Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আকায়েদের পরিবার নজরদারিতে -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে হামলাকারী আকায়েদের বাংলাদেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকার সতর্ক আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মন্ত্রী। সভায় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আকায়েদ উল্লাহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ২০১১ সাল থেকে সে সেখানে বসবাস করে।যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিষয়ে তদন্ত করছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তার পরিবার সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আকায়েদের সঙ্গে পরিবার সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনদের কোনো সন্ত্রাসী সংযোগ পাওয়া গেলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভায় ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন এবং ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইটের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়।
সভা শেষে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ঢাকা শহরে ৭৫টিসহ সারাদেশের চার্চগুলোতে বড়দিন উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হবে। রাজধানীর ৭৫টি চার্চে পাঁচ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, সভায় থার্টি ফার্স্ট নাইটে নিরাপত্তা দিতে কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- আগামী ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না, রাত ৮টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র ছাড়া কোনো বহিরাগত থাকতে পারবেন না, বনানী-গুলশান-বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকে এলাকার বাসিন্দা ছাড়া বহিরাগতরা ঘোরাফেরা করতে পারবেন না,সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মদের দোকান বন্ধ থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তবে কেউ চাইলে ঘরোয়াভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইতে তিনি বলেন, শুধু বুদ্ধিজীবী নয়, বঙ্গবন্ধুসহ সব হত্যাকান্ডে জড়িত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় বাস্তবায়ন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাদের তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
সোমবার স্থানীয় সময় সকালে ম্যানহাটনের এইটথ অ্যাভিনিউ ও ৪২ স্ট্রিটের কাছে বিস্ফোরণের ঘটনায় চারজন আহত হয়। ওই বিস্ফোরণের পর শরীরে নিম্ন-প্রযুক্তির একটি বোমা বাঁধা অবস্থায় আকায়েদ উল্লাহকে আটক করা হয় বলে দাবি করে দেশটির পুলিশ। আকায়েদ ব্রুকলিন এলাকার বাসিন্দা বলে নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়।
আকায়েদের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। এ ঘটনার পর বাংলাদেশি কমিউনিটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার বাংলাদেশে থাকা আকায়েদের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট। তবে এই ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আকায়েদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আকায়েদের জঙ্গি সংশ্লিষ্ট্রতা পাওয়া যায়নি -মনিরুল ইসলাম
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বোমা হামলার অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহর (২৭) সম্পর্কে বাংলাদেশে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টোরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। গতকাল বুধবার ঢাকার মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের আরো বলেন, আকায়েদ নিউইয়র্কেই জঙ্গিবাদে হোম গ্রোন হয়েছে। সে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বলে আমরা ধারণা করছি। তবে বাংলাদেশে তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। তবে সে দেশে কাদের সাথে যোগাযোগ করতো সে বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা খুব গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। কারণ, আমেরিকায় অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী আছেন, যারা সেখানে নানা ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি করছেন, তাদের ওপর যাতে এ ঘটনার কোনো প্রভাব না পড়ে সেজন্য আমরা তদন্ত করছি। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে। যদি তারা আমাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করে সহায়তা চায় তবে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো জানান মনিরুল ইসলাম। সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা জেনেছি আকায়েদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের স›দ্বীপে। সেখান থেকে তারা ঢাকায় এসে বসতি স্থাপন করে। আকায়েদের বাবা সানাউল্লাহ অনেক আগেই তার মামার সঙ্গে আমেরিকায় যান। সেখানে গিয়ে তিনি ব্যবসা করেন। সে সময় আকায়েদ ঢাকার সিটি কলেজে বিবিএ পড়তো। পরে ২০১১ সালে সানাউল্লাহ তার পুরো পরিবারকে আমেরিকায় নিয়ে যান। আকায়েদ কীভাবে রেডিক্যালাইজড হয়েছিল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি’র প্রধান বলেন, সে বিকারগ্রস্থ ছিলো কিনা বা কারও দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে কি না সেটি ওই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসবে। আমরা তার স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও শ্যালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিলাম, তারা আমদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্তের প্রয়োজনে আবারও তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। জিজ্ঞাসাবাদে আকায়েদের স্ত্রী আকায়েদ উল্লাহ জুঁই জানিয়েছেন, বিয়ের পর আকায়েদ তার স্ত্রীকে জঙ্গি নেতা জসিমউদ্দিন রহমানীর বিভিন্ন লিটারেচার পড়তে বলতো। কিন্তু তার স্ত্রী সেটা পড়েননি বলে জানিয়েছেন। আকায়েদ গত বছর দেশে এসে বিয়ে করেন। এ বছরও তিনি দেশে এসেছিলেন। স্ত্রী জুঁই ও তার সন্তানের টানেই আকায়েদ দেশে এসছিলো বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। কাজী নাফিস নামে একজন বাংলাদেশি আমেরিকায় জঙ্গি সশ্লিষ্টতায় আটক হয়েছিল সেই তথ্য টেনে সিটিটিসি’র প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, কাজী নাফিসের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে তথ্য ছিল, সে যেসব মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতো তারা হিজবুত তাহরীর ও আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে আকায়েদের সম্পর্কে বাংলাদেশে এমন কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আকায়েদ গত বছরের জানুয়ারি মাসে রাজধানীর হাজারীবাগের জিগাতলায় বিয়ে করেন। তাঁর শ্বশুর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের একটি দোকানে কাজ করেন। সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে এসেছিলেন। জিগাতলার যে বাড়িতে তাঁরা ভাড়া থাকেন, সেই বাড়ির মালিক রহিমা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ওই পরিবারটি ১৯৯৭ সাল থেকে ভাড়া থাকে। ওই পরিবার খুব বেশি সচ্ছল নয়। গত বছর তাদের সিটি কলেজে পড়ুয়া মেয়ের বিয়ে হয় আকায়েদের সাথে। বিয়ের পর এ বছর জুনে একটি ছেলেসন্তান হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে আকায়েদ এখানে এসে এক মাস ছিলেন। ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আকায়েদের আচরণ ভালো ছিল। গত সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ম্যানহাটনে টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে বাস স্টেশনে যাতায়াতের ভূগর্ভস্থ পথে বোমা হামলা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আকায়েদ উল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিস্ফোরণে তিনি গুরুতর ও তিনজন পথচারী সামান্য আহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, সাত বছর আগে আকায়েদ নিউইয়র্কে আসেন। ব্রুকলিনে থাকেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ