Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে বছরে নিহত ৩১৮

আল জাজিরা | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ে দু’জন স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা ও একজন নারীসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর সেখানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা কাশ্মীরে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দক্ষিণাঞ্চলীয় সোপিয়ান জেলার বাটমুরা গ্রামে মঙ্গলবার রাতে এ লড়াই সংঘটিত হয়। এ সময় শত শত অধিবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে ঘটনাস্থলের দিকে অগ্রসর হয়। সৈন্যরা তাদের বাধা দিতে ৫ রাউন্ড তাজা গুলি ছোঁড়ে ও ছররা গুলি চালায়।
পুলিশ সুপার শ্রীরাম অম্বরকর জানান, বন্দুক যুদ্ধে ২ জন জঙ্গি নিহত হয়। তাদের একজন হিজবুল মুজাহিদিন ও অন্যজন জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য।
কর্মকর্তারা বলেন, পাথর নিক্ষেপকারী তরুণ ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘষেয় ২০ জনেরও বেশি আহত হয়। গুলির মধ্যে পড়ে সে গুরুতর আহত হয়। কোন পরিস্থিিিততে সে গুলিবিদ্ধহয় তা আমরাতদন্ত করে দেখছি।
অম্বরকর বলেন, রুবি জান নামে মহিলা অনিচ্ছাকৃত ভাবে নিহত হন। কিন্তু অধিবাসীরা বলেন, সৈন্যরা ইচ্ছাকৃত ভাবে তাকে গুিল করে।
পুলওয়ামার একজন জ্যেষ্ঠ ডাক্তার আল জাজিরাকে বলেন, গুলি ও ছররাবিদ্ধ ২০ আহত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ১২ জনের চোখে ছররা লেগেছে। ২জন গুলিবিদ্ধকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রুবি জানকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।
বাটমুরার স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, সৈন্যরা স্বাধীনতাকামীদের হত্যার জন্য ৭টি বাড়ির ক্ষতি করে। জঙ্গিরা ছিল এক বাড়িতে, আর সৈন্যরা ৭টি বাড়ির ক্ষতি করে। প্রতিটি সংঘর্ষের সময়ই এ ঘটনা ঘটে। লোকেরা তাদের বাড়ি ঘর , জিনিসপত্র হারায়। এই শীতে সব হারিয়ে এই সব মানুষগুলো কোথায় যাবে?
রুবিজানের মৃত্যু দিয়ে এ মাসে ৩ জন বেসামরিক লোক নিহত হল। গত সপ্তাহে হান্দওয়ারায় সৈন্যরা বন্দুক যুদ্ধের সময় এক মহিলাকে গুলি করে হত্যা করে। রবিবার ক‚পওয়ারা জেলার এক ক্যাব চালককে তার বাড়ির বাইরে গুিল করে হত্যা করা হয়।
এদিকে মঙ্গলবারের ঘটনায় কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা বুধবার কাশ্মীর উপত্যকায় সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ গোলযোগ প্রবণ এলাকাগুলোতে চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, সেনাবাহিনী যতদিন সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইনের মত আইনের সমর্থন পাবে ততদিন সহিংসতা চলতে থাকবে।
পারভেজ ইমরোজ নামে এক মানবাধিকার কর্মী আল জাজিরাকে বলেন, সেনাবাহিনী ভারতের মিডিয়া ও কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমর্থনের কারণে কাশ্মীরে নৈতিক দায়মুক্তি ভোগ করে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা ভারত সরকারের অনুমতি ছাড়া সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না যে অনুমতি কখনোই মেলে না।
এদিকে ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে চলতি বছর ২০৩ জন বিদ্রোহী, ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৭৫ জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছে বলে মঙ্গলবার ভারতের লোকসভায় জানানো হয়েছে। লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হানসরাজ অহির এ কথা জানান। তিনি আরো জানান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ সম্পর্কিত ঘটনায় ৫১ জন বিদ্রোহী ও ১২ জন নিরাপত্তাকর্মীসহ ৯৭ জন মারা গেছে। চলতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৩৭টি সন্ত্রাসী ঘটনায় ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক, ৭৫ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং ২০৩ জন বিদ্রোহী নিহত ও ৩২১ জন আহত হন। ৯১ জন বিদ্রোহীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাম- চরমপন্থী প্রভাবিত এলাকার সহিংস ঘটনার কথা উল্লেখ করে অহির বলেন, এতে এই বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৮১৩টি ঘটনায় ১৭০ জন বেসামরিক লোক, ৭৫ জন নিরাপত্তা কর্মী ও ১১১ বাম চরমপন্থী নিহত হয়। আরো ১৪৫ জন আহত ও ১,৭১২ বাম চরমপন্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলোতে দুইটি করে হামলা হলেও ২০১৬ সালে ছয়টি হামলা হয়। চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি প্রতিরক্ষা স্থাপনা জঙ্গি হামলার সম্মুখীন হয়েছে। কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামীদের খতম করার নির্দেশ ভারত সরকারের মুসলিম প্রধান জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকায় মোতায়েন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের খতম করার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি সরকার। ফলে সেখানে স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান আরো তীব্র করা হবে বলে এক সরকারি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে জানিয়েছেন। কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ১৫ নভেম্বর দিল্লিতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে ওই নির্দেশ দেয়া হয়। স¤প্রতি কাশ্মির উপত্যকায় সহিংসতার হার বেড়ে গেছে এবং জঙ্গিরা নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যকে হত্যা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সিতারামন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তরা অংশ নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান আগের চেয়ে অনেক কঠোর করা হবে। উপত্যকায় স্থায়ী শান্তি আনার প্রচেষ্টা হিসেবে সরকার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে ধনেশ্বর শর্মাকে বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ দিলেও দমন অভিযান চলবে। নিরাপত্তা বাহিনী ইতোমধ্যে কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গি বিরোধী অভিযান জোরদার করেছে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিচালক এসপি ভাইদ স¤প্রতি বলেন, চলতি বছর নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে ১৭০ জনের মতো জঙ্গিকে হত্যা করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাশ্মীর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ