Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাচ্চুর দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি

| প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আসছে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা : আসামী হতে যাচ্ছে বাচ্চু
মালেক মল্লিক : রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অসঙ্গতির প্রমাণ পেয়েছে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)। ব্যাংক থেকে সব ধরনের দুর্নীতির নথিপত্র জব্দ করেছে সংস্থাটির তদন্ত কর্মকর্তারা। তদন্তে ও দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদ এমন সব অসঙ্গতির প্রমাণ পায় দুদক। জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকতার প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব দিতে পারেনি সাবেক এই চেয়ারম্যান। উল্টো নিজের দোষ ঢাকতে ব্যাংকটির এমডির ওপর সব দোষ চাপানোর চেষ্টাও করেছেন। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বাচ্চু কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। নিজে লাভবান হতে প্রভাব খাটিয়ে বাচ্চু জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেন এমন চিত্র তদন্তে উঠে এসেছে। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত করতেই বাচ্চুর বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে কমিশন। এছাড়াও ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বাচ্চুকে আসামী করতে যাচ্ছে দুদক। এর আগে এ সংক্রান্ত মামলায় গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে দুদকে পিক এন্ড চুজ না করার পরামর্শও দেন হাইকোর্ট। অনুসন্ধান শুরু হওয়ার প্রায় চার বছর পর দুদক প্রথমবারের মতো ব্যাংকটির পরিচালনা কমিটিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেয় দুদক।
দুদক সচিব ড. শামসুল আরোফিন ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের কাছে ছোট বড় দুর্নীতিবাজ আমাদের কাছে সমান। আমরা দেখছি আমাদের আইনে অধীনে আছে কিনা থাকলে তার বিরুদ্ধে আমরা তদন্ত শুরু করি। বেসিক ব্যংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদ চলছে সুতরাং এ বিষয়ে এই মহুতে কোন মন্তব্য নয়।
আবদুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় বর্তমান সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির ঘটনায় ৫৬টি মামলা করে দুদক। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক।
এদিকে অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় নতুন করে একটি মামলা করেছে দুদক। সম্প্রতি বংশাল থানায় ৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিনজনকে আসামি করে মামলা করে। যদিও এ মামলায় বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। এ নিয়ে মোট মামলা সংখ্যা হল ৫৭টি। আসামীর সংখ্যা অন্তত ১২৩জন
ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়াসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা কমিটি বিরুদ্ধে। গত ৬ ডিসেম্বর দু›জন তদন্ত কর্মকর্তা এগুলোর মধ্যে ১৫টি মামলার অভিযোগ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর আগে ওই সময়ের কমিটির ১৪ পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
দুদক তদন্ত সূত্র জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদের জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাবগুলোর সব ধরনের নথিপত্র ও প্রমাণাদি তার সামনে উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জামানতবিহীন, কোনো ক্ষেত্রে দুর্বল জামানত, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর ক্লিয়ারেন্স না থাকা, জামানতের মূল্য যাচাইয়ের রিপোর্ট না থাকা, ঋণ গ্রহীতার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা না থাকা, ঋণের টাকা ফেরত দেয়ার সক্ষমতা সম্পর্কিত মূল্যায়নপত্র না থাকার নথিপত্র তাকে দেখানো হয়। এসব জানার পরও চেয়ারম্যান হয়ে বাচ্চু ঋণ প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেন। অনুমোদিত প্রতিটি ঋণ প্রস্তাবে বাচ্চুর সই রয়েছে। কেন জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেয়া হলো- তদন্ত কর্মকর্তাদের এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে ব্যর্থ হন বাচ্চু। এ সময় বাচ্চু জিজ্ঞাসাবাদের জবাবের মতো ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওপর সব দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। চেয়ারম্যান হিসেবে জনগণের আমানতের টাকা যেন খোয়া না যায়, তার জন্য আপনি যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন কি-না প্রশ্নের জবাব দিতেও ব্যর্থ হন বাচ্চু। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা জানেন বলে স্বীকার করেন বাচ্চু। ওই দিন তিনি বলেছিলেন, ঋণ জালিয়াতির ঘটনা আমি জানি। মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে বুঝতে পারি যে, বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে। তখন আর কিছুই করার ছিল না। ওই দিন বেসিক ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে যতটুকু বলা সম্ভব ছিল, সব বলেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসছে: ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে আবদুল হাই বাচ্চুর বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে দুদক। বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ৫৬ মামলায় দুদকের তদন্তের আওতায় রয়েছেন বাচ্চু। তার বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিমানবন্দরের বহির্গমনসহ (ইমিগ্রেশন) দেশের সব ক’টি স্থলবন্দরে দুদক আগামী সপ্তাহে চিঠি পাঠাতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। তদন্ত টিমের দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদে বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন আছে। কিন্তু তিনি দেশে না থাকলে মামলার তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে এমনটি জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। জানা যায়, এছাড়াও পর্ষদ সদস্য ও ব্যাংকের কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তাকে বাচ্চুর মুখোমুখী করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। যাদের সম্পর্কে তিনি এরই মধ্যে মুখ খুলেছেন। এজন্য তদন্ত চলাকালে তাকে দুদকের নজরদারির মধ্যে থাকতে হবে। বাচ্চুর কাছে তদন্ত কর্মকর্তারা তার পাসপোর্ট চাইলে তিনি জানান, পরে তিনি তা দুদককে সরবরাহ করবেন। শুধু বাচ্চু নন, পর্ষদের ১০ সদস্যের পাসপোর্ট ও এনআইডি নম্বর চেয়েছে দুদক।
প্রসঙ্গত, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন পরিচালনা কমিটিকে জিজ্ঞাসাবাদে স¤প্রতি নোটিশ দেয় দুদক। অনুসন্ধান শুরু হওয়ার প্রায় চার বছর পর দুদক প্রথমবারের মতো তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেয়। উচ্চ আদালত কয়েক দফা পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। আবদুল হাই বাচ্চুসহ পর্ষদের ১১ জনকে পর্যায়ক্রমে তলব করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে উপস্থিত থাকার জন্য গত ১৮ নভেম্বর আবদুল হাই বাচ্চুর বনানীর ডিওএইচএসের বাড়ির ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো।



 

Show all comments
  • সাইমন ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:৩০ এএম says : 0
    এই সব দুর্নীতিবাজদের কঠোর বিচার হওয়া দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • Alhaz Zahed Hasnine ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:২৪ পিএম says : 0
    প্রমান পাওয়া মাএই তাকে গ্রেফতার করতে হবে!!! রিমান্ডে নিতে হবে, জনগনের টাকা ফেরৎ দিতে হবে!!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ