয়ার্ডে কমিটি নেই। মঈন উদ্দিন- ফখরুদ্দিনের রাজনৈতিক সিডরে ক্ষত বিক্ষত বিএনপির আভ্যন্তরীন কোন্দল আরো ভোগাচ্ছে। হাইকমান্ডে বুলবুলের একটা ভাল ইমেজ রয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন এখন তার কাজ হবে দলকে সুসংগঠিত করা। এবার নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। তাই চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশী। তাছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মেয়র নির্বাচন হবে। ফলে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব পড়বে জাতীয় নির্বাচনে। এসব নিয়ে মেয়র বুলবুলের সাথে আলাপচারিতায় তিনি বলেন আমার হাতে সময় খুব কম। নগরবাসীর দূর্ভোগ লাঘবকে বেশী প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছি। বিষয়টি ভোটাররা অবশ্যই বিবচনা করবেন। অন্যদিকে দলীয় কর্মকান্ড সামলাচ্ছি। মেয়র হিসাবে আগামী প্রার্থীর বিষয়ে বলেন, এটা দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। দলীয় চেয়ারপার্সন সহ অন্যরা নির্বাচনের বিষয় নিয়ে কাজ করছেন সেখানে থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটি বাস্তবায়নে আমরা সবাই মিলে কাজ করব। নগরবাসী আমাকে নির্বাচিত করার পরও দায়িত্ব পালন নিয়ে যে রাজ রোষের শিকার হয়েছি সেটিও আগামী ভোটে বিবেচ্য হবে। তাছাড়া এটি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের দূর্গ। সরকারের নানা অপকর্ম নির্বাচনে ব্যবধান গড়তে সহায়ক হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।