Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার সুযোগ অতি সামান্য

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নতুন আশ্রয় শিবিরে নেই প্রাইমারি স্কুল : পুরনোগুলোয় পড়ার সুযোগ ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত
বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। নতুন শিবিরগুলোতে প্রাথমিক স্কুল নেই, আর পুরাতন শিবিরগুলোতে স্কুলে সর্বোচ্চ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ রয়েছে।
কক্সবাজারের বালুখালীতে গড়ে উঠেছে নতুন এক শরণার্থী শিবির। গত আগস্টে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর সেদেশের সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু করলে ৬ লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। নতুন আশ্রয় নেয়াদের অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বালুখালী শরণার্থী শিবিরে। অপেক্ষাকৃত নতুন এই শিবিরে এখনো কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার চাচ্ছে না নতুন আসা শরণার্থীদের জন্য স্কুল কিংবা বাংলা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। আন্তর্জাতিক উন্নয়নসংস্থাগুলোর উপর স্কুল চালুর ক্ষেত্রে এক ধরনের অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উন্নয়নকর্মী।
সরকার মনে করে, শরণার্থীদের বাংলা শেখার সুযোগ দিলে তারা বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে থেকে যেতে পারে। তাই এই নিষেধাজ্ঞা বলে জানান তিনি। তবে প্রাথমিক স্কুল না থাকলেও শিশুদের খেলাধুলা এবং সাধারণ জ্ঞানের জন্য ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস’ বা শিশুবান্ধব স্থান (সিএফএস) চালু করেছে ব্রাক, ইউনিসেফ এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো। বালুখালি শরণার্থী শিবির ঘুরে এরকম বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।
এসব কেন্দ্রে শিশুদের জন্য ছবি আঁকাসহ নানা রকম খেলাধুলার আয়োজন রয়েছে। মূলত তাদেরকে বিনোদনের মাধ্যমে সাধারণ জ্ঞান দেয়া হয়। পাশাপাশি মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত শিশুদের থেরাপিরও আয়োজন থাকে কেন্দ্রগুলোতে। সিএফএস-এ রোহিঙ্গাদের নিজস্ব ভাষায়, যার সঙ্গে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার মিল রয়েছে, শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বাংলা ভাষার চর্চা সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে নেই। বালুখালিতে সেইভ দ্য চিলড্রেনের একটি সিএফএস-এ কর্মরত প্রশিক্ষক রোজিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের ভাষা ওরা বলতে পারে না। এ জন্য আমরা শিক্ষকরা ওদের (রোহিঙ্গাদের) ভাষায় কথা বলি। এছাড়া ইংরেজি শেখানো হয়’।
কক্সবাজারের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরটি অবশ্য বেশ পুরনো। সেই আশির দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও এই শিবিরে বসবাস করছেন। শিবিরের অনেকেই দুই যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। কারো কারো জন্মও নয়াপাড়া শিবিরে। সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গা তরুণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের শিবিরে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তারপর তাদের শিক্ষার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
এই বিষয়ে নয়াপাড়া ক্যাম্পে থাকা তরুণ শরণার্থী আনসারুল্লাহ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ক্লাস এইটের পর বৈধভাবে উচ্চশিক্ষা নেয়ার সুযোগ রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে তেমন একটা নেই। তবে কেউ কেউ বাঙালি হিসেবে আশেপাশের স্কুলে বা বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করে। আর খুবই সীমিত পরিসরে হাতেগোনা কিছু শিক্ষার্থী বিদেশি বিভিন্ন সংগঠনের সহায়তায় অন্যত্র লেখাপড়ার সুযোগ পায়’।
উন্নয়নকর্মীরা মনে করেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের একটি সুন্দর ছেলেবেলা এবং শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতে আরো অনেককিছু করার সুযোগ রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালা আরেকটু শিথিল করতে হবে। নতুবা রোহিঙ্গা শিশুদের একটি বড় অংশ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ