রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : সীতাকুন্ডের বারৈয়াঢালার কৃষক ফরিদুল আলম এখন আর সরিষার চাষ করেন না। এই ফসল চাষ করতে গিয়ে ক্রমাগত লোকসানের স্বীকার হওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে সরিষার চাষ পুরোপুরি বন্ধ করে দেন তিনি। এখন শীত মৌসুমে সরিষার বদলে জমিতে চাষ করেন টমেটো, শিম ও কাঁচা মরিচ। এসব সবজি চাষে বেশ লাভবানও হচ্ছেন। সীতাকু- পৌরসদরস্থ মোহন্তেরহাটে চাষাবাদ বিষয়ে আলাপকালে এসব কথা জানান চাষি ফরিদ। তিনি বলেন, একসময় ৩০ শতক জমিতে সরিষার চাষ করতেন। এই জমি থেকে পাওয়া সরিষা দিয়ে তৈরি করতেন সরিষার তৈল। বিশুদ্ধ এই তৈল নিজে ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রিও করতেন। সেসময় প্রতি মৌসুমে সমস্ত খরচ বাদ দিয়েও ২০/২৫ হাজার টাকা লাভ হতো। কিন্তু পরপর ৬/৭ বছর সরিষা চাষে লোকসান দিয়ে চাষাবাদ বন্ধ করে দেন তিনি। সরিষার চাষে লোকসানের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে চাষি ফরিদ বলেন, সীতাকু-ে আউশ ও আমন ধানের আবাদ বেশি। এই ধানগুলির ফলনও বেশ ভালো হয়। তাই চাষিরা এ ধান চাষ করে পরে জমিতে অন্য কিছু চাষের চিন্তা করেন। কিন্তু আউশের পর আমন ধান চাষের ফলন উঠতে ডিসেম্বর মাস চলে আসে। অন্যদিকে অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে সরিষা বপন করা না গেলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। ডিসেম্বরে আমন উঠার পর ঐ জমিতে সরিষা চাষ করলে অর্ধেক ফলনও উৎপাদন হয় না। ফলে লাভের বদলে লোকসান গুনতে হয় কৃষকদের। এভাবে কৃষকরা দেরিতে চাষ করলে লোকসান হবে বুঝতে না পেরে চাষাবাদ করায় বেশ কয়েক বছর লাভের বদলে লোকসানের স্বীকার হন তারা। ফলে আগ্রহ কমতে থাকে। এই সবজি বাজারে আসা অপর এক কৃষক মুরাদপুরের রহমত উল্লাহ বলেন, সীতাকু- হচ্ছে সকল শাক-সবজি ভা-ার। প্রায় সব ধরনের ফসল এখানে চাষ হয়। তবে অন্য সবজির তুলনায় সরিষার চাষ বরাবরই কম ছিলো। কিন্তু একথা ঠিক যে কমের মধ্যেও বিগত ১০/১২ বছর আগে যতটুকু সরিষা চোখে পড়ত এখন তাও নেই। এখন একটি সরিষা ক্ষেত খুঁজতে হলে কয়েক গ্রাম ঘুরতে হবে। তাও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। এই কৃষক বলেন, আমাদের সীতাকু-ে সরিষা চাষে সফলতার কথা কমই শোনা যায়। আর যে ফসল চাষ লোকসানের ঝুঁকি থাকে স্বাভাবিকভাবে কৃষক আর সেদিকে যেতে চান না। এদিকে এই কৃষকদের কথা যে মিথ্যা নয় তার প্রমাণ মেলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে। বাড়বকু-, মুরাদপুর, বারৈয়াঢালা, সৈয়দপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাকখালী শেখেরহাট এলাকায় দু’য়েকটি ক্ষেতে সরিষার চাষ দেখা গেছে। এছাড়া কুমিরা ও বাড়বকু-ের ৩/৪টি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। এসব জমির ফলন উঠতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে। ফলে ফলন কেমন হয় তা দেখতে আরো কিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে কৃষকদের। আর হাতেগোনা এ কয়েকটি জমি বাদ দিলে উপজেলার সুবিশাল কৃষি ভূমিতে সরিষা দুর্লভ প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। অবস্থা এমনই যে সব মিলিয়ে সরিষা চাষের পরিমাণ এক একরের চেয়েও কম। এক কথায় এ উপজেলায় সরিষা চাষ এখন বিলুপ্তির পথে। সরিষা চাষের করুণ অবস্থার কথা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহকারী কৃষি ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ প্রতিবেদককে বলেন, এখন সীতাকু-ে সরিষা নেই বললেই চলে। আমাদের হিসেবে সরিষা চাষের পরিমাণ অর্ধ হেক্টর জমিও হবে কিনা সন্দেহ। তিনি বলেন, বাকখালীর কয়েকটি জমি বাদ দিলে এবার আর কোথাও সরিষা চাষের কথাও আমরা অবগত নই। চাষিদের মত তিনিও আউশ-আমন চাষের কারণে সরিষা চাষের সময় না থাকায় এ অবস্থা হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, আমন ধান উঠার পর সরিষা চাষ করলে চাষিরা লাভের বদলে উল্টো লোকসানে পড়েন। এ কারণে সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।