Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ব

জাতিসংঘে তোপের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে জেরুসালেম স্বীকৃতি দেয়া সংক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ব। ৫৬টি দেশের দেড় শ’ কোটিরও বেশি মুসলিমের পাশাপাশি খ্রিস্টান প্রধান দেশগুলোও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ ঘোষণাকে মেনে নিতে পারেনি। নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী বৈঠকে বিশ্বের প্রায় সব বৃহৎ শক্তির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি আর ইউরোপীয় ইউনিয়নও এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বীকৃতি অসহযোগিতামূলক। পুরো বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র এমন অবস্থান নিলো যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা ও নিন্দা জানানো হয় বৈঠকে। ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে আবারো বিষয়টির মীমাংসায় দুই দেশের আলোচনার প্রতি জোর দেন। আর ফরাসী প্রতিনিধি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যেই আরো ভয়ানক পরিণতি নিয়ে আসছে। জরুরি বৈঠকে কার্যত যুক্তরাষ্ট্র সবার প্রতিপক্ষে পরিণত হয়। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে মদদ দেবার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘এখানে খারাপ কাজের সহযোগিতাকে স্বীকার করতে হবে। অঞ্চলটিতে ইসরাইলের দমন পীড়ন আর বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত আরো উস্কে দিয়েছে। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার শান্তির মধ্যস্থতাকারীর অবস্থান হারিয়েছে’।
তবে জাতিসংঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানোন বুধবারে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেছেন, জাতিসংঘ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি রক্ষা করার বদলে শান্তি নষ্টের চেষ্টা করছে। নিকি হ্যালে বলছেন, ‘বহুবছর ধরেই জাতিসংঘ ইসরাইলের প্রতি অসংযতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে যা কিনা ক্ষতি এনেছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র এর পক্ষে থাকতে পারে না’।
এদিকে অধিকৃত গাজা উপত্যকায় গতকাল বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। গাজা থেকে ইসরাইলি ভূখন্ডে রকেট হামলার জবাবে ইসরাইলের ওই বিমান হামলায় শনিবার ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের দুই যোদ্ধা নিহত হয়েছে। শুক্রবার হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি শহর লক্ষ্য করে তিনটি রকেট নিক্ষেপ করে যোদ্ধারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পরের দিন শুক্রবার ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন করেন ফিলিস্তিনিরা। ওইদিন বিক্ষোভে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আরো দুই ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় হামাসের চারটি স্থাপনায় ইসরাইলি বিমান বাহিনী (আইএএফ) হামলা চালিয়েছে। এরমধ্যে দুটি অস্ত্র উৎপাদন এলাকা, একটি অস্ত্রাগার ও একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
গতকালের এই হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে হামাস। ফিলিস্তিনি এই স্বাধীনতাকামী সংগঠন বলছে, হামাস সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় তাদের দুই যোদ্ধা নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরাইলি হামলায় ছয় শিশুসহ আহত হয়েছে আরো কমপক্ষে ২৫ জন। ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। জেরুজালেমকে ইসরাইলি রাজধানী ঘোষণার পর বিক্ষোভের আগুনে উত্তাল ফিলিস্তিনে এ নিয়ে চারজনের প্রাণহানি ঘটলো। এছাড়া আহত হয়েছে প্রায় এক হাজার একশ’ জন।
আরবসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন মুসলিমরা। মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির নিন্দা ও ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনে সংহতি জনাতে হাজার হাজার মুসলিম বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা পোড়ায় ও মার্কিন পতাকায় অগ্নিসংযোগ করেন। জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, মিসর, ইরাক, তুরস্ক, তিউনিশিয়া এবং ইরানে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। পদত্যাগ করেছেন ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক কর্মকর্তা ডিনা। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের সামনে কয়েক শ’ মুসলিম ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিবাদে সমবেত জুমা নামায আদায় ও বিক্ষোভে অংশ নেয়।
আরব বিশ্ব ও মার্কিন পশ্চিমা মিত্র রাষ্ট্রগুলো ট্রাম্পের বুধবারের ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে। দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের শান্তি প্রক্রিয়ায় বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে জেরুজালেমের অবস্থান। সউদী আরব সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে বলেছে যে, এ ঘোষণা চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে আরো চাঙা করে তুলবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পর ফিলিস্তিনে উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে। বিবিসির একজন সংবাদদাতা বলছেন, উপসাগরীয় এলাকায় ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে, মি ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় তা ইরান এবং আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের জিহাদিদের চাঙা করে তুলবে। বাহরাইনে মানামা ডায়ালগ ইভেন্ট নামে এক বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলনে সউদী প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সালের কথায় তারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল। তিনি বলছেন, এ ঘোষণা জঙ্গি গ্রুপগুলোর জন্য অক্সিজেনের মতো কাজ করবে এবং তা মোকাবিলা করা কঠিন হবে। প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল গত ২০ বছর ধরে সউদী আরবের গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ সম্মেলনে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হেইলির একটি প্রবন্ধ পড়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি আসেননি।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশই পূর্ব জেরুজালেমকে ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইল জোরপূর্বক দখল করে আছে বলে মনে করে। জেরুজালেমের প্রাচীন নগরীও ইসরাইলের দখলে রয়েছে; যা মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্র ভূমি হিসেবে স্বীকৃত।
জেরুজালেম প্রশ্নে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন যৌথভাবে’ মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়ার চূড়ান্ত সমাধানের অংশ হিসেবে ৭০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি অনুসরণ করে এসেছে। বুধবার সেই নিয়ম ভেঙে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি এবং এখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের নির্দেশ দিলেন।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের যে প্রস্তাবের ভিত্তিতে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন ভেঙে একদিকে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল, অন্যদিকে আরব ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হয়, তাতে জেরুজালেমের জন্য স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ইসরাইল পূর্ব ও পশ্চিম জেরুজালেম দখল করে নেয় এবং এককভাবে তা নিজ দেশের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেয়। সেই অন্তর্ভুক্তি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় কখনো মেনে নেয়নি। ১৯৯৫ সালে ইসরাইল ও পিএলও স্বাক্ষরিত অসলো শান্তিচুক্তিতে উভয় পক্ষ মেনে নেয় যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জেরুজালেমের প্রশ্নটি নির্ধারিত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২০০০ সালে হোয়াইট হাউসের লনে ইসরাইলি নেতা র‌্যাবিন ও ফিলিস্তিন নেতা আরাফাত যে শান্তি কাঠামো স্বাক্ষর করেন, তাতেও এই প্রশ্নে উভয় পক্ষের সম্মতি ছিল।
কলমের এক খোঁচায় সব বদলে দিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের কট্টর দক্ষিণপন্থী ইহুদি নেতারা দীর্ঘদিন ধরে জেরুজালেমকে নিজেদের একচ্ছত্র রাজধানীর স্বীকৃতির দাবি করে আসছেন। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে এই দাবি তিনি মেনে নেবেন। আপাতভাবে ট্রাম্প নিজের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন, কিন্তু এই এক ঘটনার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রশ্নে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজের ভূমিকা তিনি নিজেই বাতিল করে দিলেন।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, এর ফলে শান্তিপ্রক্রিয়া নস্যাৎ হওয়ার ব্যবস্থা পাকাপাকি হলো। এরপর যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপ্রক্রিয়ার নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে আর দাবি করতে পারে না। ইসরাইলি দৈনিক হারেৎস এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে মন্তব্য করেছে, এই সিদ্ধান্তে শুধু লাভ হলো ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার অতি কট্টরপন্থী সমর্থকদের।
আরও স্পষ্ট করে বলেছেন ফিলিস্তিনি নেতা হানান আশরাবি। তাঁর কথায়, এর ফলে কেবল শান্তিপ্রক্রিয়ার মৃত্যু হলো তা-ই নয়, এই অঞ্চলে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া ত্বরান্বিত হলো।
জেরুজালেম আরব ও ইহুদি উভয়ের কাছে পবিত্র নগর। কয়েক বছর আগে কাজের সূত্রে একজন সাংবাদিক সেই শহরে গিয়েছিলেন। তখন পূর্ব ও পশ্চিম জেরুজালেমের ফারাক দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। পশ্চিম জেরুজালেম সব সুযোগসংবলিত অতি আধুনিক একটি শহর, পূর্ব জেরুজালেম ভগ্নপ্রায়। এই শহরের প্রায় সাড়ে তিন লাখ ফিলিস্তিনি অধিবাসীর জন্য নির্ধারিত এলাকায় ইসরাইল ক্রমশই নতুন ইহুদি বসতি নির্মাণ করে চলেছে, এর ফলে পূর্ব জেরুজালেম দ্রæত তার আরব চরিত্র হারাচ্ছে। পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসন বসতি স¤প্রসারণে আপত্তি জানালেও ট্রাম্প তাতে নীরব সম্মতি জানিয়েছেন। ইসরাইলে ট্রাম্পের নতুন রাষ্ট্রদূত এই স¤প্রসারণের পক্ষে। এ ব্যাপারে তিনি কোনো রাখঢাক করেননি।
ঠিক এ সময়েই কেন ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নিলেন, সেই রহস্য এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই কাজে নেতৃত্ব দিতে তিনি নিজ জামাতা জ্যারেড কুশনারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু ঠিক কীভাবে শান্তি আসবে, তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা আছে কি না, ট্রাম্প বা কুশনার কেউই তা খোলাসা করে বলেননি। বুধবার তার ঘোষণায় ট্রাম্প দাবি করেন, শান্তিপ্রক্রিয়ায় নতুন পথ অনুসরণের জন্যই তার এই সিদ্ধান্ত। ‘আমি ঠিক কাজটিই করেছি।’ বলেন তিনি।
কোনো কোনো ভাষ্যকার অবশ্য অন্ধকারেও আলোর সম্ভাবনা দেখেছেন। লক্ষণীয়, বুধবারের ঘোষণায় ট্রাম্প এই এলাকায় আরব ও ইহুদিদের জন্য স্বতন্ত্র দুটি রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন জানান। যদি দুই পক্ষ তা-ই চায়, তাহলে তিনি তাতে সমর্থন জানাবেন। আরও লক্ষণীয়, একই ঘোষণায় ট্রাম্প ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের চূড়ান্ত সীমান্ত কী হবে, সে প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। তা থেকে কেউ কেউ ধরে নিয়েছেন, দুই পক্ষ চাইলে পূর্ব জেরুজালেমে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানীও হতে পারে। সে সিদ্ধান্ত নেবে বিবাদের দুই পক্ষ। ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, শান্তিপ্রক্রিয়া প্রশ্নে আলোচনা চলবে, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সেই উদ্দেশ্যে খুব শিগগির এই অঞ্চল সফরে আসবেন।
ঘোষিত হলেও এ মুহূর্তেই জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরিত হচ্ছে না। এ জন্য জায়গা নির্বাচন থেকে ভবন নির্মাণের জন্য তিন-চার বছর লেগে যাবে। ট্রাম্পের সময়কালে এই সিদ্ধান্ত আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
শান্তিপ্রক্রিয়ার সমর্থনে ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত নেননি। কোনো কোনো ভাষ্যকার বলেছেন, তার মূল লক্ষ্য ছিল নিজের রক্ষণশীল সমর্থকদের মধ্যে নিজের জনপ্রিয়তা পোক্ত করা। শুধু মার্কিন ইহুদি লবি নয়, রিপাবলিকান দলের ইভানজেলিক্যাল অংশ এই সিদ্ধান্তে তাদের সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছে। কংগ্রেসে দুই দলের অধিকাংশ সদস্যই এই সিদ্ধান্তে নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
মনে রাখা দরকার, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় নেওয়া হলো, যখন ফিলিস্তিনি ও আরব বিশ্ব প্রবলভাবে বিভক্ত। ট্রাম্প তাদের দুর্বলতার এই সুযোগ গ্রহণ করলেন। কোনো কোনো আরব দেশ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালেও এই প্রশ্নে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ তারা নেবে’ একথা ভাবার কোনো কারণ নেই। সউদী আরব ইরানকে একঘরে করার লক্ষ্যে ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, মিসর ও আমিরাতের রাজ্যগুলোও এই আঁতাতের অংশ। মিসরের ধর্মীয় নেতারা ইসরাইলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ফিলিস্তিনি গ্রæপ হামাসকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
ইউরোপীয়রা নীতিগতভাবে ফিলিস্তিনের অধিকারের পক্ষে কথা বললেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে সাহসী কোনো পদক্ষেপ তারা নেবে না, এ কথায় কোনো সন্দেহ নেই। জাতিসংঘ আরও একটি অর্থহীন প্রস্তাব গ্রহণের চেষ্টা নেবে, যা ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তিতে নস্যাৎ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সব ভার ফিলিস্তিনিদের একাই বহন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘রক্ষাকর্তা হবে’ এত দিন এই ভ্রম তাঁরা জাগিয়ে রেখেছে। মাহমুদ আব্বাসের বিভক্ত ও দুর্বল নেতৃত্ব সেই ভ্রম কাটিয়ে উঠলেও আরেক দফা বিক্ষোভ ও সহিংসতার বাইরে তারা আর কী করতে পারেন, তা পরিষ্কার নয়। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, এপি, রয়টার্স, ডি ডবিøউ।
তিউনিসিয়ায় মার্কিন দূতাবাস বন্ধ
জেরুজালেমকে ইসরাইলি রাজধানী ঘোষণার প্রতিবাদে তীব্র বিক্ষোভের মুখে তিউনিসিয়ায় দূতাবাস বন্ধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল স্থানীয় সবাদমাধ্যম দোস্তর ডটওআরজির বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই এক প্রতিবেদনে তিউনিসিয়ায় মার্কিন দূতাবাস বন্ধের খবর দিয়েছে। তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিশে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা দেশটিতে চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের। তিউনিসিয়া চলাচলে সরকারি নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
মিডল ইস্ট আই বলছে, তিউনিসিয়ায় জনসমাগমপূর্ণ এলাকা ও সমাবেশ এড়িয়ে চলতে মার্কিন নাগরিকদের নির্দেশ দিয়েছে দূতাবাস। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শুক্রবার তিউনিসিয়ার বিক্ষোভকারীদের মার্কিন দূতাবাসমুখী পদযাত্রায় বাধা দিয়েছে দেশটির পুলিশ।
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার প্রতিবাদে তিউনিসিয়ার বেশ কয়েকটি শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানী তিউনিসে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলবের পর তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেজি সাইদ এসেবসি বলেছেন, তার দেশ জেরুজালেম ঘোষণা সংক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছে।



 

Show all comments
  • বশির ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৫:৪৩ এএম says : 0
    সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষকে এক হতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmed ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:২৯ এএম says : 0
    Muslim ra kisoi korte parbena.Tara sodo erokom kospottolika doho korei jabe, er boro karon hochche ehodi, christian ra agei muslim der ke technically separate kore rekhese, ar muslim ra sei rajnitite pore royese. Khomotar sartho tara boro kore dekse. Dongsho muslim der hobei, porisker boja jasche je muslim der rokhkha korar keu nei. Muslim der kono boro netritto o nei. Prithibi sakhkhi hoye gelo je kibabe onnai kora jai, kibabe power ke kaje lagiye dorbol ke kobja kora jai. Kibabe onner jomi jobor dokhol kora jai. Sodo Allahu Robbul Alamin ke foriyad kora chara ar kichoi korar nei. Allah jedin eder bichar korben, sedin er opekhkhai roylam.
    Total Reply(0) Reply
  • Md Golam Robbani ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:৫৬ পিএম says : 0
    মুসমানেরা শিক্ষা-জ্ঞান-ক্ষমতা-সম্পদ-অস্ত্র -প্রশিক্ষণ -প্রযুক্তি সহ সকল খাতে অনেক পিছিয়ে আছে।এই কারনে বিধর্মীদের হাতে মার খাচ্ছে বারবার মুসলিমরা।
    Total Reply(0) Reply
  • Admay Sany ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:১৯ পিএম says : 0
    ফেরাউন মরেছে লোহিত সাগরের চুবানি খেয়ে, ইসরায়েলের মরন হবে ভূমধ্যসাগরের চুবানি খেয়ে!!! ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Ňäýïm Ķhâň ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:২০ পিএম says : 0
    হে মহান প্রভু তুমি আমাদের এমন শক্তি দাও যাতে করে এই ইহুদীবাদী সয়তান দের সাথে মোকাবেলা করে বিশ্বে ইসলামের শাসন কায়েম করতে পারি
    Total Reply(0) Reply
  • Shadhin BaBu ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৩৪ পিএম says : 0
    জেগে উঠ মুসলমান সইব না আর অপমান, ইহুদীর হাত থেকে জেরুজালেম মুক্ত করো
    Total Reply(0) Reply
  • Md Matiar Rahman ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৩৫ পিএম says : 0
    জেরুজালেম ইসরাইলের রাজধানী হতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ হাদিউল ইসলাম ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৩৫ পিএম says : 0
    আল্লাহ তুমি হেফাজত করো
    Total Reply(0) Reply
  • Faisal Rahman Khan ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৬ পিএম says : 0
    আমি এখনো বুঝি না,ট্রাম্প ক্যাডা?সে একটা রাজধানী এর ব্যাপারে মাথা গলায় কেন? সে সারা বিশ্বে একটা যুদ্ধ লাগাইয়াই ছাড়বে মনে হচ্ছে,লোক্টার চেহারা দেখলেই মেজাজ টা গরম লাগে
    Total Reply(0) Reply
  • S M Selim Islam ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৭ পিএম says : 0
    ফিলিস্তিন সমস্যার জন্য মূলত যুক্তরাষ্ট্র দায়ী। এছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলোও দায়ী তারা মুখে আছে কাজের বেলায় ঠনঠন।আর সৌদি আরবতো যুক্তরাষ্ট্রের .............
    Total Reply(1) Reply
    • Badol ৭ অক্টোবর, ২০১৮, ২:৩৩ এএম says : 4
      Tamp dogso hok.

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ