Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রশ্ন ফাঁসের গোমর ফাঁক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার পর ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ ব্যাপক আলোচনায় আসে। এতোদিন বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের খবর সংবাদ মাধ্যমে এলেও এবার এর ব্যাপকতা পৌঁছেছে প্রাথমিক স্তরে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগের পরও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জেএসসি এবং পঞ্চমের পিইসিতে অনেক বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর আগেই চলে এসেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এমন কি স্কুল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার খবর মিডিয়ায় এসেছে। একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা বিতর্ক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের ১৩ জনকে গ্রেফতারও করে। দুর্নীতি দমন কমিশনও এ নিয়ে কাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও দুদকের প্রচেষ্টায় কার্যত প্রশ্নপত্র ফাঁসের গোমর ফাঁস হয়ে যায়। গতকাল প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষক বলে বক্তব্য দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ গতকাল শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত ‘শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানিক টিম’-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের তুলে ধরেন। সচিবালয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো: আসাদুজ্জামান পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টটি উপস্থাপন করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলী, সৈয়দ ইকবাল হোসেন উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য প্রমুখ। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার প্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রশ্ন ফাঁস, নোট-গাইড, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ, এমপিওভুক্তি, নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে ৩৯ দফা সুপারিশসহ ওই প্রতিবেদন গত ১৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে পাঠানো হয় বলে জানানো হয়। বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষকদের লোভ দেখায় যে কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁস করে তাদের শিক্ষার্থীদের ভালো ফল করাতে পাড়লে কোচিং ব্যবসা ভালো হবে। টাকা আয়ের পরিমাণটাও বাড়বে। এসব লোভের কারণে শিক্ষকরাই কোচিংয়ের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের এই প্রতিবেদন সময়োপযোগী। আমরা খুশি কারণ এর অধিকাংশ সুপারিশই আমাদের নজরে রয়েছে। এই সমস্যগুলো আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে সাথে নিয়ে যৌথভাবে দূর করব। আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। যারা সততা, নিষ্ঠা, ন্যায় এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত থাকবে। আমাদের সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনৈতিকতা রয়েছে, পিতা যখন সন্তানের প্রশ্ন ফাঁসের জন্য উদ্যোগী হন তা আমাদের অবশ্যই বিচলিত করে। শিক্ষার মান নিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষিত জাতি গঠন করতে হলে প্রথমত সকল শিশুদের বিদ্যালয়ে আনাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। এখন দেশের প্রায় ৯৯.৪৭ ভাগ শিশু বিদ্যালয়ে নাম লেখাচ্ছে। তাছাড়া প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ, এমপিওভুক্ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসে সরকারি লোকজন জড়িত আছে। আমরা কিছু শনাক্তও করেছি। আমাদের শক্ত অস্ত্র আছে। সেটা দিয়ে তাদের বের করে ধরপাকড় করা। কিন্তু আমরা তো সেই কাজে আসিনি। আমরা চাই এ দেশের বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তারা যাতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা সেটা যেন হয়। দুদক দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ অনুসারে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে কাজ করছে। দুর্নীতি উৎস চিহ্নিত করে তা প্রেসিডেন্ট কিংবা মন্ত্রণালয়ে পাঠনো কমিশনের আইনি ম্যান্ডেট। দুর্নীতিমুক্ত ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্যই কমিশন শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে ‘শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানিক টিম’ গঠন করে। এই টিমের সদস্যরা নিরলস অনুসন্ধান করে এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে। এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রশ্নপত্র ফাঁস, নোট/গাইড, কোচিং বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ, এমপিওভুক্তি, নিয়োগ ও বদলিসহ বিভিন্ন প্রকারে দুর্নীতির উৎস এবং তা বন্ধের জন্য ৩৯টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশসমূহ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে যেসকল বিদগ্ধ ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন তাদের সকলের মতামত নিয়ে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত ও মানসম্মত নিশ্চিত করা পথ সুগম মহতে পারে।



 

Show all comments
  • কাজল ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:২৩ এএম says : 2
    এটা এখন দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা
    Total Reply(0) Reply
  • আয়োসী ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:২৪ এএম says : 0
    এটা বন্ধ করা না গেলে দেশের শিক্ষা ব্যস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Humayun Bakth ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৯:২৩ এএম says : 2
    Komol shishu Soho shishkake bachate uha kothurhosthe demon korte hobe
    Total Reply(0) Reply
  • Dipak Sarker ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:১৬ পিএম says : 0
    শিক্ষা খাতে নৈরাজ্য চলছে। কোনো সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা নেই। আজকে এই নিয়মতো কালকে আরেকটা। প্রশ্ন ফাঁস, কোচিং বাণিজ্যতো আছেই। আপনি মন্ত্রী হিসেবে এর দায় এড়াতে পারেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • Parvez Patwary ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:১৯ পিএম says : 0
    বিচারহীনতার সংস্কতির ফলাফল আমারা দেখছি মাত্র আর কিছুই না।
    Total Reply(0) Reply
  • Babul Hasan ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:১৯ পিএম says : 0
    দায়ী কে এটা বাদ দিয়ে আপরাধী খোজে বের করে শাস্তি দিন???
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Hossain ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:২০ পিএম says : 0
    নিষ্ঠাবান সৎ যোগ্য লোকের অভাব
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul Islam ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:২৩ পিএম says : 0
    কথা পুরু সত্য, কোচিং বানিজ্য প্রশ্ন ফাসের সাথে, শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংস করে দিচ্ছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নেন, সেই শিক্ষক স্কুলে না পড়িয়ে নিজেরা ব্যবসা করার লক্ষ্যে এই ঘৃন্য কাজ করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mithun Biswas Pappu ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:২৪ পিএম says : 0
    কোচিং ব্যবসা বন্ধ করা হোক, সাথে সাথে প্রকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:২৫ পিএম says : 0
    প্রশ্নপত্র ফাঁসের শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • No name ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৯:০৯ পিএম says : 0
    This is good enough event to spoil the country. No knowledgeable person(s) will grow up in future. Import manpower from foreign county for peoples' services.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রশ্ন ফাঁস

২০ নভেম্বর, ২০২১
১৭ আগস্ট, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ