Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতে কাঁপছে রোহিঙ্গা শিশুরা

দীপন বিশ্বাস, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে ঠান্ডায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রোহিঙ্গা বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা। পাহাড়ি জঙ্গল অধ্যুষিত অঞ্চলে আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গাদের বিশেষ করে শিশুদের প্রচন্ড ঠান্ডায় জীবনযাত্রা কাহিল হয়ে পড়েছে। শীতের শুরুতে (ঠান্ডা) কম হলেও গত কয়েকদিন ধরে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। নারী-শিশু ও বয়স্ক রোহিঙ্গারা ছাড়াও ঝুপড়ি ঘরসহ শিবিরের বাইরে থাকা রোহিঙ্গারা প্রচন্ড শীতে কাঁপছে। ফলে নারী-শিশুরা শীতবস্ত্রের অভাবে ঠান্ডাজনিতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উখিয়া ও টেকনাফের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শিবির ও শিবিরের বাইরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা বস্তি ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
টেকনাফের মৌচনি নিবন্ধিত শিবিরের প্রধান সড়কের সামনে গড়ে উঠেছে নতুন করে শতাধিক রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর। সেখানে অনেকের ঘরে ছাউনি থাকলেও নিচে কাদা মাঠিতে বসবাস করছে। এমন এক রোহিঙ্গা নারী তসলিমা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। তার বাড়ি মিয়ানমার কিলাডং গ্রামে। তিনি জানান, শীত শুরুতে তেমন বেশি শীত লাগেনি। কিন্তু গত দুইদিন ধরে ঠান্ডায় খুব কষ্টে হচ্ছে। কথা বলার সময় কোলে ছিল ৫ মাস বয়সের শিশু মিনারা বেগম। তার সর্দি-কাশির প্রভাবে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বিরামহীনভাবে কেঁদে চলেছে। পাশে থাকা অপর দুই সন্তান মামুন ও শফিকার গায়েও গরম কাপড়চোপড় নেই। হাত পা গুটিয়ে মায়ের পাশে বসে আছে।
টেকনাফ মৌচনি প্রধান সড়কের সামনে ঝুপড়ি ঘরে নতুন আসা রোহিঙ্গা তসলিমা আক্তার জানান, এক কাপড়ে তাঁরা মিয়ানমার ছেড়েছেন। গরম কাপড় তো দূরে কথা, প্রাণ নিয়ে আসাটাও ছিল দুরূহ। এখন শীতে কষ্ট পাচ্ছে সন্তানেরা। মিনারা বেগম অসুস্থ হলেও তাকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। টেকনাফের নয়াপাড়া ত্রাণ কেন্দ্রের পাশে ধানে জমিতে নতুন করে ঘর তৈরী করতে দেখা যায়। শুধু ঘরের ছাউনি দিতে পেরেছেন কেউ কেউ। তাদের মধ্যে অনেকে আবার ছাউনি দিতে পারেননি। বাঁশের বেড়া ও পলিথিনের ছাউনিযুক্ত ১৫ ফুট লম্বা একটি ঝুপড়িঘরে গাদাগাদি করে থাকছেন পরিবারের ২০ নারী ও শিশু। নারীদের সঙ্গে আছে পাঁচ মাস থেকে ছয় বছর বয়সী অন্তত ৫ জন শিশু। ঠান্ডায় (শীতে) বেশির ভাগ শিশু সর্দি-জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত। কিছু শিশুর গায়ে কাপড়ও নেই। আমরা কেউ ইচ্ছা করে এখানে পালিয়ে আসিনি। আত্মীয়স্বজন, ঘরবাড়ি-সহায়সম্বল সবকিছু হারিয়েছি। শিশুদের কান্নাকাটি আর হইচইয়ের জন্য এই ঝুপড়িঘরে কারও ঘুম হয় না। রাতে ঝুপড়িঘরের বাঁশের বেড়া দিয়ে যখন ঠান্ডা বাতাস ঢোকে তখন শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করে। একটা কম্বল কিংবা গরম কাপড় দিয়ে শিশুদের শীত নিবারণেরও কোনো জো-নেই। এর মধ্যেও খাবারের সঙ্কটও চলছে।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার টিটু চন্দ্র শীল বলেন, শীতকালে পাহাড় ও জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধ, নারী-শিশুরা ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এর মধ্যে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি-জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া, চর্মরোগ, ইনফেকশন, রক্ত ঝরা ও চোখের এলার্জিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তও হচ্ছে। তবে সকলে যাতে চিকিৎসা সেবা পায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন ২৫০-৩০০ জন রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। তবে শীতকাল আসার পর থেকে রোগীর সংখ্যাটা বেড়েছে।



 

Show all comments
  • ইব্রাহিম ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:২৫ এএম says : 0
    আসুন আমরা সবাই এদের পাশে দাঁড়াই
    Total Reply(0) Reply
  • Shahidul bhuiyan ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৫:৩১ এএম says : 0
    Allah help them rohingya people. Small small baby without food without clothes how to they are living. Please Bangladeshi brother help to rohingya small small baby thanks.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ