Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত ৫০ ভাগ মানুষ

সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস আজ

হাসান সোহেল : | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৫ এএম | আপডেট : ১২:৪৮ এএম, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭

নীতিনির্ধারণেই কেটে গেছে পাঁচ বছর , বাড়ছে স্বাস্থ্য ব্যয়
দেশের উন্নয়ন স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজন জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। এজন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (ইউএইচসি) বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। কিন্তু সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি কেমন হবে, এর আওতায় সেবার পরিধি কতটা থাকবে, জনঅংশগ্রহণ কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে, আর্থিক নিশ্চয়তা ইত্যাদি নীতি-নির্ধারণেই কেটে গেছে পাঁচ বছর। এতে এটি বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। আর এসব দুর্বলতায় মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়ে গেছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা পেতে দেশের মানুষের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৭০ ভাগ পকেট থেকেই করতে হয়। কয়েক বছর আগেও যা ছিল ৬৩ ভাগ। নির্ধারিত সময়ে ইউএইচসি বাস্তবায়ন করতে না পারলে এ খাতে ব্যক্তিগত ব্যয় বাড়তে থাকবে। আর তাই স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতে দেশের মানুষের একটি বড় অংশ সর্বশান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, গবেষণায় দেখা গেছে- দেশে ৪০ ভাগ মানুষের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা হলেও ৫০ ভাগ মানুষ গুণগত সেবা পাচ্ছে না। অথচ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মূল লক্ষ্য দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং এ খাতে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ব্যয় শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। ইউএইচসি’র ক্ষেত্রে এসডিজি অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি নিশ্চিত করার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে দেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, নীতি নির্ধারণে যদি ৫ বছর কেটে যায় তাহলে বাকী ১৩ বছরে গোটা দেশে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা সে ব্যাপারে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। আর তাই আগামী দিনগুলোতে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে কাজে লাগাতে হবে। পাশাপাশি সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললে বাংলাদেশেও ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ নিশ্চিত হতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্যখাতে এ বছর ২২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যায়ের মাথাপিছু ৩৭ ডলার খরচ হচ্ছে বলে সরকারিভাবে বলা হচ্ছে। সে ব্যয়েরও সঠিক ব্যবহার নেই। অথচ প্রয়োজন ৬০ দশমিক ৫ ডলার। তাই বাধ্য হয়েই মানুষ ব্যক্তিগতভাবে সেবা নিচ্ছে। আবার এ ব্যায় বেশি হওয়ার কারণে ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্ব^লির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা’র উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ টাঙ্গাইল জেলার ৩টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্প শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনমিক্স ইউনিট। তিন বছরের জন্য এ প্রকল্প পরিচালিত হওয়ার কথা। এ পাইলট প্রকল্পের সফলতা বা ব্যর্থতার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে ওই কর্মসূচি শেষ হতে এখনো দু’বছর বাকী। অর্থাৎ ইউএইচসি কর্মসূচি বাস্তবায়নে আরও দু’বছর পিছিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষ’ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্বাস্থ্য আমার অধিকার, অধিকারের জন্য জাগো’। দিবসটি উপলক্ষে আজ দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ইকোনমিক্স ইউনিটের পক্ষ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হবে। র‌্যালিটি শাহবাগ থেকে কলা ভবনের সামনে এসে শেষ হবে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সেমিনারের আয়োজন করেছে।
এদিকে, একাধিক আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ইউএইচসি অর্জনে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। গত বছরের ২০ ফেব্রæয়ারি যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট ১১টি দেশের ইউএইচসি অর্জন পরিস্থিতি নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ করে। ‘মুভিং টুওয়ার্ডস ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ : লেসনস ফরম ১১ কান্ট্রি স্টাডিজ’ শীর্ষক ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ করণীয় ঠিক করছে, দেশটিতে খুব কম মানুষ সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক মো. নুরুজ্জমান বলেন, কোন ব্যক্তির মোট আয়ের ২০ শতাংশের বেশি যদি চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয় তবে সে বিপর্যস্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার জন্য একাধিক গবেষণা ও সমীক্ষা করা হয়েছে। পলিসি নিয়ে কাজ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে অপচয় কমানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইউএইচসি কাভারেজের আওতায় কি থাকবে, কি বেশি প্রয়োজন এসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে কাজ হয়েছে। অর্থাৎ বিগত পাঁচ বছরে কিছু হয়নি সেটি বা ঠিক হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে ব্যক্তি যেন মানসম্পন্ন সেবা সঠিকভাবে পায় এবং প্রয়োজনীয় সেবা নিতে গিয়ে মানুষকে যেন নিঃস্ব হতে না হয় সে জন্যই ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাচ্ছেনা। তাই গত ৫ বছর ধরে ইউএইচসি শহর, নগর, গ্রাম থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবার মাঝে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে- যতটুকু সেবা দরকার ততটুকু দিতে হবে। এমনকি এ জন্য যতটুকু খরচ তার বেশি যেন না হয়, সেটিই কোয়ালিটি হেলথ কেয়ার। প্রথমত কোয়ালিটি হেলথ কেয়ার হল মেডিকেল আসপেক্ট বা চিকিৎসকের ডায়াগনোসিস ও প্রেসকিপশন সুবিধা যা কোয়ালিটি সেফটি। আরেকটি হল নন-মেডিকেল আসপেক্ট অর্থাৎ রোগীকে গুরুত্ব কম দিয়ে দেখা বা ডায়গনোসিস না করা বা যতটুকু ইফিসিয়েন্সি আছে সেটা না করা। যেগুলো পরিপূর্ণভাবে হওয়াই কোয়ালিটি সেবা। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু সেখানে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, হেলথ এ্যাসিসটেন্ট ও এফডবিøউ’রা শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে কোয়ালিটি সেবা দিতে পারছেনা।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার মূল কথা হচ্ছে, সব মানুষ প্রয়োজনের সময় মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা পাবে। চিকিৎসাসেবা কিনতে গিয়ে কেউ দরিদ্র হয়ে পড়বে না। উদ্দেশ্য অর্জনে কৌশল হিসেবে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপচয় ও দুর্নীতি কমাতে হবে। স্বাস্থ্য বীমা মানুষকে সেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেবে। ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ধারণা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছে। #



 

Show all comments
  • মিজান লাকসামী ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৭:১২ এএম says : 0
    স্বাস্থ অধিদপ্তরে স্বাস্থহীন লোকদের নিয়োগ দিলে ভাল সেবা পাওয়া যেতে পারে॥
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্যসেবা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ