পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের মুখে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কাগজে-কলমে আরও একধাপ অগ্রগতি হলো। এই প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া নির্ধারণে দুই দেশের মধ্যে গঠন করা হয়েছে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও এর টার্মস অব রেফারেন্সের সম্মতিপত্রে সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সম্মতিপত্রে সই করেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক এবং মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির পার্মানেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট থো। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা। দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সইয়ে বলেছেন শিগগির এই কমিটি কাজ শুরু করবে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই কমিটিতে দুই দেশের ১৫ জন করে মোট ৩০ জন কর্মকর্তা থাকবেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সদস্য এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকও থাকবেন। বৈঠকে আলোচনা অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কোন প্রক্রিয়ায় শুরু হবে সেটি নির্ধারণ করবে এই ওয়ার্কিং গ্রুপ। আগামী বছরে ফেব্রুয়ারি নাগাদ এই কাঠামো তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করছে দুই পক্ষ। এরপরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।
বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, ‘আগেই দুই দেশের মধ্যে অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হয়েছিল। এখন তার অধীনে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপও তৈরি হয়ে গেল। এখন পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু হবে।’
গত অক্টোবরে ঢাকায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির দপ্তরের মন্ত্রী কিউ টিন্ট সোয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মধ্যে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসকে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপর গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সেখানেও এই প্রক্রিয়া শুরু করতে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও এর কার্যপদ্ধতি ঠিক করতে গত সোমবার ঢাকায় আসেন মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল।
রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী মুসলিম রোহিঙ্গাদেরকে নিজের নাগরিক বলে স্বীকার করে না মিয়ানমার। এক সময় তাদের নাগরিক অধিকার থাকলেও তা বাতিল করা হয় ১৯৮২ সালে। মিয়ানমারের সেনাশাসকদের দাবি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি এবং তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে হবে। ওই বছর থেকেই নানা সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী এবং নানা সময় বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচাতে এসেছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। এ নিয়ে গোটা বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদে ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের শামরিক শাসকদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করলেও মিয়ানমার সেই উদ্যোগ নেয়নি।
চলতি বছরের ২৫ আগষ্ট রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশি চেকপোস্টে কথিত হামলার জেরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। আর মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ। এরপর দুই মাসে ৬ থেকে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে।
রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশ এই বিষয়টি এবার জাতিসংঘে তুলে ধরেছে বেশ জোরালভাবে। সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তাদেরকে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সহায়তা চান। এরপর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ ও তাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে জাতিসংঘে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চেষ্টার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যায় ঢাকা। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্যেই রাখাইনের শত শত গ্রাম পুরিয়ে দিয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।