পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রং-বেরং এর ফুল, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিলো সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তিতে আনন্দ-উদ্বেল জাতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় স্মরণ করলো বীর শহীদদের। সর্বস্তরের মানুষের ফুলের ভালবাসায় সিক্ত হলেন জাতির সূর্য সৈনিকরা।
গতকাল সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও এরপর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যারা প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। এসময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল সালাম জানায়। তখন শহীদদের স্মরণে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। জাতির যে বীর সন্তানদের আত্মত্যাগে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম, কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে একাত্তরের সেই শহীদদের স্মরণ করেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী।
পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আবারো ফুল দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ১৪ দল, তিন বাহিনীর প্রধান, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি ক‚টনীতিকবৃন্দ, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পরে লাল সবুজের পতাকা আর ফুল হাতে জনতার ঢল নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে একটা পরিচিত মুখ। আমরা অর্থনৈতিক অনেক অগ্রগতীসাধন করেছি এবং খেলাধুলাতেও অনেক অগ্রগতীসাধন করেছি। আমাদের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হচ্ছে যে উন্নয়নশীল দেশের ভিতরে আমরা সাংবিধানিক ও গণতন্ত্র চর্চা করতে পেরেছি। এবং দীর্ঘদিন পরে হলেও ৭১’র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। মনে রাখতে হবে৭১ সালে যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান করেছিল তাদের বিরোধীতার মুখে এতো বছর পরও শেখ হাসিনা সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সাজা কার্য্যকর করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশকে বের করে এনেছে।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা উবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল, মহিলাদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মইন খান সাংবাদিকদের বলেন, ৭১ সালে স্বাধীনতা যাত্রা শুরু করেছিলাম দুটি আদর্শ নিয়ে একটি হচ্ছে গণতন্ত্র ও আরেকটি হচ্ছে বাংলাদেশের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান তার খেটেখাওয়া মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির যে আদর্শ সেই আদর্শ নিয়ে।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হয়ে ৪৭ বছরে যাচ্ছি সেই প্রশ্নগুলো এখন নতুন করে জেগে উঠছে। আমরা বিশ্বাস করতাম পাকিস্থানের যে কাঠামো সেই কাঠামোতে গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়, সেটাই কিন্তু একটা মূল উদ্দেশ্য ছিল। সেজন্যই আমরা অত্যান্ত জোর গলায় বলেছিলাম আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ চাই। অথচ বার বার বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিঘিœত হচ্ছে।
আজকের যে সংসদ সেই সংসদের দিকে তাকিয়ে দেখুন, তৃনমুলের যে কোন একজন মানুষকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন এখানে জনগনের কেউ প্রতিনিধিত্য করে।
৩০০ আসনের ১৫৪ জন ভোট ছাড়া নির্বাচিত। বাকি ১৪৬ জন নির্বাচিত হয় শত করা ৫ শতাংশ ভোটে। এ কারণেই কি আমরা বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
আজকে সত্যিকার অর্থে বহুদলীয় গণতন্ত্র এদেশে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, আমি বলবো স্বাধীনতা সময় লক্ষ লক্ষ লোক রক্ত দিয়ে এ দেশকে প্রতিষ্ঠা করেছিল আমরা তাদের আর্দশের প্রতি আমরা সত্যনিষ্ঠা থাকতে পারিনা।
আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রতিটি মানুষের মনের কথা এটি। যে আমরা এ দেশে গণতন্ত্র করবো, খেটেখাওয়া মানুষকে একটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জীবন আমরা দিব, যাতে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
এদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পু®পস্তবক অর্পন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের, সরকারি কর্ম কমিশন, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তাগণ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেডিসি), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, সোনালী ব্যাংক, সচেতন নাগরিক কমিটি, বিআইডবিøউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষনা প্রতিষ্ঠান (বিএলআরআই), বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষন কেন্দ্র (বিপিএটিসি), বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্র, সাভার প্রেসক্লাব, আশুলিয়া প্রেসক্লাব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, নজরুল ইন্সটিটিউট, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গামের্ন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন, জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ), শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), কর্মজীবী নারী, বাংলাদেশ তৃনমুল গামের্ন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিট, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টাস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষনা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ঢাবি কর্মচারী সমিতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, গণফোরাম, বিমান শ্রমিক লীগ, ইঞ্জিনিয়াস ইনস্টিটিউট, বাংলঅদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, প্রবাসী কল্যান ব্যাংক, বঙ্গবন্ধু ফিসারিজ পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব), বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ খৃষ্টান এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এদিকে ঢাকা জেলা কমিউনিটি পুলিশের উদ্যোগে আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ২৬টি বড় এলইডি প্রজেক্টর বসানো হয়েছে। এসব প্রজেক্টরের মাধ্যমে ১৯৪৭ থেকে ৭১ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহ দেখানো হয়। এ ছাড়া স্মৃতিসৌধের ভেতরের মুক্তমঞ্চে ঢাকা জেলা পুলিশের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত; ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্থানি সেনা বাহিনী গণহত্যা চালানোর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর রমনার রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও যুদ্ধে সক্রিয় সহায়তাকারী ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুলাহ খান নিয়াজী। আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশ। পাকিস্থানি বাহিনীকে পরাজিত করার দিনটি প্রতি বছর উদযাপিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।