Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের

অবধারিত ধ্বংসের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষার আহ্বান

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জলবায়ু পরিবর্তনের ‘সর্বনাশা নিয়তি’ থেকে মানবসভ্যতাকে রক্ষার্থে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মিলিত হয়েছেন বিশ্বনেতারা। বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন বড় কোম্পানি ও সংস্থার পক্ষ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের অবধারিত ধ্বংসের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য নতুন তহবিলসহ নানা পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার প্যারিস সম্মেলনে প্রধান বিনিয়োগকারীরা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কাজ করার জন্য প্রায় ১ হাজার ৫৮ কোটি ডলারের (৯০০ কোটি ইউরো) তহবিল ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) এবং ২০১৯ সালের পর তেল-গ্যাস উত্তোলনে আর অর্থায়ন না করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা এড়াতে দুই বছর আগে ১৯৫টি দেশ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধের সমঝোতায় পৌঁছাতে দুই দশকের বেশি সময় লেগেছে বিশ্বের। চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। চুক্তির দ্বিতীয় বার্ষিকী উদযাপনকালে জলবায়ু সম্মেলন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলো কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে কয়েক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে আয়োজক ফ্রান্সসহ জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক জানায়, বিশ্ব অর্থনীতিকে একটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানিনির্ভর করে তোলার প্রচেষ্টা খুবই সামান্য ও অত্যন্ত মন্থরগতিতে চলছে। এ প্রসঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার লড়াইয়ে আমরা হেরে যাচ্ছি। এর বিরুদ্ধে আমরা যথেষ্ট দ্রæত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছি। জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে আমরা আসলে নিজেদের ধসেই বিনিয়োগ করছি। বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশের প্রধানদের নিয়ে আয়োজিত সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, চিরচেনা এ গ্রহে আমরা আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে লড়াই করছি। ফরাসি প্রেসিডেন্টের ডাকা এ সম্মেলনে অন্য বিশ্বনেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতো, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে ও স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওসেনিক এন্ড এটমোসফেরিক এডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) আর্কটিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করেছে। সংস্থাটি জানায়, আর্কটিক উষ্ণতা পৃথিবীর আবর্তন গতির দ্বিগুণ হারে বাড়ছে, যা ‘নতুন স্বাভাবিকতায়’ পরিণত হচ্ছে এবং এর বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে। এনওএএর আর্কটিক গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক জেরেমি ম্যাথিস বলেন, আর্কটিককে আমাদের এ গ্রহের রিফ্রিজারেটর ধরা হয়ে থাকে, কিন্তু আমরা এর দরজাটি খোলা রেখে দিয়েছি। উষ্ণতা রোধে গৃহীত প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করেছে। কিন্তু বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং ব্যাপক সমালোচনা সত্তে¡ও প্যারিস চুক্তি প্রত্যাহারের পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর শিল্পে কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। মঙ্গলবার জলবায়ু সম্মেলনে সব পক্ষ থেকে এ অবস্থানের জন্য ট্রাম্পের তীব্র বিরোধিতা করা হয়। ট্রাম্পের এ প্রত্যাখ্যানকে রাজনৈতিকভাবে অদূরদর্শী ও বিপথে চালিত, অর্থনৈতিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের এ অবস্থান সত্তে¡ও মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকারগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক গভর্নর আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, এটা কোনো মুখ্য বিষয় নয়; আঞ্চলিক পর্যায়ে আমরা প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে যাচ্ছি। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। কারণ ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু তহবিলের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী। ট্রাম্প জলবায়ু তহবিল কমানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এবং এরই মধ্যে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের ২০০ কোটি ডলার বরাদ্দ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ২০০৯ সালে ধনী দেশগুলো, যেগুলো দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশ দূষিত করছে, ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার জলবায়ু তহবিলে জমা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। ২০১৫ সালের গৃহীত সমঝোতা অনুসারে, এখন পর্যন্ত অর্থায়নের মোট পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে দাঁড়ানোর কথা বলে ওইসিডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসের ঘোষণার পাশাপাশি আরো কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কাজ করার জন্য প্রায় ১ হাজার ৫৮ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে ইসি। এএফপি, গার্ডিয়ান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ