পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অপরিচিত কাউকে দেখলেই নিজেদের আড়াল করে নিচ্ছেন আকায়েদ উল্লাহর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জুঁই ও শ্বশুড়-শাশুড়িসহ পরিবারের সদস্যরা। নিউ ইয়ার্কে বোমা হামলার ঘটনার পর আটক সন্দেহভাজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আকায়েদ উল্লাহকে নিয়ে পরিবারের পুরো স্বপ্ন এখণ অন্ধকার। অথচ পুরো পরিবারটিই আকায়েদকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো। আমেরিকায় গিয়ে স্বামীর সাথে বসবাস করার স্বপ্নও ছিল স্ত্রী জুইয়ের। গত ১১ ডিসেম্বরের পর থেকে স্ত্রী জুইসহ পুরো পরিবারকেই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ কয়দিন যেন স্বপ্নের মধ্যে কেটে গেছে বলে মন্তব্য করেন আকায়েদ উল্লাহর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জুঁই। তাদের বিশ্বাস আকায়েদ উল্লাহ কোনভাবেই এ ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে না। ঢাকার জিগাতলার ১০/১ মনেশ্বর রোডের বাসাটি এখন স্থানীয়দের কাছে একনামে পরিচিত। গত ১১ ডিসেম্বরের ঘটনার একদিন পর মঙ্গলবার বিকালে ওই বাড়ি থেকে আকায়েদের স্ত্রী জুঁই, শ্বশুর জুলফিকার হায়দার ও শাশুড়ি মাহফুজা আক্তার হীরাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের কার্যালয়ে নিয়ে যায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এরপর থেকেই ওই বাড়িটির সামনে উৎসুক মানুষ আর দেশি-বিদেশি সংবাদকর্মীদের ভিড় লেগেই আছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার রাতেই তাদের ছেড়ে দেয়া হলেও আকায়েদের কর্মকান্ডে হতভম্ব এই পরিবারটি এখন বলতে গেলে অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করছে। আকায়েদের স্ত্রী জুঁইয়ের কাছে তার স্বামী সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হলে প্রথম দিকে কোনও কথা বলতেই রাজি হননি তারা। পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন আকায়েদের স্ত্রী জুঁই ও শাশুড়ি মাহফুজা আক্তার। তাদের ভাষ্য, আকায়েদ এ ধরনের কোনও কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হতেই পারে না। তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। জুই জানান, গত সোমবারের সেই ঘটনার আগে আকায়েদের সাথে স্ত্রী জুঁইয়ের কী কথা হয়েছিল। তিনি বলেন, আমি সকালে ফোন করেছিলাম। প্রতিদিনের মতো তাকে কাজে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠিয়ে দেই। তারপর সে ওঠে। বলে যে রেডি হইতেছি, কাজে যাবো ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না সে এরকম কিছু করতে পারে। সে ধার্মিক ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। কিন্তু জঙ্গি হয়ে হামলা করবে এমনটা আমার বিশ্বাস হয় না। আমাকে সবসময় নামাজ-রোজা করতে বলতো। ঠিকমতো চলাফেরা করতে বলতো। এটাই। আমরা আগে যেমন নামাজ পড়তাম। সেরকম করেই পড়তে বলতো। কোনও বিষয়ে ফোর্স করেনি। আকায়েদের শ্বাশুড়ি মাহফুজা আক্তার হীরা সাংবাদিকদের বলেন, আমার জামাই অনেক নম্র ও ভদ্র একটা ছেলে। সে সব সময় মাটির দিকে তাকিয়ে চলাফেরা করতো। সে এমন একটা কাজ করতে পারে, তা বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা ষড়যন্ত্র করে করা হয়েছে। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাদের পরিবারটা একেবারে ধ্বংস করে দেয়া হলো। আকায়েদের শাশুড়ি আরো জানান, আকায়েদ যত দিন এই বাসায় ছিল, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সময় কাটাতো। বাসার বাইরে তেমন বের হতো না। নামাজ পড়তে পাশের শাহী মসজিদে যেতো। বাসায় কোনো ল্যাপটপ, কম্পিউটার নেই। মোবাইলফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতো। বাসায় ঘুমিয়ে, গল্প করে ও ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সময় কাটাতো। বাসায় কোনো বন্ধু-বান্ধব আসতো না। বন্ধুদের আড্ডায়ও যেতো না। তিনি বলেন, এখন আমার মেয়ে ও নাতির ভবিষ্যৎ কী হবে। আমরা দুই চোখে অন্ধকার দেখছি। এ বাসায় থাকাকালে আকায়েদ নিয়মিত নামাজ পড়তে যেতো ঝিগাতলার মনেশ্বর রোডের শাহী মসজিদে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আকায়েদের শ্বশুর এলাকায় একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তবে আকায়েদ সম্পর্কে কোন খারাপ তথ্য নেই তাদের কাছে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা পুলিশসহ নানা সংস্থার সদস্যরা আকায়েদের পরিবার ও তার পরিচিতদের সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু আকায়েদ সম্পর্কে তারা এমন কোন তথ্য পাননি যা আকায়েদ কোন অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন। আকায়েদের স্বজনরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানিয়েছেন, ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় বেড়ে ওঠা আকায়েদ অন্য আট দশ জন ছেলের মতোই চলাফেরা করতো। পুরান ঢাকার স্থানীয় কাকলী স্কুল থেকে এইচএসসি, বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজ মুন্সী আব্দুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা সিটি কলেজে বিবিএ ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যেই পরিবারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। গত ১৩ ডিসেম্বর ওয়াজেদুর রহমান নামে আকায়েদের স্কুল এবং কলেজ জীবনের এক বন্ধুর সাথেও কথা বলেছে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তার কাছে জানতে চেয়েছিল ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে কেমন ছিল আকায়েদ? ওয়াজেদুরের বরাত দিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলছেন, স্কুল-কলেজে তারা উরাধুরা সময় পার করেছে। ফলে কর্মকর্তারা মনে করছেন, ঢাকায় অবস্থানের সময় তার মধ্যে ধর্মীয় জঙ্গিবাদে ঝুঁকে যাওয়ার কোনও প্রমাণই তারা পাননি। ওই বন্ধু পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছেন, ২০১১ সালে আকায়েদ চলে যাওয়ার সময় তাকে বিদায় জানায়। তারপর থেকে যোগাযোগ কম হলেও ২০১৬ সালে যখন সে দেশে এসে জুঁইয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন তাকে একেবারে অন্যরকম লেগেছে। ওয়াজেদুরের ভাষায়, মুখভর্তি দাঁড়ি, অনেক বেশি ধার্মিক। ফলে আগের মতো আড্ডাবাজি আর জমেনি বলে কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন ওয়াজেদুর। আকায়েদের শ্যালক হাফিজ মাহমুদ জয় পুলিশ কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, আকায়েদ তাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার কথা বলতো। কিন্তু জঙ্গিবাদে উদ্ভুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে কখনও তাকে কিছু বলেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।