Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রধান ফসল আমন ও খেসারিসহ রবি ফসলের ক্ষতি ক্রমশ বাড়ছে

অসময়ের বৃষ্টিতে দক্ষিণাঞ্চলে বিপর্যস্ত জনজীবন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অগ্রহায়নের শুরুতে মাঘের শীতের পরে শেষভাগে শ্রাবনের অঝোর ধারায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার পাশাপাশি উঠতি আমনের পাকা ধানে মই লেগেছে। গত ৪ দিন সূর্যের দেখা নেই। বরিশাল সহ উপক‚লভাগে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস বহাল রেখেছে আবহাওয়া বিভাগ। দক্ষিণাঞ্চলে এবার আবাদকৃত সোয়া ৭ লাখ হেক্টর জমির ৬০ ভাগেরও বেশী এখনো মাঠে। কিন্তু সে সোনালী ধানের বেশীরভাগই অগ্রহায়নের অকাল বর্ষণে নুইয়ে পড়েছে। বেশীরভাগ আমনের জমিতে পানি। দুই লক্ষাধিক হেক্টর খেশারী ডালের প্রায় অর্ধেকই গত তিনদিনের বৃষ্টিতে পানির তলায় চলে গেছে। অথচ সারাদেশে আবাদকৃত খেশারী ডালের প্রায় ৬৫ ভাগই দক্ষিণাঞ্চলে। গত তিনদিনের বৃষ্টিতে এ অর্থকারি ফসল ছাড়াও সদ্য রোপন করা তরমুজ সহ গোল আলুরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি স¤প্রাসরণ অধিদফতর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন থেকে এবার প্রায় ১৬ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ স্থির করেছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তু অগ্রহায়নের শুরুতেই গত ১৫ ও ১৬ নভেম্বর অকাল বর্ষণের পরে গত ৪ দিনের বৈরি আবহাওয়ার সাথে শনি ও রোববারের বৃষ্টি আমন সহ শীতকালীন শাক-সবজি ছাড়াও অনেক রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। এ অঞ্চলের বেশীরভাগ পাকা আমনের জমিতে পানি জমে গেছে এ বৃষ্টিতে। কিন্তু লাগাতর বৃষ্টির কারণে ধান কাটাও সম্ভব হচ্ছেনা।
উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হবার পরে শনিবার রাত ৯টার দিকে দুর্বল হয়ে আবার সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হলেও তার রেশ ধরে হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণে রোববারও দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন ছিল বিপর্যস্ত। রোববার দুপুরের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল সহ সমগ্র উপক‚লভাগ জুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। রোববার সন্ধ্যার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে ভোলাতে ৭৮ মিলিমিটার। এসময়ে কুয়াকাটা সংলগ্ন কলাপাড়ায় ৪০ মিলিমিটার, বরিশালে ৪৮ ও পটুয়াখালীতে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বরিশালে বৃষ্টি হয়েছে ২১ মিলিমিটার। এনিয়ে গত শনি ও রোববার বরিশালে প্রায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হল। অথচ আবহাওয়া বিভাগের মতে, চলতি ডিসেম্বরে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টি হবার কথা মাত্র ৯ মিলিমিটার।
অসময়ের এ বর্ষণ সহ নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে শীত অনেকটাই বিদায় নিয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু ৮ ডিসেম্বর তা ২১.২ ডিগ্রীতে বৃদ্ধি পায়। গতকাল সকালে বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। পটুয়াখারীর কলাপাড়াতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চিল ২২.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অথচ ডিসেম্বরে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকার কথা ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কিছুটা ওপরে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আজ সকালের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রাতের তাপমাত্রা হৃাসের কথা বলা হয়েছে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তীত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। গতকাল বরিশালে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ পরিণত হবার পরে তাও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হবার কথা বলা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের নদী বন্দরগুলো থেকে সব ধরনের সতর্কতাও প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু গতকালও ৪র্থ দিনের মত সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে সূর্যের দেখা মেলেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান ফসল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ