Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্ভাব্য সকল উৎস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এ যুগে সবকিছুর চালিকাশক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ। দেশে সেই বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থা আশানুরূপ নয়। গড়ে অর্ধেকের কিছু বেশি মানুষ সুবিধা পেয়েছে। বাকীরা পায়নি। বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যার লক্ষ্য হচ্ছে-২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন। এর ৬০% উৎপাদন আমদানীকৃত কয়লা দিয়ে। ২০২১ সাল নাগাদ সবার কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ হচ্ছে না বিভিন্ন কারণে। সর্বপরি বিশ্বজুড়ে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে কয়লা ও জ্বালানি তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিরুৎসাহী করা হচ্ছে। কারণ, বায়ূমন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী হচ্ছে কয়লা ও তেল পোড়ানোকে। যাকে বলে জীবাস্ম জ্বালানি। যেমন: বিশ্বের মোট কার্বন ডাই অক্সাইডের ৪০% আসে কয়লা থেকে। তাই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি-২০১৫ এর অন্যতম শর্ত হচ্ছে বায়ুমন্ডলের উঞ্চতা হ্রাসকরণ, যা কয়লা ও জ্বালানি তেল ব্যবহার বন্ধ করা ছাড়া সম্ভব নয়। এই চুক্তিতে ১৯৭টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। এই অবস্থায় পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে বিশটি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দুইটি রাজ্য। দেশগুলো হচ্ছে: অ্যাঙ্গোলা, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ব্রিটেন, কানাডা, কোস্টারিকা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল এবং সুইজারল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও ওরেগন রাজ্য। একই কারণে ২০৩০ সাল থেকে চীন, ভারত ও যুক্তরাজ্য কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। উপরন্তু এই দেশগুলো এখন থেকেই কয়লা দিয়ে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদনও বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বপরি এই দেশগুলো ২০৪০ সাল থেকে জ্বালানি তেল দিয়ে যানবাহন চালানো বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এসব দেশসহ আরো কতিপয় দেশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সা¤প্রতিক আবিষ্কার ব্যাটারি। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় ১ ডিসেম্বর ’১৭, যা তৈরি করতে সময় লেগেছে মাত্র ৬০ দিন। একশো মেগাওয়াটের এই ব্যাটারি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান- টেসলা। এটি সংযুক্ত একটি উইন্ডফার্মের সাথে। সেটি দিয়েই এই ব্যাটারি চলছে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে সৌর বিদ্যুৎ সর্বাধিক। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। বিশ্বের মোট ৬০ লাখ সৌর প্যানেলের মধ্যে বাংলাদেশেই আছে ৪০ লাখ। উপরন্তু তা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পরিকল্পনা মোতাবেক ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৬০% বিদ্যুৎ কয়লা দিয়ে উৎপাদন করা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশ্নের সন্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপরন্তু বিষয়টি আমাদের জন্য অনৈতিকও। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম প্রধান দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলের এলাকাসমূহ তলিয়ে গিয়ে প্রায় তিন কোটি মানুষ গৃহ ও সম্পদহীন হয়ে পড়বে বলে বিজ্ঞানীদের অভিমত। ইতোমধ্যেই তার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। ঝড়, বন্যা, খড়া ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা মোকাবেলা করা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিশ্ব স¤প্রদায়ের সহায়তা আবশ্যক। কিন্তু নিজেরাই যদি জীবাস্ম জ্বালানি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে বায়ুমন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি করি এবং তার ক্ষতি মোকাবেলা করার জন্য বিশ্ববাসীর কাছে সহায়তা চাই, তাহলে বিষয়টি দ্বিচারিতার পর্যায়ভুক্ত ছাড়া কিছুই নয়। তাই কয়লা দিয়ে দেশে বিপুল পরিমাণের বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের দ্বিতীয় ও অন্যতম ব্যবস্থা হচ্ছে পরমাণু বিদ্যুৎ। এ পর্যন্ত ৩২টি দেশ পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বিপুল পরিমাণে। এ ক্ষেত্রে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি স্থানে লোমহর্ষক দুর্ঘটনায় ব্যাপক অপূরণীয় ক্ষতিও হয়েছে। তবুও কোন দেশই পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন ত্যাগ করেনি। বরং কোন কোন দেশ আরো পরমাণু প্লান্ট নির্মাণ করছে। আরো অনেক দেশ নতুন করে এ পথে যাত্রা শুরু করেছে। তাতে বাংলাদেশও শামিল হয়েছে। এ ব্যাপারে গত ৩ ডিসেম্বর চীন বাংলা বেতারের খবর প্রণিধানযোগ্য। তাতে বলা হয়েছে, ১৯৬১ সালে স্বাধীনতার আগে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মা তীরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা হলেও তা বাস্তব রূপ পেতে লেগে গেছে অর্ধ শতাব্দিরও বেশি সময়। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে কারিগরি গবেষণার জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই বছরেরই অক্টোবরে রূপপুরে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় আনবিক শক্তি করপোরেশন- রসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এএসই গ্রæপ অব কোম্পানিজ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। গত ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুরে নিজ হাতে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথম ও সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে বিশ্বের পারমাণবিক ক্লাবের সদস্য হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগান দেবে জাতীয় গ্রিডে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে একটি চুল্লি চালু হলে যোগ হবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। আর ২০২৪ সালে দ্বিতীয় চুল্লিটি চালু হলে যোগ হবে আরো ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে অল্প খরচে বিদ্যুতের চাহিদা মিটানো যাবে। এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এ বিষয়ে কারো কোনো সংশয় নেই। তবে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রক্ষাণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে বিভিন্ন মহলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ৫ স্তরের নিরাপত্তাবিশিষ্ট ভিভিইআর প্রযুক্তি থাকবে। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় দুটি চুল্লিতে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মীদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তাই এর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। দেশের মানুষেরও চাওয়া- পরমাণু দুর্ঘটনার ঝুঁকিমুক্ত থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরমাণু শক্তির যথাযথ ব্যবহার। স্মরণীয় যে, পরমাণু বিদ্যুৎ প্লান্ট থেকেই পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ করা হয়। তাই অনেকে স্বপ্নও দেখছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সে পথে পা বাড়াবে বলে মনে হয় না। কারণ, পরমাণু অস্ত্র নিরোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। সর্বপরি আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশন সব সময় এই প্লান্টটি তদারকি করবে। তাই সেখানে পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ করা সম্ভব নয়। যা’হোক, পরমাণু বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় খুব কম। একবার নির্মাণ করতে পারলে তা থেকে প্রায় ৫০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। অথচ প্রশাসনিক ব্যয় ছাড়া অন্য খরচ তেমন হয় না বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাই এর উৎপাদন ব্যয় পানিবিদ্যুৎ ও নবায়নকৃত বিদ্যুতের চেয়ে সামান্য একটু বেশি। এই অবস্থায় দেশের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আরো পরমাণু প্লান্ট নির্মাণের দাবি উঠেছে সুধী মহল হতে। সরকারও তা করার জন্য যায়গা খুঁজছে বলে জানা গেছে। পরমাণু প্লান্ট নির্মাণের জন্য বিপুল যায়গা দরকার। এছাড়া, পরিবেশের বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের মতো ক্ষুদ্র আয়তনের ও ঘন বসতির দেশে সে পরিমাণের কয়েকটি যায়গা পাওয়া কঠিন। অবশ্য বিশাল বঙ্গোপসাগরের উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বিশাল বিশাল চর জেগে উঠেছে এবং উঠছে। সেখানে পরমাণু বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণের বিষয়ে ভেবে দেখা যেতে পারে। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সমুদ্রে ভাসমান পরমাণু বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ করা। ইতোমধ্যেই চীন সাগরে ভাসমান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রজেক্ট বানানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এর কয়েকটি তৈরি করা হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন চীন সরকারের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিষয়ক মুখপাত্র। আমাদের দেশ বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী। খুলনা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত দীর্ঘ উপকূল রয়েছে। তাই সমুদ্রে ভাসমান পরমাণু প্লান্ট নির্মাণ করা খুবই সহজ। অবশ্য এই ধরনের প্লান্ট নিজম্বভাবে নির্মাণ করার সক্ষমতা আমাদের নেই। তাই এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ চীন অথবা অন্য কোন দেশের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। স্মরণীয় যে, দেশে পরমাণু বিদ্যুতের প্লান্ট চালানোর মতো দক্ষ জনবল নেই। তাই রাশিয়ায় ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রেরণ করা হয়েছে পরমাণু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। যা খুবই ব্যয় বহুল। তাই এই শিক্ষা দেশেই পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্জনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। এছাড়া, সাধারণ বিদ্যুৎ খাতেও দক্ষ লোকের অভাব আছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মাঝে মধ্যেই অভিমত ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারেও জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রয়োজনে এ খাতে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, দ্বিতীয় প্রজন্মের সোলার প্যানেল ব্যবহার করা খুবই কল্যাণকর, যা আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন। এ ব্যাপারে গত ২৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকাকে বিসিএসআইআরের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহরিয়ার বাসার বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় প্রজন্মের সৌর কোষ বা থিন ফিল্ম সোলার সেল তৈরি করা হয়েছে। মেঘলা দিনেও এ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। সূর্যের আলো থেকে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা (এফিশিয়েন্সি) এখন পর্যন্ত ৪.৩২%। উচ্চতর গবেষণা করে এই ক্ষমতা বাড়িয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে নেওয়ার কাজ চলছে। আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে এফিশিয়েন্সি ১০% এর ওপরে নিয়ে যাওয়া যাবে। তখন এটা বাণিজ্যিক উৎপাদনের পর্যায়ে চলে যাবে। একটি ২৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ইঞ্চি প্রস্থের সৌর প্যানেলে ৩৬টি সৌর কোষ থাকে। একেকটি সৌর কোষে সাতটি স্তর। কাঁচামাল হিসেবে কাচ ব্যবহার করে সৌর কোষের স্তরগুলো সাজিয়ে এই সৌর কোষ তৈরি করা হয়েছে। এ কাজে প্রয়োগ করতে হয়েছে ন্যানো টেকনোলজি বা অতিক্ষুদ্র প্রযুক্তি। এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি নিজে। তার নেতৃত্বে মোট ১১ জন বিজ্ঞানীর একটি দল এই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কাজে পরমাণু শক্তি কমিশন, বুয়েট, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০ জনের একটি দল নিয়মিত সহযোগিতা করছেন। বিসিএসআইআর এর এই দ্বিতীয় প্রজন্মের সোলার সেলের আবিষ্কার নিয়ে আরো খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীরা প্রথম প্রজন্মের একটি সৌর কোষ তৈরি করতে সক্ষম হন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। তখন এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (এফিশিয়েন্সি) ছিল ০.৬%। আর দ্বিতীয় প্রজন্মের এফিশিয়েন্সি ১০% এর বেশি। অর্থাৎ ২০ গুণ বেশি। সর্বপরি প্রথম প্রজন্মের চেয়ে প্রায় ৫০ ভাগেরও কম খরচ হয় দ্বিতীয় প্রজন্মের সৌর কোষ তৈরিতে। এই সৌর কোষ বানাতে সিলিকনের বদলে কপার, টিন, দস্তা ও সালফার, কাচ ইত্যাদি সহজলভ্য ও কম দামি পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া দ্বিতীয় প্রজন্মের সোলার সেলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি মেঘলা দিনেও (ডিফিউজ সানলাইট) বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। অথচ, প্রথম প্রজন্মের সোলার সেল মেঘলা দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না। আরো জানা গেছে যে, সারা বিশ্বের সৌর কোষ নিয়ে কাজ করা পরীক্ষাগারগুলোতে সৌর কোষের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সর্বশেষ রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলে তা ন্যাশনাল রিনিউঅ্যাবল এনার্জি ল্যাবরেটরির (এনআরএএল) একটি ডেটাবেইসে নথিভুক্ত করা হয়। সেই রেকর্ড মতে দ্বিতীয় প্রজন্মের সৌর কোষের এফিশিয়েন্সি ২৩.৩% পৌঁছেছে। আর আমাদের নবআবিষ্কৃত সেলের এফিশিয়েন্সি হবে সর্বোচ্চ ১০%। অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। তবুও ভালো। কারণ, বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত সব সৌর প্যানেল আবমদানিকৃত এবং মূল্য অধিক। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেশি। ইউনিট প্রতি ১২-১৩ টাকা করে পড়ছে। অপরদিকে, দেশের তৈরি দ্বিতীয় প্রজন্মের সৌর প্যানেলের মূল্য তার অর্ধেকের কম আর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমান সৌর প্যানেলের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। উপরন্তু সুর্যের আলো অনেকক্ষণ না থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায়, দ্বিতীয় প্রজন্মের সৌর প্যানেল খুবই কল্যাণকর। তাই এই প্যানেল বাজারজাত হওয়ার সাথে সাথেই সর্বত্রই রিপ্লেস করতে পারলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন বর্তমানের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পাবে। ফলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশে এক নবদিগন্তের সূচনা হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ