Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১০ লাখ রোহিঙ্গার আগমনে পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে : প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৮ এএম


অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ঢাকা-প্যারিস যৌথ কমিশন গঠনে ঐকমত্য
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আগমনের ফলে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের ওপর মারাত্মক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আসার ফলে বাংলাদেশ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। মানবিক কারণে আমরা কক্সবাজারে ১ হাজার ৭৮৩ হেক্টর বনভূমির উপর তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি।
গতকাল প্যারিসে ওয়ান প্লানেট সামিটে উচ্চপর্যায়ের সভায় এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট আমাদের বন ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, যদিও এই ঝুঁকির জন্য আমরা দায়ী নই। তিনি বলেন, আমরা সীমিত সম্পদ নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি প্রশমন ও অভিযোজন করে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রণীত টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মূলস্রোতে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্তে¡ও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় জিডিপি’র ১ শতাংশ ব্যয় করে আসছে। সকল অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশ কর্মকান্ডে ওয়াটার সাসটেইনেবিলিটি ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
এ শীর্ষ সম্মেলনে একশ’ বিশ্ব নেতাসহ বেসরকারি সংগঠন, ফাউন্ডেশন এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রায় ২ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে তার অঙ্গীকারের কথা পুনরায় উল্লেখ করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ও বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন রক্ষায় ৫০ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে একটি বিশাল প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকার জনগণকে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস, ভাঙন এবং লবণাক্ত পানি থেকে রক্ষায় সবুজ বেষ্টনি সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমি এসব এলাকায় বনায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশে বনায়ন ২ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করবে। ফলে বিদ্যমান বনভূমি ২২ শতাংশ থেকে প্রায় ২৪ শতাংশে উন্নীত হবে। তিনি বলেন, পার্টনারদের সমর্থনসহ আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে এই টার্গেট পূরণে আমরা প্রচেষ্টা জোরদার করব। শেখ হাসিনা জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারপূরণ এবং ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একমাত্র দায়িত্ব ভাগাভাগির মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে নিরাপদ করতে পারি। আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার ও কর্মকান্ড শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ঢাকা-প্যারিস যৌথ কমিশন গঠনে ঐকমত্য
বাণিজ্য, অর্থনীতি ও অন্যান্য অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে সহযোগিতার সুযোগ-সুবিধা অনুসন্ধানে একটি যৌথ কমিশন গঠনে সম্মত হয়েছে ঢাকা ও প্যারিস।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্মানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে গতকাল প্যারিসে এলিসি প্রাসাদে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, বৈঠকে উভয় নেতা অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও বৈশ্বিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু জলবায়ু পরিবর্তনসহ পাঁচটি বিষয়ে আলোচনা হয়।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ফ্রান্স এসেছেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই নেতার আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতির প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অত্যন্ত আগ্রহ ও আন্তরিকতা রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের সমর্থনে ফরাসি সরকার ও জনগণ বিশেষ করে ফরাসি ঔপন্যাসিক আঁদ্রে মালরো’র ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। শহীদুল হক বলেন, যৌথ কমিশন গঠনের ধরন পরবর্তীতে ঠিক করা হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট আজ ফ্রান্সের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরাসি প্রেসিডেন্টকে তার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ফরাসি প্রেসিডেন্ট আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং আগামী বছরের শুরুর দিকে তাঁর দক্ষিণ এশিয়া সফরের সময় বাংলাদেশ সফরে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা অধিকতর সম্পৃক্ততার সুযোগ পাবেন এমন অগ্রাধিকার খাতগুলোতে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার জ্বালানি, অবকাঠামো, ওষুধ শিল্প, আইসিটি ও বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শক্তিশালী আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনব্যক্ত করে বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হওয়ায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম এবং ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেইন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ